করোনাযুদ্ধে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ভূমিকা

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ
 | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২১, ১০:৫৭

করোনা মোকাবেলায় বিগত ৪২৫ দিন সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবং সেই চেষ্টা সফল হতে কিছু সমস্যার মোকাবিলা করা হয়তো কঠিন হয়ে পড়েছে। সেজন্য পুলিশকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার কথা এসেছে। কিন্তু সেটা কিভাবে সাফল্য আনতে পারে আমার কাছে কোনো প্রমাণ বা যুক্তি নেই। বরং এটি সক্রিয় প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে! সেটা আমাদের কাম্য হতে পারে কি?

আমরা বেশ কিছু পত্রিকাকে আমলাদের সমালোচনা করতে দেখছি। জেলায় জেলায় সচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন সেটা কারও কারও সহ্য হচ্ছে না। আমরা জানি একজন এমপি আইন প্রণেতা। আমাদের সমাজের দাবির মুখে এমপিদের বিভিন্ন উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কাজে যুক্ত করা হয়েছে। সেটা থেকে সুফল যেমন আমরা পেয়েছি তেমনি কিছু ঘটনা আমাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন করোনা আঘাত হানলো তখন অনেকেই সামরিক বাহিনীকে দায়িত্ব দিতে সুপারিশ করছিলেন। আমি সেদিন সেটার বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ সেনাবাহিনী বিগত ১৯৭৫ সাল থেকে রাজনীতিবিদদের ভুলের খেসারত দিচ্ছে। বিভিন্নভাবে সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন জন রাজনৈতিক অভিলাস বাস্তবায়নে ব্যবহার করছে। প্রবাসে বসে একদল বিতাড়িত বুদ্ধিজীবী সেনাবাহিনীকে একের পর এক উস্কানি দিচ্ছে। সেই সঙ্গে যুক্ত আছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অপশক্তি। একদিকে যেমন তারা বর্তমান সরকারের উন্নয়নধারাকে মেনে নিতে পারছে না অপরদিকে তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেন সামর্থ ও সুনামের সঙ্গে কাজ না করতে পারে সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই উপলব্ধি থেকে আমি আজ বাংলাদেশে পুলিশকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিতে চাই। কারণ বাংলাদেশ পুলিশও আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ঘটনার সঙ্গে পুলিশ বিভাগের নাম জড়িয়ে গেছে। সেগুলোর সঙ্গে যদি নতুন কোনো কিছু ঘটে তবে পুলিশকেও জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে ওই ষড়যন্ত্রকারীদের সুবিধা হবে।

কোভিড-১৯ এর কারণে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন আগামী প্রজন্ম। তারা বিগত দিনগুলিতে ঘরে বসে কাটাচ্ছে। তাদের মানসিক অবস্থা কি তা আমরা সকলেই বুঝতে পারছি। আমার মতে এই বিপদের মুহূর্তে তাদের এগিয়ে আশা একান্ত জরুরি। তারা ২০১৮ সালে যেভাবে সড়ক নিরাপত্তাকে অর্থপূর্ণ করতে পুলিশকে সাহায্য করেছে সেইভাবে তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

আমার মনে হয় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অগ্রণী ভূমিকা পালন করবার সময় এসেছে। নিজ নিজ শিক্ষা বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে খুলবেন তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন যেমন দরকার তেমনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এগিয়ে আসবেন যাতে সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে করোনা মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। দেশটা আমাদের সকলের সুতরাং এই ভাইরাস নির্মূল যুদ্ধও আমাদের সকলের।

আমরা লক্ষ্য করেছি টিকা ছাড়া কিভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দেশকে করোনামুক্ত করেছে। আমাদের মনে আছে কি ৯ মাসে আমার দেশ স্বাধীন করেছি। সেটা সম্ভব হয়েছে কারণ আমার প্রায় সকলেই স্বাধীনতা চেয়েছিলাম। আবার আমাদের পূর্বপুরুষদের ১৯০ বছর যুদ্ধ করতে হয়েছে স্বাধীন করতে। কেন আমাদের পূর্বপুরুষ পারেনি ২-৫ বছরের মাঝে দেশকে মুক্ত করতে?

কলেজ জীবন শেষ করে স্নাতক ডিগ্রির জন্য ভর্তি হতে গিয়ে খুলনার ব্রজলাল কলেজের গাছে একটি সাইনবোর্ড এ দেখেছিলাম একটি উক্তি। লেখা ছিল “আসুন জ্ঞানের সন্ধানে ফিরে যান দেশ সেবায়।“ উক্তিটি আজও আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়। প্রিয় শিক্ষার্থীরা তোমরা কি আজ এগিয়ে আসবে না?

আজ তোমাদের কাছে এই আবেদন রাখছি কারণ তোমার মোহমুক্ত চিন্তা করতে পারো। আমাদের বড়োরা কেউ ভারত বিরোধী। কেউ চীন বিরোধী। তাদের বিরোধে সরকারও বিব্রত। বন্ধুরা মনে রেখো-ভারত আমাদের বন্ধু আর চীন আমাদের বাণিজ্যিক পার্টনার। উভয়কেই আমাদের প্রয়োজন আছে।

৯/১১ এর পর অর্থনীতি মহাসংকটে পড়েছিল। সেদিন সকলেই আরবদের দোষারোপ করছিল। সেই সময় আরবরা পেট্রোলের মূল্য অর্ধেক করে দিয়েছিল। সেই পলিসি একটি বিশ্বযুদ্ধ থেকে আমাদের রক্ষা করেছিল।

মানবতা যদি হয় চীনের বিশ্বরাজনীতি ও বাণিজ্য নীতি তবে ওই রকম একটি পদক্ষেপ এখন বিশ্ববাসীর কাম্য। আজ তারা তাদের কাছ থেকে আমার যা শুনছি এবং যা তারা করছে সেটা বন্ধুর পরিচয় বহন করে কি? চীন যদি বন্ধুর পরিচয় দেয় তবে অস্ট্রেলিয়া কোয়াড নিয়ে এগোবেনা বাংলাদেশ ওই জোটে যাবে না। দেশের মানুষকে রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের মানুষকেও রক্ষা করবার দায় চীনকে নিতে হবে। নতুবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে সারা বিশ্ব থেকে।

বাংলাদেশের মানুষ বন্ধু মিত্র চিনতে কখনো ভুল করেনি। এমনকি তারা স্বাধীনতার জন্য বারবার প্রাণ দিয়েছে। ছাত্র সমাজই হতে পারে সরকারের পরম বন্ধু এবং শক্তি। শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসো। এসো নিজেরা করি কেবল পুঁথিগত বিদ্যা না হোক। নিজেরা করোনামুক্ত করে এসো প্রমাণ করি "আমরা জানি।" আমরা কেবল গাইবোনা - আমরা করবো জয় কিংবা আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। আমরা করোনাযুদ্ধে জয়ী হয়ে প্রমাণ করব আমরা যা প্রতিদিন গাই সেটা আমাদের অন্তর থেকেই করি। ক্ষুদে বন্ধুরা এসো দেশ গড়ি- এসো আমার সকলে ক্ষুদিরাম হই দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে করোনাযুদ্ধে জয়ী হতে।

লেখক: শিক্ষক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :