ড্যান্ডিতে আসক্ত হচ্ছে ফেনীর পথশিশুরা

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
| আপডেট : ১৬ মে ২০২১, ১৩:৫৫ | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২১, ১২:৪১

নেশা জাতীয় দ্রব্য ড্যান্ডিতে আসক্ত হচ্ছে ফেনীর পথশিশুরা। অসাধু বিক্রেতারা অধিক মুনাফার লোভে পথশিশুদের কাছে এসব নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নেশার টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে শিশুরা চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলেও জানা গেছে।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, মাদকের তালিকায় এ নেশার নাম না থাকায় সঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে খবর পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

‘ড্যান্ডি’ নামক এই নেশা জাতীয় দ্রব্যটি রাবার, চামড়াজাত দ্রব্য বা জুতা ও ফার্নিচার তৈরিতে ব্যবহৃত এক ধরনের আঠা ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ বা ড্যান্ড্রাইট (গাম) । শহরের বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের দোকানে সলিউশন নামে এসব আঠা জাতীয় দ্রব্য ৮০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ফেনী শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা ট্রাংক রোড দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যেই নেশা করছে পথশিশুরা।

ফেনী রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকা এসব পথশিশু ঘাড়ে চটের বস্তা নিয়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে বেড়ায়, কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিক, লোহা কিংবা পুরোনো জিনিস বিক্রি করে ও মানুষের কাছে হাত পেতে যে আয় হয়, তা দিয়ে খাবার কিনে খায় এবং বাকি টাকা দিয়ে নেশা করে। নেশায় আশক্ত এই শিশুদের বয়স ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। হাতে পলিথিনের ব্যাগ।

পথশিশু আরিফ জানায়, যেখানে লোকজন কম সেখানে বসে ড্যান্ডি খাইতাম, এখন মাঝে মধ্যে খাই। ড্যান্ডি খাইলে মাথা ঘুরে, ক্ষুধা লাগে না।

নেশায় আসক্ত আরেক কিশোর সৌরভ জানায়, আগে আমরা ভিক্ষা করতাম, এখন আমাদের মানুষ ভিক্ষা দেয় না। তাই লেবু-আনারসের গাড়ি থেকে লেবু-আনারস চুরি করি। এসব বিক্রি করে আমরা প্রতিদিন ৬০০-৭০০ টাকা পাই। আমাদের বড় ভাই এলে তাকে আমাদের চুরির ভাগ দিতে হয়। ভাগ না দিলে সে আমাদের মারে।

শহরের রেলস্টেশন এলাকার এক পথশিশু জানায়, সে তার আরেক বন্ধুর কাছ থেকে দেখে এখন নিয়মিত এ নেশা করে। এ গামের মধ্যে একটা ঘ্রাণ আছে সে ঘ্রাণ নিলে তার অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। পলিথিনের ভেতরে গাম রেখে, পলিথিনের মুখে নাক দিয়ে এই নেশা করা হয়। এর ভেতরে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ থাকে। এটা মাথায় গিয়ে এক ধরনের অনুভূতি তৈরি করে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. রুবায়েত বিন করিম জানান, এ নেশার ফলে এসব শিশু নানা রোগে আক্রান্তসহ দ্রুত কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। তাদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনসহ সবাইকে কাজ করতে হবে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমএ) ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এই গামের ঘ্রাণ শরীরের যেসব জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, সেসব জায়গার কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আর কোষ নষ্ট হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের কাজে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।

গোয়েন্দা পুলিশের এসআই নুরুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবুও এমন ঘটনায় পুলিশ বসে নেই, এমন দেখলেই শিশুদের উদ্ধার করে তাদের মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

দাগনভূঞা ইয়ুথ সোসাইটির আহ্বায়ক আবদুল্যাহ আল মারুফ জানান, নেশা থেকে অনেক অপরাধের জন্ম হয়। নেশার টাকা জোগাড় করতে প্রথমে চুরি এবং পরে বড় ধরনের অপরাধের দিকে এগিয়ে যাবে এই শিশুরা। তাই সকলে মিলেই এদের বোঝানোর পাশাপাশি প্রতিরোধ করতে হবে।

এদিকে জেলার সানরাইজ যুব ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা সদস্য ইকবাল চৌধুরী জানান, জেলার প্রায় ৭০ শতাংশ পথশিশুই এ নেশাটির সঙ্গে জড়িত। তাদের এখান থেকে ফেরানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগও আমাদের চোখে পড়েনি।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ বলেন, ‘এ গামটি মাদকের তালিকায় নেই, সে কারণে এটা নিয়ে আমাদের কোনো ধরনের অভিযান চলমান নেই। তাও এ বিষয়ে খবর পেলে অভিযান পরিচালনা করব।’

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :