গঙ্গার তীরে কয়েক হাজার লাশ, ভারতে ফের ৪ সহস্রাধিক মৃত্যু

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২১, ১২:৫৪ | আপডেট: ১৬ মে ২০২১, ১৩:৪৮

আবুল কাশেম, ঢাকাটাইমস

করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত ভারত। তবে তার আসল চিত্র প্রকাশ্যে আসছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কয়েকদিন ধরে শত শত লাশ নদীতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে। এবার গঙ্গার তীরে মাটিচাপা দেয়া কয়েক হাজার লাশের সন্ধান মিলেছে। দেশটিতে গত একদিনে করোনায় ফের চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে একদিনে নতুন করে মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৯০ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৩১৯ জন। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ৮২২ জনের। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দুই কোটি ৪৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫ জন। দেশটিতে করোনার সক্রিয় রোগী রয়েছেন ৩৬ লাখ ২৩ হাজার ৭০৮ জন।

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই উত্তরপ্রদেশে গঙ্গায় বহু লাশ ভাসতে দেখা গিয়েছে। এরপর গঙ্গারপাড়ে মিলেছে মাটিচাপা দেয়া কয়েক হাজার লাশ। এসব লাশ করোনা আক্রান্তদের বলে মনে করা হচ্ছে। প্লাস্টিকে মুড়ে এসব লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। শুধু উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতেই মিলেছে ৮০০টি কবর।

খবরে বলা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের ২৭টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে গঙ্গা। এসব জেলায় নদীর তীরে করোনায় মৃতদের মাটিচাপা দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি কবরের সন্ধান মিলেছে। উত্তরপ্রদেশে উন্নাও ছাড়া বিজনৌর, মেরঠ, মুজফ্ফরনগর, বুলন্দশহর, হাপুর, আলিগড়, বদায়ুঁ, শাহজাহানপুর, কনৌজ, কানপুর, রায়বরেলী, ফতেপুর, প্রয়াগরাজ, প্রতাপগর, মির্জাপুর, বারাণসী, গাজিপুর, বালিয়াতে মাটির নিচে মিলেছে এসব লাশ। সবচেয়ে বেশি কবরের সন্ধান মিলেছে উন্নাও, কানপুর, কনৌজ, গাজিপুর এবং বালিয়ায়।

উন্নাওয়ের শুক্লাগঞ্জ ও বক্সার ঘাঁটে মিলেছে আটশোর বেশি কবর। এছাড়া কনৌজের মহাদেবী গঙ্গাঘাটের কাছে সাড়ে তিন শতাধিক, কানপুরের শেরেশ্বর ঘাটে চার শতাধিক, গাজিপুরে গঙ্গার তীরে ২৮০টিরও বেশি কবরের সন্ধান মিলেছে। অনেক জায়গায় এসব লাশের ওপর থেকে মাটি সরে গিয়েছে। অনেক লাশ গেরুয়া কাপড় দিয়ে মোড়া পাওয়া গিয়েছে।

কয়েকদিন থেকে নদীতে শত শত লাশ ভাসতে দেখা গেছে। এসব লাশের অধিকাংশ অর্ধদগ্ধ৷ তবে এত লাশ নদীতে কীভাবে এলো তার হদিশ মিলছে না। অনেকে মনে করছেন, মহামারিতে মৃত মানুষদের সৎকার করতে না পেরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, লাশ পোড়ানোর মতো জ্বালানি না থাকায় তা ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে।

নদীতে ভেসে আসা এসব লাশ চিন্তায় ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। গঙ্গার রাজ্যের অংশে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ জেলা পুলিশ-প্রশাসন নজরদারি রাখছে পরিস্থিতির উপর৷ নদীতে নামানো হয়েছে নৌকো, স্পিড বোট৷ রাতে আলো জ্বালিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে৷ স্থানীয় মাঝিদের সাহায্য নিচ্ছে প্রশাসন৷ লাশ ভেসে আসার খবর পেতে পাশের রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে৷ যদি কোনো লাশ নদীতে ভাসতে দেখা যায় তাহলে তা উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন৷

করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম ঢেউয়ে তেমন কোনো প্রভাব না পড়লেই দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। বেশিরভাগ রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। হাসপাতালে বেড খালি নেই। ভয়ংকর রূপে দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সংকট। এমন অবস্থার জন্য বেশিরভাগ রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারকে দায়ী করেছে। ভারতের অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ তা এই চিত্রে আবারও সামনে এসেছে।

ঢাকাটাইমস/১৬মে/একে