অপবাদ সইতে না পেরে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর আত্মহত্যা

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২১, ১৮:৪৩

মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ফরিদপুরের মধুখালীতে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। রবিবার সকালে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
ওই গৃহবধূর নাম রীমা রানী সাহা (২২)। তিনি উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রামের পলাশ কুমার সাহার স্ত্রী। পলাশ সাহা মধুখালী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী। গৃহবধূ রীমা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। শ^শুরবাড়ি থেকেই রীমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষ কুমার সাহার ছেলে পলাশ কুমার সাহার সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার নানবার গ্রামের বাসিন্দা নিশ্চিন্ত কুমার সাহার মেয়ে রীমা রানী সাহার চার বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তারা সুখে শান্তিতেই সংসার করছিলেন।
সম্প্রতি ‘সুখতারা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে রীমা সাহার নামে বিভিন্ন অপবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে শনিবার বিকালে শ^শুরবাড়ির ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন গৃহবধূ রীমা।
গৃহবধূ রীমার শ^শুর প্রভাষ সাহা বলেন, কয়েকদিন আগে একটি অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে আমার মোবাইলে কল আসে। অপর পাশ থেকে বলা হয়, আমার পুত্রবধূর চরিত্র খারাপ, তার এক যুবকের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন খারাপ কথাবার্তা বলে। আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে সে পরিচয় দিতে রাজি হয়নি। এমনকি বলেছি প্রমাণ দিতে, তখন সে বলে প্রমাণ যেদিন দিতে পারব সেদিনই আমার পরিচয় জানতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, এর কয়েকদিন পর আবার ফোন আসে আরেকটি অচেনা নম্বর থেকে, একই কথা বলা হয় আমাকে। বিষয়টি আমি পরিবারের কাউকে জানাইনি, পুত্রবধূ অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাকেও জানাইনি। এরপর ‘সুখতারা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে আমার নাতিছেলে (মেয়ের ছেলে) উৎস’র মেসেঞ্জারে পুত্রবধূ রীমাকে নিয়ে বিভিন্ন কুরুচিপূর্র্ণ মন্তব্য করা হয়। আমার নাতিছেলে প্রমাণ চাইলে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
প্রভাষ সাহা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা পারিবারিকভাবে রীমাকে কিছুই বলিনি। কারন কোনো প্রমাণ পাইনি, তাই রীমাকে কিছুই বলা হয়নি। হয়তো অন্য কারো কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারে রীমা। মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে রীমা। রীমার আত্মহত্যার জন্য যারা দায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
গৃহবধূ রীমার ভাগ্নে (স্বামীর বোনের ছেলে) উৎস সাহা বলেন, হঠাৎ করেই কয়েকদিন আগে আমার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ‘সুখতারা’ নামে একটি আইডি থেকে মামি রীমাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলা হয়। আমি প্রমাণ চাইলে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বিষয়টি মামি জানতে পেরে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
মেয়ে রীমার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন মা শিউলি রানী সাহা। তার আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। কান্নাজড়িত কন্ঠে শিউলি রানী বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। আমার মেয়েকে ওরা হত্যা করেছে। মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। মেয়ে হত্যার বিচার চাই।


এদিকে গৃহবধূ রীমার স্বামী পলাশ সাহার সাথে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে তিনি অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, গৃহবধূ রীমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। রীমা কি আত্মহত্যা করেছে, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে- বিষয়টি তদন্তে কাজ করছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলেই বিষয়টি জানা যাবে।
(ঢাকাটাইমস/১৬মে/এলএ)