চুরির গরু প্রাইভেটকারে নিয়ে পালানো তিন চোরের গল্প!

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২১, ২২:২৯

ওবাইন

ঘটনাটি ঈদুল ফিতরের আগের দিন রাতের।

রাত তখন ৩টা। রোজার মাসের রাত ৩টা অন্যান্য সময়ের মত এত নিস্তব্ধ নয়। আমরা ১০-১৫ জন একটি চেকপোস্ট স্থাপনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। চেকপোস্ট হবে সিলেট জকিগঞ্জ রোডে। এই রোডে সেহেরীর সময় মাদকের চালান পার হয় বলে আমাদের কাছে সংবাদ আছে। তাই আমাদের সদস্যরা সময়ের কিছু আগেই সেহেরি করে ফেলেছে। সব কিছু রেডি করে ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা নির্ধারিত স্থানে পৌঁছাই।

 

ভোর বেলা রাস্তায় গাড়ি নেই বললেই চলে। অনেকক্ষণ পরপর গাড়ি আসছে, চেকপোস্টে চেক করছি কিন্তু উল্লেখ করার মতো কিছুই পেলাম না। প্রায় ১ ঘণ্টা হয়ে গেছে চেকপোস্ট করছি, চেকপোস্ট ক্লোজ করে ফেলবো ভাবছি এমন সময় দেখলাম একটি সাদা টয়োটা ৯০ মডেলের প্রাইভেট কার আসছে। আমি ভাবলাম এই গাড়িটি চেক করেই চেকপোস্ট ক্লোজ করব। গাড়িটি চেকপোস্টের এখানে আসলে আমাদের সদস্যরা গাড়ি থামানোর ইশারা করলে গাড়িটি স্লো করে। আমাদের সদস্যরা গাড়িটি চেক করার জন্য কাছাকাছি যাওয়ার সাথে সাথেই হঠাৎ করে প্রাইভেট কারের ড্রাইভার গতি বাড়িয়ে আমাদের চেকপোস্ট অতিক্রম করে চলে গেল। চেকপোস্টের দ্বিতীয় স্তরে (যা মূল চেকপোস্টের ১০০ মিটারের মত দূরে) অবস্থানরত আমাদের সৈন্যরা প্রাইভেটকারের গতিরোধে অস্ত্র তাক করে কিন্তু প্রাইভেটকারটি সেটিকেও খুব বিপদজনক ভাবে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

এই ঘটনার পরপরই আমরা গাড়িটির পিছু নেই। একপর্যায়ে প্রাইভেট কারটিকে ঠিক আমাদের সামনে পেয়ে যাই। কিন্তু সে থামছে না এবং ওভারটেকও করতে দিচ্ছে না। আবার মাঝে মাঝে হঠাৎ ব্রেক করছে যা পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলছিলো। প্রাইভেট কারটির গতিবিধি দেখে আমাদের সকলের ধারণা হলো গাড়িটিতে বড়সড় কোন মাদকের চালান আছে। সিনেমার মত কায়দায় কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর প্রাইভেট কারটি হঠাৎ বামে মোড় নিয়ে একটি সরু কাচা রাস্তায় ঢুকে পড়লো। আমরা গাড়ি ঢুকালাম। কিন্তু কাচা রাস্তায় ঢুকার সাথে সাথেই প্রাইভেট কারটির সাথে আমাদের গাড়ির প্রায় ৩০০ মিটারের মত দুরুত্ব তৈরি হলো। এই সরু কাচা রাস্তা ধরেই গাড়ি প্রবল বেগে ছুটছে। প্রাইভেট কারের সদস্যরা হয়তো ভাবতে লাগলো আমরা তাদের পিছু ছাড়ছি না।তাই আমরা দেখলাম হঠাৎ করেই প্রাইভেট কারটি থেমে গেলো এবং প্রাইভেট কারের ভিতর থেকে ৩ জন লোক বের হয়ে বিদ্যুৎ গতিতে দৌড়ে চললো।

আমরাও ওই গাড়ির কাছে গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে ওদেরকে ধরার চেষ্টা করলাম। কিন্ত মাঝখানের ১-২ মিনিটের ব্যবধানেরর কারণে তাদেরকে আর ধরা যায়নি।

আসামি পেলাম না বলে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলাম আসামি ধরতে পারলে ভালো একটি অপারেশন হতো। এখন গাড়িতে যে মাদক আছে তা থানায় পরিত্যক্ত উদ্ধার দেখিয়ে জমা দিতে হবে। এই ভাবতে ভাবতে গাড়ির ভিতর কোন মাদকের চালান আছে তা দেখার জন্য প্রাইভেট কারের দরজা খোললাম। দরজা খুলে দেখলাম পেছনের সিটে কোনো কিছুর ওপর বিশাল চাদর দেয়া। ভাবলাম চাদরের নিচে হয়তো কোন বস্তা আছে। তাহলে বস্তাগুলি হয়তো গাঁজার হতে পারে।

 

কিন্তু হঠাৎ করেই চাদরের নিচে কি যেন একটা নড়ে উঠলো। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেলাম। পরে চাদর টান দিয়ে যা দেখলাম তা আমরা কেউ কল্পনায় ও ভাবি নি যে এমনটা হতে পারে। চাদরের নিচ থেকে বের হয়ে আসলো মোটামুটি সাইজের একটি গাভী। এই জলজ্যান্ত গরু এরা এই ছোট প্রাইভেট কারে কিভাবে ঢুকালো তা আসলে গবেষণার দাবি রাখে।

 

পুরো ঘটনাটা আসলে যা দাঁড়ালো, ৩ জন গরু চোর এই প্রাইভেটকারে করে গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের সামনে পরে যায় আর এতেই এত বিপত্তি!

লেখক: সহকারী পুলিশ সুপার