ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেই লোকমান ভূঁইয়া এখন...

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ মে ২০২১, ১১:১২ | প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২১, ০৮:৫৮

ক্যাসিনোকাণ্ড, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং মাদকসহ আটক পরে গ্রেপ্তার হয়েও জামিন পেয়েছেন লোকমান ভূঁইয়া। নানান অপরাধ ও অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েও প্রকাশ্যে চলাচল করছেন তিনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এবং ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অন্যতম পরিচালকের বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতে রাজি নন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নীতি নির্ধারকরা।

২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দুটি রুলেট টেবিল, নয়টি বোর্ড, বিপুল পরিমাণ কার্ড, ১১টি ওয়্যারলেস সেট ও ১০টি বিভিন্ন ধরনের চাকু পেয়েছিল পুলিশ।

এর তিন দিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে তার রাজধানীর তেজগাঁও মনিপুরীপাড়া থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রথমে মাদক ও পরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা হয়।

এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অন্যতম পরিচালক লোকমান ভূঁইয়া র‍্যাবকে জানিয়েছিল, ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা করে নিতেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংকে তার প্রায় ৪১ কোটি টাকা জমা আছে।

এসময় লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিষয়ে নানান তথ্য সামনে আসে। উঠে আসে ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার সম্পৃক্ততার তথ্য। তাদের কয়েকজন গ্রেপ্তারও হন। লোকমানের দাবি ছিল, রাজনৈতিক চাপের মুখে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ঘর জুয়ার জন্য ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।

সেসময় র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মোহামেডান ক্লাবে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল লোকমানের। তিনিই ক্লাবের ঘরগুলো ২০১৭ সালে ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। আর মোহামেডান ক্লাবের ওই ক্যাসিনোটি চালাতেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাউন্সিলর এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদ কমিশনার।

জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে লোকমান প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে পাচ্ছিলেন ক্যাসিনোর আয় থেকে। পরে তা আরও ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা করা হয়। এভাবে মাসে তার আসতো ২১ লাখ টাকা।

লোকমানের সম্পদের পরিমাণ পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এইচএসবিসি ব্যাংকে তার এক কোটি টাকার এফডিআর, অস্ট্রেলিয়ার এএনজেড ও কমনওয়েলথ ব্যাংক ছাড়াও দেশের কয়েকটি ব্যাংকে প্রায় ৪১ কোটি টাকা থাকার প্রমাণ পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জানা যায়, লোকমানের এক ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করেন। লোকমান যখন অস্ট্রেলিয়ায় যান, তখন মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যান। ছেলেকে নিয়মিত অস্ট্রেলিয়ার ওই দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান।

এদিকে এত কিছুর মধ্যেও ২০১৯ সালের নভেম্বরে বিসিবির পরিচালক পদেই বহাল থাকেন লোকমান। যদিও তিনি সেসময় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, মাদকসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে কারাগারে ছিলেন। সে অবস্থায় তাকে বিসিবির কমিটিতে রাখার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

ওই বছরের ২৭ অক্টোবর লোকমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি করেন দুদকের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম। লোকমান হোসেন ভূঁইয়া অবৈধভাবে চার কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন।

২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর এ মামলায় লোকমান ভূঁইয়াকে সাতদিনের জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ মহানগর বিশেষ জজ আদালত থেকে জামিন পান লোকমান। ১৯ মার্চ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। পরে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ভার্চ্যুয়াল আদালতে জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে বিচারিক আদালতের দেওয়া জামিন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

বর্তমানে জামিনে রয়েছেন লোকমান ভূঁইয়া। তিনি এখনো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোনো পদে রয়েছেন কি না এবং বিসিবিতে তার যাতায়াত আছে কি না জানতে চাইলে বিসিবির প্রধান নির্বাচক আকরাম খান ঢাকাটাইমসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েবসাইটে পরিচালকমণ্ডলীর সদস্যের তালিকায় লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার নাম রয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে আকরাম খান বলেন, ‘আমি জানি না। এসব বিষয়ে সিও আছে, তাকে জিজ্ঞেস করেন।’

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/কারই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :