মুনিয়ার মৃত্যু: আত্মহত্যার প্ররোচনা প্রমাণ করা যাবে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ মে ২০২১, ১৩:০৯ | প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২১, ১২:০১

রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাটে মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা মামলায় ‘আত্মহত্যা প্ররোচনার’ কোনো প্রমাণ এখনো পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বরং মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে বলে কিছু প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। তবে মামলার তথ্য-উপাত্তের প্রয়োজনীয় তদন্ত এখনো চলছে। এর আগে নিশ্চত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এই তথ্য মিলেছে।

তারা বলছে, মুনিয়ার আত্মহত্যায় কোনো প্ররোচনার বিষয় এখনো পাওয়া যায়নি। বরং মামলার এজাহারে একমাত্র অভিযুক্ত যাকে করা হয়েছে, তিনি বাদে অন্য কোনো ব্যক্তির মদদ আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, যাকে একমাত্র অভিযুক্ত করে মামলার এজাহারে নাম দেওয়া হয়েছে, তার সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া যায়নি। কিছুদিনের মধ্যেই এ নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।

২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মারা যান মুনিয়া। ওইদিন বিকালে নিহতের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে গুলশান থানা পুলিশ। পরে রাতে একটি স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের এমডিকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে।

এদিকে, এজাহারে মুনিয়ার বয়স বলা হয়েছে ২১ বছর এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, মুনিয়া আসলে তাদের কলেজের ছাত্রী ছিলেন না।

তদন্ত সংশ্লিষ্টতরা বলছে, আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার প্রমাণ হিসেবে যেসব তথ্য-উপাত্ত লাগে সেটি নিয়ে তারা প্রায় এক মাস অনুসন্ধান চালিয়েছে। সেখানে মুনিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনার কোনো বিষয় ছিল না। তাছাড়া তদন্তে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- তার মধ্যে রয়েছে 'টেলিফোনে হুঁমকি'।

মামলার এজাহারে বাদী নুসরাত জাহান অভিযোগ করেছেন, ২৩ এপ্রিল মুনিয়াকে টেলিফোন করে এজাহারে অভিযুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানটির এমডি হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু হুমকির এমন তথ্য বাস্তবের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি। 'কল লিস্টে' মুনিয়াকে ওই সময় (এজাহারে অভিযুক্ত ব্যক্তি) এরকম কোনো টেলিফোন করেননি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এটি পুরাতন কোন অডিও কিংবা কথোপকথনটি এডিটিং করা হয়েছে; বা ফোনটি আদৌ করা হয়েছে কি-না সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নয় তারা। এটি নিয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে।

এদিকে বাদী এজাহারে অভিযোগ করেছেন, ২৩ এপ্রিল তার বোনকে অভিযুক্ত ফোন করে। যদি এই ফোন করাও হয়, তাহলেও আত্মহত্যার প্ররোচনা হিসেবে বিবেচিত হয় না। কারণ, এটিই শেষ ফোনকল ছিল না। বরং শেষ ফোনকলটি মুনিয়া করেছে তার বোন নুসরাতকে।

সিসিটিভি ফুটেজ

মুনিয়ার মৃত্যুর পর আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেখতে চেয়েছিল, মুনিয়ার ফ্ল্যাটে কারা গিয়েছিল। একটি সূত্র বলছে, এক মাসের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- ওই একমাসে কথিত আসামি একবারও ওই ফ্ল্যাটে যাননি। আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য যে প্রমাণ দরকার, মুনিয়ার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক ছিল কি-না বা মুনিয়ার ফ্ল্যাটে নিয়মিত যেতেন কি-না? এই সংক্রান্ত কোনো তথ্য পায়নি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

ডেথ নোট

মুনিয়ার মৃত্যুর পর বেশ কিছু ডায়েরি উদ্ধার করা হয়। সেখানে মুনিয়ার বোনের করা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির মাধ্যমে মুনিয়া আত্মহত্যা করেছে এমন কোন তথ্য লেখা পাওয়া যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্টতরা বলছে, আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় যে ডেথ নোট থাকে সেই ডেথ নোটও নেই। যে কোনো আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার সবচেয়ে বড় উপজীব্য বিষয় হলো 'ডেথ নোট'। মৃত্যুর আগে আত্মহত্যা করার কারণ সম্বলিত একটি ডেথ নোট লেখেন আত্মহত্যাকারী। সেটিকে আত্মহত্যা প্ররোচনার বড় তথ্য-উপাত্ত এবং প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু মুনিয়া এরকম কোনো ডেথ নোট মৃত্যু আগে লিখে যাননি। জব্দ করা ডায়েরিতে মুনিয়াকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে, এমন কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং এই পুরো ডায়েরির মধ্যে মুনিয়ার আবেগ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেয়েছে।

সূত্র জানায়, ডায়েরি দেখে বোঝা যাচ্ছে এজাহারে অভিযুক্তের সঙ্গে মুনিয়ার দীর্ঘদিন কোনো রকম সম্পর্ক বা যোগাযোগ ছিল না। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তদন্তসংশ্লিষ্টরা অনেকটা নিশ্চিত হয়েছেন, মুনিয়ার আত্মহত্যায় কোনো প্ররোচনার বিষয় ছিল না। বরং এই আত্মহত্যায় অন্য কোনো ব্যক্তির হাত বা মদদ আছে কি-না তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মামলাটি তদন্ত করছি। তবে,

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো আমাদের হাতে আসেনি। এলে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।

ঢাকাটাইমস/১৭মে/এসএস/এইচএফ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :