স্রষ্টার আশীর্বাদিক শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আলোকবর্তিকার প্রত্যাবর্তন

ইলিয়াস সানি
| আপডেট : ১৭ মে ২০২১, ১৫:২৯ | প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২১, ১৫:১০

ইতিহাস বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্টত যে, পৃথিবীর ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডই একমাত্র ঘটনা যেখানে কি না একটা জাতির পিতাকে পরিবার ও আত্মীয় মিলিয়ে ২৬ জন সদস্যসমেত হত্যা করা হয়েছে একরাতের মধ্যে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর সব থেকে নৃশংসতম রাজনৈতিক হত্যা। ভাগ্যক্রমে সেদিন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। শেখ রেহানার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে মেজর জিয়া পাসপোর্ট নবায়ন করতে দেননি।

পরবর্তীতে পশ্চিম জার্মানি থেকে সপরিবারে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে থাকতে শুরু করেন সমসাময়িক সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্বজন হারানো একজন মানুষ শেখ হাসিনা।

এত কিছুর পরও শেখ হাসিনা দমে যাননি। নীরবে চোখের জল ফেলেছেন, তবে পিতার শিখিয়ে যাওয়া আদর্শ ছেড়ে পালিয়ে বাঁচেননি। পিতার অসমাপ্ত গল্পগুলোর সুন্দর সমাপ্তির জন্যই ফিরে আসলেন বাঙালির আশীর্বাদিক হয়ে। শত সহস্র প্রতিকূলতার বাধা ডিঙিয়ে স্বপ্ন ছুঁয়ে দিলেন আপন মহিমায়। লেখলেন এক নতুন সূর্যোদয়ের ইতিহাস। পিতা শেখ মুজিব আমৃত্যু পরিবারকে যেই মৃত্যুর স্বাদ দিয়ে গিয়েছিলেন প্রতিক্ষণে, সেই মৃত্যুর স্বাদ শেখ হাসিনাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ছুঁতে পেরেছিল বলেই হয়তো আমরা আজও পৃথিবীর বুকে স্বাধীন-সার্বভৌমত্বের স্বাদ আস্বাদন করতে পারছি। তারপরের ইতিহাস সহজতর ছিল না। শেখ হাসিনা ধীরে-ধীরে হয়ে উঠলেন বিশ্বনেত্রী।

শেখ হাসিনা কীভাবে আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে উঠলেন সে প্রসঙ্গ উঠে আসে তার প্রয়াত স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার রচিত “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ” বইতে।

শেখ হাসিনা এবং ওয়াজেদ মিয়া যখন ভারতে অবস্থান করছিলেন, তখন ১৯৭৯ ও ১৯৮০ – এই দু বছরে কয়েকজন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা বিভিন্ন সময় দিল্লি যান তাদের খোঁজখবর নিতে। সে সময়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়ে উঠার পিছনে যে কজন আওয়ামী লীগ নেতার ভূমিকা ছিল তা উঠে এসেছে প্রয়াত বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার লেখায়।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক, জিল্লুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী বেগম আইভি রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, জোহরা তাজউদ্দীন, যুবলীগ নেতা আমির হোসেন আমু, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও তাঁর স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী, আব্দুল মালেক উকিল, ডক্টর কামাল হোসেন, এম কোরবান আলী, আব্দুল মান্নান, তোফায়েল আহমেদ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন সময় দিল্লি গিয়ে শেখ হাসিনার সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে, ১৯৮১ সালের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই দলীয় সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। মার্চে একাধিকবার আসার চেষ্টা ব্যর্থ হলেও পরবর্তীতে ১৭ মে শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকা আসেন।

১৭ মে, ১৯৮১- দিনটি ছিল রবিবার।

বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে লাখো জনতার ঢল নামে। সেদিনের গগনবিদারী মেঘ গর্জন, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বদলা নেওয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল, আর অবিরাম মুষল ধারে ভারী বর্ষণে যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার মাটিতে পিতৃ হত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান ছুঁয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। বাবা-মা-ভাইসহ পরিবারের সব সদস্যের রক্তে ভেজা বাংলার মাটি স্পর্শ করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই সময় উন্মত্ত জনতা সামরিক শাসক জিয়ার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে। ঝড়-বৃষ্টির আকাশ কাঁপিয়ে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকের চার পাশে স্লোগান ওঠে-

"পিতৃ হত্যার বদলা নিতে/লক্ষ ভাই বেঁচে আছে।"

"শেখ হাসিনার ভয় নাই/রাজপথ ছাড়ি নাই।"

সাথে মৃত্যুহীন প্রাণ নিয়ে কোটি বাঙালির প্রাণের সঞ্চার করতে শেখ হাসিনা সেদিন বাংলার মাটি স্পর্শ করেন।

তাঁর কণ্টকাকীর্ণ পথচলার শুরু আরও একবার।

শেখ হাসিনাই পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র মানব যে কি না পরিবারের সকলকে একরাতের মধ্যে হারিয়ে আবার সে পথ ধরেছিলেন বীরদর্পে। তৎকালীন স্বৈরশাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বাধীন বাংলাদেশকে নতুন মাত্রায় উঁচিয়ে ধরাই যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল এবং তিনি সফল হয়েছেন।

লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :