উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে দরকার সচেতনতা

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
| আপডেট : ১৭ মে ২০২১, ১৭:০৯ | প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২১, ১৬:৫০

উচ্চ রক্তচাপ কোনো রোগ নয়; এটি অন্য কিছু রোগের উপসর্গ মাত্র। বর্তমান বিশ্বে এটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগটি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের পাশাপাশি এই রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবগত করার উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর ১৭ মে ‘বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

দেহ ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করতে থাকে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বেলায় ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মি.মি পারদ চাপের এবং সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ মি.মি. পারদ চাপের বেশি হলে উচ্চরক্তচাপ চিহ্নিত করা হয়। বয়স এবং লিঙ্গভেদে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার বেশি হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ এবং কম হলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলে। তবে হঠাৎ করে সাধারণ নিয়মের অতিরিক্ত রক্তচাপ বাড়লেই তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে ধরা যাবে না। রাতে ভালো ও পরিমিত ঘুমের পর যদি ভোরে বিছানায় শোয়া অবস্থায় পরপর তিনদিন রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার বেশি পাওয়া যায় তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা যাবে। কারণ অতিরিক্ত চিন্তা, পরিশ্রম, মানসিক অশান্তিতে বা উত্তেজনার কারণে ক্ষণিকের জন্য সিস্টোলিক রক্তচাপ বাড়তে পারে। কিন্তু ডায়স্টোলিক রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার অতিরিক্ত হওয়া মানেই রোগীর উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে।

সাধারণত ৪০-৪৫ বছর বয়সের মহিলাদের চেয়ে পুরষদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি। ৪৫ বছরের পরে গিয়ে পুরুষ মহিলা উভয়েরই এই উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ডায়বেটিসের ক্ষেত্রে এর সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। এছাড়া পরিবারের অন্য কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বাকিদেরও রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রক্তচাপ চার প্রকার

১. সিস্টোলিক রক্তচাপ: সীমা ১০০-১৪০ মি.মি পারদ, গড় ১২০ মি.মি পারদ

২. ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ- সীমা ৬০-৯০ মি.মি পারদ, গড় ৮০ মি.মি পারদ

৩. পালস রক্তচাপ- সীমা ৩০-৪০ মি.মি পারদ

৪. গড় রক্তচাপ- সীমা ৭৮-৯৮ মি.মি পারদ

যাদের মধ্যে সকালে ঘুম থেকে উঠলে মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘাড় ব্যাথা, রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা, সর্বদা মেজাজ খিটখিটে থাকা প্রভৃতি বিষয় পরিলক্ষিত হয় তাদের যথাশিগগির চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা দরকার।

উচ্চরক্তচাপজনিত কারণে স্ট্রোক, হাইপারটেনসিভ এনসেফালোপ্যাথি, প্যারালাইসিস, মস্তিষ্কে জটিলতা, মস্তিষ্কের সাবঅ্যারাকনয়েড স্পেসে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। এছাড়া হৃৎপিণ্ড বড় হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক ও ফেইলিউর, করোনারি হার্ট ডিজিজ প্রভৃতি হতে পারে। এটি চোখেরও বিভিন্ন ক্ষতি করে থাকে। যেমন: হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি, দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত, প্যাপিলিডিমা।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী অন্যান্য রোগের তুলনায় হৃদরোগে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে হৃদরোগকে বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি হিসেবে চিহিৃত করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের মৃত্যু হয় এই রোগে যা ২০৩০ সাল নাগাদ দুই কোটি ত্রিশ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ মৃত্যুবরণ করে তার শতকরা প্রায় ৩১ শতাংশ হৃদরোগের কারণে। বাংলাদেশেও হৃদরোগের আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। পশ্চিমাধরনের আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা, অস্বাভাবিক জীবনাভ্যাস, অস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস, অসচেতনতা এসব কারণে হৃদরোগ শুধু বড়দের নয়, শিশু-কিশোরদের মাঝেও দেখা দিচ্ছে।

যেকোনো রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। হৃদরোগের ক্ষেত্রে তা আরো বেশি প্রযোজ্য। হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয় সমূহঃ

১. শরীরের ওজন সীমার মধ্যে রাখতে হবে।

২. হাঁটা, খেলাধুলা বা শরীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস করতে হবে।

৩. ধুমপান থেকে বিরত থাকা।

৪. কাঁচা লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকা।

৫. জীবনধারার পরিবর্তন: দুশ্চিন্তা পরিহার করা, অতিরিক্ত চিন্তা পরিহার করে সহজ-সরল স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হবে, সকাল অথবা বিকালে হালকা ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি অভ্যাস করতে হবে।

৬. প্রতিদিন টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এলে এবং নিয়মকানুন মেনে চললে যেকোনো মানুষ সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে। সর্বশেষ একমাত্র সচেতনতাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং প্রতিরোধ করা যায়। তাই সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

লেখক: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :