প্রথম আলোর সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সরকারি নথি চুরির মামলা

প্রকাশ | ১৮ মে ২০২১, ০০:৩৫ | আপডেট: ১৮ মে ২০২১, ০১:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব।

সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ ঢাকা টাইমসকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, রাত ৮টা ২০ দিকে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলা নং ১৬।

ওসি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী মামলাটি দায়ের করেন। মামলা হয়েছে পেনাল কোডের ৩৭৯ ও ৪১১ ধারা আর অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের ৩/৫ ধারায়।

ওসি জানান, মামলার পরপরই রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তার রিমান্ড চাওয়া হবে কি না এবং তাকে কখন আদালতে তোলা হবে, এ ব্যাপারে ঊধ্র্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

ডিএমপির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুনুর রশিদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাদীর আবেদনের ভিত্তিতে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি রোজিনা ইসলাম।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তুলেছেন। যেসব নথির ছবি তোলার নিয়ম নেই। আবার কিছু কাগজপত্র তিনি তার ব্যাগে নিচ্ছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সহকারীর কক্ষে। এটা কারো স্বার্থ না, এটা রাষ্ট্রের স্বার্থ।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এমনিতেই ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক রাজনীতি হচ্ছে বিশ্বে। কিছু বিষয় যদি আগে পাবলিশ হয়ে যায় তাহলে অন্য দেশ আমাদের বিশ্বাস করবে না। কিছু দিন আগে রাশিয়ার একটি নিউজ করেছিলেন। যা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে।’

যা বলা হয়েছে এজাহারে

থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগে শিব্বির আহমেদ ওসমানী বলেন, সোমবার বিকাল ২টা ৫৫ দিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সচিবের একান্ত সচিব এর দপ্তরে রোজিনা ইসলাম নামের একজন নারী প্রবেশ করেন। এ সময় একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। এ সুযোগে ওই নারী দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ-পত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকান এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন। এ সময় সচিবের দপ্তরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান দেখতে পান এবং তাকে বাধা প্রদান করেন। তিনি নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কক্ষে কী করছেন জানতে চান। এ সময় ওই নারী নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম, উপসচিব জাকিয়া পারভীন, সিনিয়র সহকারী সচিব শারমীন সুলতানা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞা, সিনিয়র সহকারী সচিব মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম, অফিস সহায়ক মো. মাহফুজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্টাফরা ঘটনাস্থলে আসেন। এবং অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টসের ছবি সম্বলিত মোবাইল উদ্ধার করেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, ডকুমেন্টসগুলো তিনি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার মহিলা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে জিম্মায় নেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয় ও সংগ্রহসংক্রান্ত নেগোসিয়েশন চলমান রয়েছে এবং খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে প্রতিনিয়ত পত্র এবং ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে। যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে। উক্ত নারী যেসকল নথিপত্রের ছবি তুলছিলেন। তার মধ্যে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও ছিল। এসকল তথ্য জনসমক্ষে প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার অশঙ্কা রয়েছে। উল্লিখিত কাগজপত্রসমূহ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত আছে, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদর্শন করা হবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্বিত হলো। অতএব, এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

এর আগে রাত সাড়ে আটটার দিকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাকে পাঁচ ঘণ্টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন তার সহকর্মীরা।

শাহবাগ থানার সামনে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

এদিকে রোজিনা ইসলামকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা এবং থানায় মামলা দায়েরের ঘটনায় শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ও সংগঠনের নেতারা।

সোমবার সাড়ে রাত নয়টা থেকে শাহবাগ থানার সামনে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

এদিকে এ ঘটনায় বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও নারীবাদী সংগঠন এবং সাংবাদিক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা রোজিনা ইসলামকে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান। সাংবাদিকেরা এ ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী–সচিবের পদত্যাগও দাবি করেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ), কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও আইন ও সালিশ কেন্দ্র এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে।

রাত ১০টার দিকে শাহবাগ থানার ওসির কক্ষ থেকে বেরিয়ে রোজিনার বোন সাবিনা পারভীন সুমী বলেন, ‘ও অসুস্থ। ওর শরীর ভালো না। গায়ে জ্বর। সকালে টিকা নিয়েছে। ওর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/এআর/এসএস/জেবি)