রাজধানীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই যুবক নিহত

প্রকাশ | ১৮ মে ২০২১, ১৩:০২ | আপডেট: ১৮ মে ২০২১, ১৬:১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর খিলক্ষেত ফ্লাইওভারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, এনামুল ও রাসেল। সোমবার দিবাগত রাতে ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। 

খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, সোমবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের উপরে লাশ দুটি পড়েছিল। আমি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রেখে আসি। 

ডিএমপির গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান ঢাকাটাইমসকে  বলেন, পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ নানা বাহনে ঢাকা ছেড়েছেন। ঢাকার ভেতরে গভীর রাতেও এই গমনাগমন অব্যাহত ছিল। কিন্তু গভীর রাতে বাস-মিনিবাসের মতো গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং মালবাহী ছোট পিকআপও যাত্রী আনা-নেয়া করে থাকে। 

গোলাগুলি থামার পর স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ একটি সবুজ রঙের সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ নয়ন ও ইয়ামিন নামে দুই ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগজিন, কাঠের বাটযুক্ত একটি পুরোনো ধারালো ছুরি, দুটি টাইগার বাম, একটি সবুজ রঙের গামছা, ৯টি স্মার্ট ও বাটন মোবাইল ফোন, ১৬ পিস ইয়াবা, একটি লাইটার ও নগদ ৫ হাজার টাকা জব্দ করে। 

কয়েকটি ডাকাত চক্র গণপরিবহনের এই স্বল্পতাকে কাজে লাগিয়ে রাইড শেয়ারের নামে মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার ধান্দায় লিপ্ত। ডাকাতি করতে গিয়ে নিরপরাধ ভিকটিমকে ফাঁস দিয়ে হত্যা করে ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। 

ঈদফেরত নগরবাসীকে কেন্দ্র করে অপরাধীচক্র আবার তৎপর হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কায় গোয়েন্দা তথ্য, প্রযুক্তিগত উপাত্তের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম কুড়িল-বিশ্বরোড ফ্লাইওভার, খিলক্ষেত, কাওলা, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড ও পূর্বাচলগামী ৩০০ ফিট রাস্তাতে টহল জোরদার করেছে। 

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম খিলক্ষেত থানা পুলিশের সঙ্গে নিরাপত্তা টহল দিচ্ছিল। ডিবি পুলিশের একটি দল কাওলা হয়ে পূর্বাচলগামী ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে, দ্বিতীয় দলটি পূর্বগামী ফ্লাইওভারের মাঝে অবস্থান নিয়ে তল্লাশি করছিল।

তিনি জানান, রাত সোয়া ২টার দিকে কাওলা থেকে বিশ্ব রোডের দিকে একটা সবুজ রঙের সিএনজিচালিত কয়েকজন লোককে নিয়ে যাচ্ছিল। চেকপোস্ট দায়িত্বরত পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের প্রথম দলটি সিএনজিটিকে থামার ইশারা দিলে সেটি দ্রুত বেগে ৩০০ ফিট ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে পূর্বাচলের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল। ডিবি পুলিশের ওই দলটি ব্রিজের মাঝে থাকা ২য় দলকে ওয়ারলেসে সতর্ক করলে তারা তাদের মাইক্রোবাসকে আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে দেয় এবং প্রথম দলটি পেছন থেকে ধাওয়া করতে থাকে। 

কিছুক্ষণ পরে সিএনজি থেকে দুজন সন্ত্রাসী নেমে দৌড়ে সামনে যেতে থাকে এবং পুলিশের একটি মাইক্রোবাস আড়াআড়ি দেখে সেটিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এতে ডিবি পুলিশের একটি মাইক্রোবাসের বাম দিকের কাচ ভেঙে যায়।

গুলশান ডিবি প্রধান বলেন, আত্মরক্ষার্থে আক্রান্ত মাইক্রোবাস থেকে ডিবি পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় সন্ত্রাসী এবং পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গোলাগুলি চলে।

এক পর্যায়ে গোলাগুলি থেমে গেলে সবুজ রঙের একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা (ঢাকা থ ১১- ৭৯৪৫) ফ্লাইওভারের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। সেটির ড্রাইভারের সিট এবং দ্বিতীয় সিট থেকে দুজনকে আটক করা হয়।

কিছুদূরে দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লাইওভারের ওপর পরে থাকতে দেখা যায়। খিলক্ষেত থানা পুলিশের মাধ্যমে তাদের দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। এই সময়ে তাদের দেহ তল্লাশি করে ৯ পিস ইয়াবা এবং দুটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। আহতদের একজনের ডান হাতের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল এবং দুই রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। অপরজনের হাত থেকে একটি পুরাতন কিন্তু ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত চালক ও সহচালকের কাছ থেকে চারটি মোবাইল, ৭ পিস ইয়াবা ও তাদের দেখানো মতে সিএনজির পেছনের সিটের নিচ থেকে তিনটি স্মার্টফোন, মলম ও গামছা উদ্ধার করা হয়।

আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সিএনজির ড্রাইভারের নাম নয়ন ও পাশের সিটে বসেছিলেন ইয়ামিন।

তারা আরও জানায়, ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত দুজনের নাম হলো, এনামুল ও রাসেল। দুজনই সিএনজির পেছনে বসা ছিলেন। পুলিশের দুটি মাইক্রোবাসের দ্বারা ব্যারিকেড হওয়ায় তারা নেমে পালাচ্ছিলেন এবং সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি বর্ষণ করেন। 

জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন ও ইয়ামিন জানান, তারা টঙ্গীর মধুমিতায় একত্রিত হয়ে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর খন্দকার পেট্রলপাম্পে যান। সেখান থেকে বিমানবন্দর হয়ে কাওলার দিকে আসতে থাকেন। উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার একাকি কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে সিএনজিতে তুলে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া।

(ঢাকাটাইমস/১৮ মে/এএ/কেআর)