শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ইউরোপিয়ান আ.লীগের সভা

প্রকাশ | ১৮ মে ২০২১, ২০:৫৮

কমরেড খোন্দকার, ইউরোপ ব্যুরো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ‘বৃষ্টিস্নাত এক অপরাহ্নকে মনে রেখে’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ। সোমবার আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম। সঞ্চালক ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মুজিব।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি, শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এমপি।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে না এলে আ.লীগ পুনর্গঠিত হতো না, জিয়াউর রহমান আ.লীগের নেতাকর্মীদের তার দলে টেনে নিতেন। আ.লীগ বিভক্ত হয়ে একটা সরকারি আ.লীগ, অন্যটা বেসরকারি আ.লীগে ভাগ হয়ে যেত। শেখ হাসিনা সেদিন দেশ ও দলকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন বলেই শতবাধা উপেক্ষা করেও সেদিন দেশে ফিরে এসেছিলেন।

বক্তারা আরো বলেন, হেনরি কিসিঞ্জারের সেই ‘বটমলেস বাসকেট’-এর দেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর একাধিক গণতান্ত্রিক সরকার ও স্বৈরশাসক দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এলেও বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করেনি। তারা নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১) এবং ২০০৮ থেকে টানা তিন মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করায় বিজয়ের ৫০ বছরে অর্থ ও বাণিজ্যের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

তারা বলেন, দারিদ্র্যদূরীকরণ, অর্থনৈতিক মুক্তি, রিজার্ভ, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ে উন্নত দেশগুলোকেও টেক্কা দিচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি মাসেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বৃদ্ধির অর্থ হলো অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। ১৯৭১ সালে ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ে শুরু করা বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬৪ ডলার।

বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের আগে যেখানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত ৮০ শতাংশ মানুষ, আজ সেই সংখ্যা ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রথম অর্থবছর (১৯৭২-৭৩) দেশের বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ৫০ বছরের মাথায় এসে বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

গ্রামাঞ্চলে এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। বার্ষিক মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সর্বশেষ পরিমাণ ২৪ হাজার মেগাওয়াট। খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৪৫১ লাখ টন। স্বাধীনতার আগে এর পরিমাণ ছিল অনেক নিচে। অন্যদিকে স্বাধীনতা-পরবর্তী ৩৪৮ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় বেড়ে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৮৬ কোটি ডলার। শিক্ষা, গড় আয়ু, আমদানি, রপ্তানি, রিজার্ভ, ডলারের মান, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এবং মাথাপিছু আয়ের মতো প্রতিটি সূচকে এখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় অনেক এগিয়ে। অনেক সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ এখন ভারত থেকে এগিয়ে। বিস্ময়কর উত্থানের কারণ খুঁজছে ভারতও।

স্বাধীনতার পরপর আমাদের ১০০ টাকা দিয়ে ভারতীয় ৩৫-৪০ রুপি পাওয়া যেত। আর এখন পাওয়া যায় ৮৫-৯০ রুপি। সবকিছু সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন বলেই। তিনি আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন বলেই করোনার মহামারিতেও দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা সচল আছে। বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়করাও রীতিমতো ক্লান্ত। তারা যখন প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করছেন, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অসীম সাহসিকতা আর মানবিকতা দিয়েই জয় করছেন সবকিছু।

করোনাযুদ্ধে একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়কই নন, ইতিহাসে নাম লেখাচ্ছেন যুদ্ধজয়ের বীরত্বগাথা গৌরবে। গত বছর করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনে থেকে প্রশংসনীয় সফল ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন। মানুষের জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে একের পর এক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন সরকারপ্রধান। বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র শিল্প বাঁচাতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়াসহ সাহস ও উদ্দীপনা জুগিয়েছেন। বেকার ও কর্মহীন মানুষের জন্য বরাদ্দ করেছেন মানবিক সহায়তা।

তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা আনা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের অনেক ধনী দেশগুলোও যখন টিকা পায়নি, তখন দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। অতি সম্প্রতি ভারত করোনা টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশে সংকট তৈরি হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘যত টাকা লাগুক, টিকা আনবোই’। চলছে মুজিব শতবর্ষ। গত বছর মুজিববর্ষের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন একটি পরিবারও ভূমিহীন থাকবে না। ঠিক সেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পাকা ঘর দেয়া হয়েছে।

আশ্রয় প্রকল্পের আওতায় আরও ৫৫ হাজার ঘর আগামী জুন মাসে হস্তান্তর করা হবে; যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিল বলেই আজ পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, পায়রা সমুদ্র বন্দর, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো মেঘা প্রকল্পের কাজ আজ শেষ পর্যায়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন্ নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন, তার কন্যা শেখ হাসিনা সেই অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করছেন। আজ থেকে চার দশক আগে তিনি যদি ফিরে এসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন, তাহলে এমন বাংলাদেশ হতো না। কারণ অতীতে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই দেশের মানুষের পরিবর্তে নিজেদের ভাগ্যবদল করেছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বিদেশে থাকাকালেই ১৯৮১ সালের ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তার হাতে তুলে দেন দেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতাকা। লাখো মানুষের প্রাণঢালা উষ্ণ সম্ভাষণ এবং গোটা জাতির ভালোবাসা মাথায় নিয়ে প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে ফিরে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

জননেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আজকের মতো সেদিনটি এমন নিষ্কলুষ ছিল না। শেখ হাসিনার চলার পথও ছিল না কুসুমাস্তীর্ণ। তখনও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার-পরিজন ও জাতীয় চার নেতার রক্তের দাগ শুকায়নি; গণতন্ত্র অবরুদ্ধ। সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের নির্যাতনের স্টিম রোলার চলছে বঙ্গবন্ধুবিহীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর। বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে সেই সময়টিতে শ্বাসরুদ্ধকর অন্ধকার বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি করা হয়েছিল গোটা জাতিকে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে লন্ডনে রেখে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে আসেন।

শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’

শেখ হাসিনা সেদিন জনগণকে দেয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৩৬ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জনগণের ভাগ্যবদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।

লোভ, মোহের ঊর্ধ্বে পথচলা বিশ্ববরেণ্য নেত্রী আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন, আমাদের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন, ততদিন দেশ উন্নয়নের সিঁড়ি পথেই হাঁটবে, ততদিন গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকশিত হতেই থাকবে, ততদিন গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকবে। দেশ হবে তার স্বপ্নের দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবাল, জার্মান আ’লীগের সভাপতি বসিরুল আলম চৌধুরী সাবু ও সাধারণ সম্পাদক আব্বাস আলী চৌধুরী, পর্তুগাল আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল আলম জসিম ও সাধারণ সম্পাদক শওকত ওসমান, নেদারল্যান্ড আ.লীগের নেতা শাহাদাত হোসেন তপন ও মুরাদ খান, ফ্রান্স আ.লীগের সভাপতি এম এ কাশেম, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন কয়েস, সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী খান, ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম, বেলজিয়াম আ.লীগের সভাপতি শহিদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী রতন, সুইজারল্যান্ড আ.লীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান, স্পেন আ.লীগের সভাপতি এসআরআইএস রবিন ও সাধারণ সম্পাদক রিজভি আলম, ডেনমার্ক আ.লীগের নেতা মোস্তফা মজুমদার বাচ্চু ও মাহবুবুর রহমান, গ্রিস আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামাদ মাতুব্বর ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাওলাদার, অস্ট্রিয়া আ.লীগের সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল কবির, নরওয়ে আ.লীগের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ও মফিজুর রহমান, আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বেলাল হোসেন ও সদস্য সচিব ইকবাল আহমেদ, মাল্টা আ.লীগের সভাপতি মশিয়ার রহমান, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ ইউরোপ চ্যাপ্টারের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হেদায়েতুল ইসলাম শেলী, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব ইতালির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খোন্দকার প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি সার্বিক সহযোগিতা করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/কেএম)