কুড়িগ্রামে বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ, সরবরাহ নেই ‘সেফটি এক্সজোন’
কুড়িগ্রামে পৌর শহরে আকষ্মিকভাবে বেড়েছে টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে টাইফয়েড রোগীর জন্য সরকারিভাবে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন ‘সেফটি এক্সজোন’ সরবরাহ শেষ হওয়ায় ফার্মেসি থেকে বেশি দামে কেনার অভিযোগ উঠেছে।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গত দেড় মাসে শুধুমাত্র টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ২১২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের অর্ধেকেই শিশু। হাসপাতালের অভ্যন্তরের পাশাপাশি বহিঃবিভাগের রোগীর চাপ সৃস্টি হয়েছে। ক্রমেই প্রতিদিন বাড়ছে টাইফয়েড রোগীর সংখ্যা।
আকষ্মিকভাবে রোগির বৃদ্ধির ফলে হাসপাতালে বিনামূল্যে সরকারিভাবে দেয়া এন্টিবায়োটিক সেফটি এক্সজোন ইনজেকশন শেষ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাদু ফার্মেসি এই ইনজেকশন চড়া দামে বিক্রি করার অভিযোগও উঠেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। একদিকে করোনা পরিস্থিতি এবং অন্যদিকে হঠাৎ করে জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত দিন কাটছে রোগীসহ স্বজনদের।
গত ২২ এপ্রিল থেকে হঠাৎ করেই টাইফয়েডসহ অন্যান্য জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে হাসপাতালে।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসে ১১৬ জন টাইফয়েডের রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২৯ দিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু ৩০ জন, ছয় থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু ২২ জন। রোগীদের মধ্যে মহিলা ওয়ার্ডে ৩৭ জন এবং পুরুষ ওয়ার্ডে ২৭ জন। চলতি মাসের ১৬ মে পর্যন্ত রোগী ভর্তি রয়েছে ৯৬ জন। এদের মধ্যে ২৯ দিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী ২৬ জন, ছয় থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু ২৫ জন। এছাড়া নারী ২৭ জন এবং পুরুষ ১৮ জন। অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা করেও সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালে টাইফয়েড রোগী বৃদ্ধির কারণে বেড না পেয়ে মেঝেতেই থাকতে হচ্ছে অনেক রোগীকে।
রোগীর স্বজনরা জানান, টাইফয়েডে আক্রান্তদের জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথায় রোগীরা কাবু হয়ে পড়ছে। নেই খাবার রুচিও। প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে শিশুরা। থেমে থেমে আসা আকষ্মিক জ্বরে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত ভেবে স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতার জন্য কাছে পাচ্ছেন না। ফলে করোনার মধ্যে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাবে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আল-আমিন মাসুদ বলেন, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃবিভাগে টাইফয়েড রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসকদের বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়াও জ্বরবাহিত রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়া, পৌর এলাকার সরবরাহকৃত পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন তিনি।
টাইফয়েড পানিবাহিত রোগ হওয়ায় সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন ডা. আল-আমিন মাসুদ।
(ঢাকাটাইমস/২০মে/কেএম)