চীনে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের চুলের তৈরি টুপি

মুমিনুল ইসলিাম বাবু, কুড়িগ্রাম
| আপডেট : ২২ মে ২০২১, ১৬:১২ | প্রকাশিত : ২২ মে ২০২১, ১৫:৫২

কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মতো চুল দিয়ে তৈরি করা মাথার টুপি রপ্তানি হচ্ছে চীনে। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের লাইজু খাতুন নামে এক নারী উদ্যোক্তা এসব টুপি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এ কজে আরো ত্রিশ নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করেছেন।

জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা বালাতাড়ি গ্রামের কৃষক হেছার আলীর মেয়ে লাইজু খাতুন। বাণিজ্যিকভাবে মাথার চুল দিয়ে টুপি তৈরি করে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা ও সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এই নারী উদ্যোক্তা। লাইজু খাতুন রংপুর সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এখন নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি গরিব-অসহায় পরিবারের শতাধিক নারীর কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। চুলের টুপি দেশ-বিদেশে রপ্তানির সুযোগ থাকায় ইতোমধ্যেই গ্রামের গরিব-অসহায় পরিবারের ৩০ জন নারীকে দিয়ে চুলের টুপি তৈরি করে রপ্তানি করছেন তিনি। এই নারী উদ্যোক্তার কাছে টুপি তৈরি করে প্রতি মাসে ৫/৮ হাজার টাকা আয় করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন অনেকেই। সরকারি-বেসরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা পেলে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে এলাকার শতশত অবহেলিত নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছেন এই নারী উদ্যোক্তা।

লাইজু খাতুন বলেন, ‘আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ও স্বপ্ন ছিল একজন সফল উদ্যোক্তা হব। পাশাপাশি গ্রামের অবহেলিত, বঞ্চিত নারীদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করব। এই স্বপ্নটা পূরণ করতে আমার স্বামীর সহযোগিতায় ময়মসিংহে পাঁচদিন এবং ঢাকা উত্তরায় ১০ দিন চুল দিয়ে টুপি তৈরির প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামের ৩০ জন নারীকে আমার নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় এক মাসের প্রশিক্ষণ দেই। আমার বাবার বাড়িতে একটি টিনসেড ঘরে স্বল্প পরিসরে প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সিনহা বিনতে সামিউল হেয়ার ক্যাপ নিটিং লিঃ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করি। গড়ে মাসে ৯০-১০০টি চুলের টুপি তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি টুপিতে গড়ে সাড়ে তিনশ টাকা খরচ করে ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫০০ টাকায়। আমাদের তৈরিকৃত চুলের টুপিগুলো ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চীনে রপ্তানি করা হয়।’

লাইজু খাতুনের ওইখানে কাজ করা এক নারী শ্রমিক নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর দিন মজুরির টাকায় সংসারের চার জনের চলে। কাজ জুটলে সেদিন পেটে খাবার যায়, না হলে এক/আধ বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। লাইজু আপার এডে কাজের সুযোগ পাইছি। গত তিন মাস থাকি মাসে ৪/৭ হাজার টাকা আয় করছি। এতে করে হামার সংসারে অভাব কমি গেছে।’

নারী শ্রমিক খাদিজা বেগম বলেন, ‘মোর স্বামী দিন মজুরি করিয়া সংসার চালায়। এই করোনার-ফরোনার মধ্যে তেমন কাম-কাজ জোডে না। ঠিকমতো সংসারও চলে না। মুই লাইজু আপার এডে কাম করং চুল দিয়া টুপি বানার তাতে খাটুনি কম হয়। মজুরিও ভালো পাওয়া যায়। এতে সংসার ভালই চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, লাইজু আপার এই প্রতিষ্ঠান আরো বড় হোক। হামার এলাকার মহিলাগুলোও কাম করি খাবার পাক।’

লাইজু খাতুনের স্বামী সামিউল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘লাইজু খুবই মেধাবী একজন নারী। সে স্বপ্ন দেখতেন সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে গ্রামের অবহেলিত নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলবেন। তাই স্বামী হিসাবে স্ত্রীর স্বপ্ন পূরণের জন্য তাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছি। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ এবং নিজেদের জমানো অর্থ দিয়ে এ উদ্যোগে নেমেছি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী যেভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে, আশা করছি প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করানো সম্ভব।’

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সোহেলী পারভীন বলেন, ‘এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। লাইজুর প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে ঊধ্র্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে লাইজুর প্রতিষ্ঠানটি সমিতির অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হলে উপজেলার শতাধিক নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমান দাস বলেন, ‘উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই ইতিবাচক। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলে দেশ ও জাতি এগিয়ে যাবে।’

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :