কলাপাড়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২১, ২২:০০ | আপডেট: ২৬ মে ২০২১, ২২:২৯

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে পানিবন্দি হয়েছে ৩৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ। নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সাত-আট ফুট পানি বেড়েছে।

উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে ৫০০ ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে আছে। দুদিন যাবৎ রান্নাবান্নার কাজ বন্ধ। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লালুয়া ইউনিয়নের চান্দুপাড়া, চরচান্দুপাড়া, চারিপাড়া, নয়াকাটা, ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া, লোন্দা আবাসন প্রকল্প, চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর, ধুলাসার ইউনিয়নের চর ধুলাসার, বাবলাতলা বাজার, মহিপুর ইউনিয়নের কমরপুর, সুধীরপুর, নিজামপুর গ্রামের সাত হাজার মানুষ। তারা এখন পানিবন্দি।

পাউবোর বেড়িবাঁধ যেকোন সময়ে ভেঙে যেতে পারে। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নিজকাটা গ্রামের স্লুইজ গেট ভেঙে ও লালুয়া ইউনিয়নের ৪৭/৫ পোল্ডারের দেবপুর ৫৪/৪৮ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ৩৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি গ্রামগুলোতে রান্নাবান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে এবং গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

পানিবন্দি অসহায় পরিবারগুলোকে স্থানীয় সিপিপি সদস্যরা যথেষ্ট চেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে জানা গেছে। শুকনা খাবার বিতরণ করা হলেও তা জনসংখ্যার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। 

লালুয়া ইউনিয়নের চান্দুপাড়া চারিপাড়া, নয়াকাটা, ধানখালী ইউনিয়নের দেবপুর, ধানখালী লোন্দা আবাসন প্রকল্পের, নীলগজ্ঞ ইউনিয়ন নিজকাটা, নীলগজ্ঞের আবাসন প্রকল্প, কলাপাড়া পৌরসভার বঙ্গবন্ধু কলোনি, কুয়াকাটার খাজুরাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে।

এছাড়া কলাপাড়া উপজেলার বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসরত মানুষের দুর্দশা আরো চরমে। পানিবন্দি গ্রামগুলোতে পুকুর, মাছের ঘের তলিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কুয়াকাটার সৌন্দর্য বৃদ্ধির বাগান ঝাউগাছ বাগারনর গাছপালা ভেঙে দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সৈকতের পাড়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। 

লালুয়া ইউনিয়নের অনেকের মাছের ‘গদিঘর’ ঢেউয়ের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ইউনিয়নের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। লালুয়া ইউপি চেয়রম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস ও আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি তারিকুল ইসলাম খান প্লাবিত এলাকায় এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া আমজনতার মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন।

তারিকুল ইসলাম খান বলেন, লালুয়াবাসীকে রক্ষায় এই মুহূর্তে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

মহিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলু গাজী জানান, কমরপুর, সুধীরপুর ও নিজামপুর চরম ঝুঁকিপূর্ণ।

টিয়াখালী ইউপি সদস্য আ. সোবাহান জানান, টিয়াখালীর বঙ্গবন্ধু কলোনিতে বসবাসরত অসহায় গরীব মানুষের ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় দুর্দশা চরমে রয়েছে।

ধানখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহজাদা পারভেজ টিনু মৃধা বলেন, পাউবোর দেবপুর বাঁধ ভেঙে সমগ্র ধানখালী ইউনিয়ন পানি প্লাবিত। রান্না-বান্নার কাজ বন্ধ। গবাদী পশুর খাদ্য সংকট চরমে। লোন্দা আবাসন প্রকল্প, নিশানবাড়িয়া, পাঁচজুনিয়া, দেবপুর গ্রাম এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। এসব গ্রামের লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে। 

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক জানান, ইতিমধ্যে কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় ২৫ হাজার টাকার আপাতত শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতির সম্ভাবনার আশঙ্কায় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/কেএম)