নানা সংকটে হতাশ লবণ চাষিরা

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
 | প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২১, ২২:৩১

ন্যূনতম মুনাফা না পেয়ে চরম হতাশায় মাথায় হাত দিয়ে বছর শেষে বাড়ি ফিরতে হলো কক্সবাজার জেলার লবণ চাষি ও মালিকদের। এবার কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে অনেক আগে লবন মাঠ ত্যাগ করে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাদের।

এ অবস্থায় কিছু চাষি খুশি হলেও অনেক চাষি ও মালিক হতাশ। তাদের ভাষ্য, লাভের টাকাতো দূরের কথা অন্তত পুঁজির টাকাও উঠেনি। এই পরিস্থিতির ফলে জেলার বেশিরভাগ ক্ষতি হয়েছে টেকনাফ উপজেলায়। এ উপজেলায় অধিক সংখ্যক মানুষের আশাভরসা লবন আমদানি-রপ্তানি করে মুনাফার আশায় বেশি লবন চাষ ও ব্যবসা করা।

দুই-তিন বছরের লবণ জমা আছে। দাম নেই, বিক্রি নেই। কিন্তু কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ভয়াল থাবায় ক্ষতবিক্ষত করে বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় পুরো লবন মাঠের অংশ। এর ফলে এ বছর আর কোনো মাঠ চাষ করার উপযোগী হিসেবে দেখা যায়নি। তাই মাঠ থেকে পলিথিনসহ যাবতীয় মালামাল কুড়িয়ে নিয়ে গত রবিবার সকাল থেকে আস্তে আস্তে বাড়ি নিয়ে যায়।

চাষি ও মালিকদের অভিযোগ, এ বছর ন্যূনতম আয়ের টাকাও পায়নি। অনেকে চাষিদের বেতন দিতে পারছেন না। এ মুহূর্তে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেককে।

তারা বলছেন, লবন মৌসুমের শুরুর দিকে সরকারের উদাসীনতায় দেশের বাইরে রপ্তানি করা যায়নি। মৌসুমের শেষ মুহূর্তে এসেও লবন ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে না পারায় আরো হতাশা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা শুধু টেকনাফ নয়, জেলার মহেশখালী, পেকুয়া, কুতুবদিয়ার বিস্তীর্ন জায়গায় লবন চাষী ও মালিকদের হতাশা। ফলে এ বছর পুরো জেলায় কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের।

টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রংগীখালী এলাকার লবণ চাষী বেলাল উদ্দিন জানান, এ বছরের মতো কোনো বছর এ রকম লোকসান গুণতে হয়নি। চাষি ও পানির টাকা শোধ করতে পারেননি অনেক মালিক। এর ফলে মাথায় হাত দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।

একই এলাকার লবণ ব্যবসায়ী সরওয়ার জানান, মৌসুমের শুরুতে ভালো লবণ উৎপাদন হলেও বিক্রি হয়নি। দামও নেই। তাই তখন হাজার হাজার মণ লবণ নির্দিষ্ট জায়গায় মজুদ রাখা হয়েছে। আর মৌসুমের শেষে এসে কালবৈশাখীর ঝড়ে লন্ডভন্ড করে আশা নিরাশার বাদ ভেঙে দিয়ে চুরমার করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে লাখ লাখ টাকার লোকসান গুণতে হচ্ছে।

অন্য দিকে মহেশখালীর কালারমারছড়া এলাকার লবণ চাষী কাশেম জানান, মৌসুমের শুরুতে লবণের মাঠে দেড় লাখ টাকা দিয়ে শুরু করছিল। আর এখন পুঁজির টাকা তো দূরের কথা, চাষির টাকাও দিতে পারেননি। ফলে হতাশার অন্তরালে ঢুকে মাথায় হাত দিয়ে বিস্তীর্ণ লবনের মাঠ ত্যাগ করতে হলো।

আবার কিছু চাষি জানান, কয়েকদিনের মধ্যে রোধ দেখা দিলে যদি মাঠ উপযোগী থাকে আবার নতুন করে মাঠে কাজ করে লবন চাষ করবেন। এই সুযোগটি পেলে মোটামুটি পুঁজির টাকাগুলো তুলতে পারবেন। সেটার জন্য কিছু চাষী এবং ব্যবসায়ী বসে আছেন। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে লবণ ব্যবসা ও চাষে আরো ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

চারদিকে চাষিদের আতঙ্কের খবর। বিশেষ করে টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা, খারাংখালী, রঙিখালী, লেদা এলাকায়। প্রচণ্ড তাপদাহে নাফনদীর তীরের হাজার হাজার একর জমিতে উৎপাদিত হচ্ছে লবণ। খোলা মাঠে স্তূপ পড়ে আছে লাখ লাখ টন লবণের। দূরের লবণগুলো চাষিরা কাছাকাছিতে নিয়ে আসছেন। তবে বিক্রি নেই। প্রতিমণ লবণ উৎপাদন করতে চাষিদের খরচ হয় ২৩০ টাকা, অথচ বিক্রি করতে হচ্ছে ১২০ টাকায়।

মিল মালিকদের সিন্ডিকেট:

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের লবণমিল মালিকেরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এখন সেই লবণও যদি ঘূর্ণিঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়, তাহলে চাষিদের কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন? সঙ্গে করোনাকালের বিপদতো আছেই।

এমনিতে লবণ চাষিরা কয়েক বছর ধরে উৎপাদিত লবণের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। বিদেশ থেকে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা সোডিয়াম সালফেট মিশ্রিত লবণ ভোজ্য হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে। এতে বাজারদর হারিয়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাষিদের লবণ। সোডিয়াম সালফেট আমদানি নিষিদ্ধ অথবা সীমিতকরণের জন্য চাষীরা কতো আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, পত্রপত্রিকায় কত লেখালেখি হলো। কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছে না।

অবিক্রিত লবণ নিয়ে দিশেহারা চাষিরা:

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। এর মধ্যে অবিক্রিত অবস্থায় মাঠে পড়ে আছে সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিকটন লবণ। খোলামাঠে পড়ে থাকা লবণগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নাই। বৃষ্টিপাত হলেই লবণ নষ্ট হয়, এই আতঙ্কে চাষিরা দিশেহারা।

অন্যদিকে দেখা গেছে, চাষিরা ছোট যানবাহনে বোঝাই করে মাঠের লবণ নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির উঠানে। তারপর সেই লবণের ওপরে পলিথিন মোড়িয়ে ইট চাপা দিচ্ছেন। যেন বাতাস পলিথিন উড়িয়ে নিতে না পারে। কেউ কেউ মাঠে বড় গর্ত খুঁড়ে তাতে লবণ পুঁতে ওপর থেকে মাটি চাপা দিচ্ছেন। তাতেও চাষিদের খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

অধিকাংশ চাষি দাদনের টাকায় মাঠে নামেন লবণ চাষে। লোকসান দিয়েও লবণ বিক্রি হচ্ছে না, দাদনের টাকা পরিশোধ করবেন কিভাবে? এজন্যও বহু চাষি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে।

এভাবে একসময়ের সাদাসোনা খ্যাত ‘লবণ’ উপকূলের প্রতিটা পরিবারে সৃষ্টি করছে টানাপোড়েন, অশান্তি। কত দিন চলবে এই সংকট- এই প্রশ্ন ব্যবসায়ী ও লবণ চাষিদের।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :