কবিতা
পতিত প্রেমের উপাখ্যান
তুমি নিজেই বলো, কোন রসে তোমার পক্ষপাত?
সব রস উজ্জিবণী নয়;
কোনো কোনো রস হয় মাদকতার বিনাশী করাত।
আদি, বীর, করুণ,অদ্ভুত, হাস্য,
রৌদ্র, ভয়ানক, শান্ত, শৃঙ্গার, বীভৎস;
তুমি চাইলে ঘটাতে পারো আস্বাদন অনুভূতির
এই দশরসের সবগুলোর সমাহার।
তবে নিন্দুকেরা বলে,ও-সব নন্দন রসের
কোনো ভাণ্ডারে নয়;
ভিন্ন কোনো রসে নাকি তোমার অদম্য আসক্তি,
সর্বনাশের মাঝেই তুমি স্থির করেছো
তোমার নির্বান-নিষ্কৃতি।
তুমি নাকি সোমরসের উস্কানিতে
কামরসে করতে চাও রসাতলে অবগাহন,
তাহলে তো স্বর্ণলংকাপতি রাবণের
জবরদখলি পুষ্পক রথকেই করতে হবে
তোমার হাওয়াই বাহন।
তুমি বললে, অপপ্রচারের চক্রব্যূহে পড়েছে
তোমার পবিত্র প্রেম;
রাধিকার সঙ্গে কেবল লীলায় মেতেও
কাল-কালান্তে কামের কলঙ্ক মাথা পেতে নিয়েছে
নিরুপায় শ্যাম।
পথ হারেলেই যদি পথ পাওয়া যেতো,
সকল পথিক স্বেচ্ছায় পথই হারাতো।
ঘোরের গোলকধাঁধায় যে পথ হারায়,
গন্তব্যের দূরত্ব সে আরেকটু বাড়ায়।
নিয়তির ছকেই যার নিষ্কৃতি-ঘুঁটির নেই প্রবেশাধিকার,
ডোবায় ডুবে মরা,আর আটলান্টিকে ডুবে মরা-
এ দুয়ের মাঝে বলো তফাত কী তার?
তুমি পলিমাটির কর্ষিত মাঠে প্রেমের বীজ বুনেছো কামাতীত,
তবুও সে মাঠে ফসল ফলেনি; রয়ে গেছে উষর পতিত।
রসের অস্ত্রে বশে আনবার চাতুরিকে প্রশ্রয় দেয়নি
পঞ্চবটি বন,
লক্ষণরেখা ভেদ করবার সাধ্য রাখেনি
রসাষক্ত প্রতারক রাবণ;
তাই দেহাতীতের প্রতি তোমার পক্ষপাত।
তবে তোমার কাঙ্খিত রসের সন্ধানে
ভুল করে আসো যদি সাগর কূলের এই মরুর মুলুকে,
হতাশ হয়ে হারাবে দিশা;
রসের আকুতির সব ল্যাঠা যাবে চুকে।
এখানে রসের বাজারে ধস নেমেছে সত্যযুগ থেকে,
এখানে রসিক কবিরা করুণ রসেই দু’চার পংক্তি লেখে।
এখানে যায় না দেখা প্রেম আর কামের মাঝে কোনো ভেদরেখা; স্বকীয় আকার,
এই জনপদ কেবল করুণ কাহিনি গাথার অফুরান ভাণ্ডার;
অবিরল ধারায় ঝরা অশ্রু-শ্রাবণ,
কিংবা কসরতের ঘামের প্লাবন;
এখানে নিভৃত ছায়া দেয় না চৈত্রের শালবন।