নারী নামের মানুষের কথা
যারা বলে তুমি নরের আদল,অবয়বে আমি নারী,
লিঙ্গান্তর বিষারদ ওরা; ভাষার বিদ্যাধারী।
আমি নারী হলে নিশ্চয়ই তুমি লিঙ্গান্তরে নর,
অমন যুক্তিবাদীর ব্যাখ্যা টেকানোও দুস্কর।
প্রথম দিনের আলোতে যেদিন আমাতে তোমাতে দেখা,
আমরা দেখেছি মানুষ নামের দ্যুতির সরল রেখা।
একটা বিন্দু ডান দিক থেকে বাম দিকে রেখা এঁকে,
দুজনকে রাখে দুজনের পাশে আলোর দীপ্তি মেখে।
যাপিত জীবনে উচ্চ-তুচ্ছ যতো ছিলো দায়ভার,
ঘরে ও বাইরে উভয়ে হয়েছি যুগল অংশিদার।
পাশাপাশি থেকে কাল কালান্তে দুজনে ছিলাম সুখি,
কোন সভ্যতা আমাকে তোমাকে করে দিলো মুখোমুখী?
দিন দিনান্তে কাল কালান্তে আমরা সমান তালে,
সঙ্গি হয়েছি আবাদে,শিকারে, সাগরের উত্তালে।
শান্তি এবং যুদ্ধে ছিলাম দোসর পরস্পর,
দুজনেই মিলে গড়েছি আমরা স্বপ্নের খেলাঘর।
অতীতের প্রেমে বর্তমানের শিশুকে করেছি লালন,
ভবিষ্যতের শিরায় করেছি শোণিত সঞ্চালন।
তুমিও মানুষ,আমিও মানুষ,এই পরিচয় বয়ে,
আমরা নেমেছি কাঁধে কাঁধ রেখে জীবন যুদ্ধজয়ে।
তুমি আর আমি আমরা দুজন কেবলি মানুষ ছিলাম;
পরে শুধু তুমি রইলে মানুষ,আমি মেয়েলোক হলাম।
কেমন করে যে ‘মানুষ' নামটা কেবল তোমারই হয়ে,
আমাকে রেখেছে ‘মেয়ে মানুষ' -এর তকমার পরিচয়ে।
তুমি যদি হও ‘প্রথম' তবুও আমি তো দিতীয় নই,
তোমাকে প্রথম মানলেও আমি ‘প্রথমা' হয়েই রই।
সুন্দর এবং শোভন অর্থে তুমি সুষমের উপমা,
সৌন্দর্য ও লাবণ্য অর্থে আমিও হয়েছি সুষমা।
সৃষ্টি-স্বভাবে প্রসূতির গুণে আমিইতো নিরূপমা,
তিল তিল করে মাধুরি-রেণুতে হয়েছি তিলোত্তমা।
মর্ত্যে আমরা মেধা ও মননে মানুষ পরস্পর,
প্রথমে আমরা দুজনেই মানুষ; তারপর নারী-নর।
নর কিবা নারী; সেই ভেদ মুছে আমরা কেবলি মানুষ,
এই পরিচয়ে আমরা পেয়েছি বিধাতার সন্তোষ।
জীবনের পথে দুজনে এঁকেছি দুজনেরই পদচিহ্ন,
এক আত্মারই স্পন্দন দুই দেহ কাঠামোতে ভিন্ন।
সুখের দিনের সখাও আমরা, দুঃখের দিনেরও দোসর,
ভুবনের সব স্নেহনীড় জুড়ে দুজনে বেঁধেছি ঘর।
-