পাপুল হারালেও এমপি পদে স্ত্রীর বাধা আছে কি?

আমিনুল ইসলাম মল্লিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ জুন ২০২১, ১১:১৪ | প্রকাশিত : ০১ জুন ২০২১, ১০:২৪

অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত ও সাংসদ পদ হারানো লক্ষ্মীপুর-২ আসনের কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এখন কুয়েতের কারাগারে আছেন। সাজা হওয়ার এক মাস পর রায়ের কপি বাংলাদেশে এলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সংসদ সচিবালয় থেকে পাপুলের পদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নৈতিক স্খলনজনিত কারণে সাংসদ পদ হারান পাপুল।

চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি পাপুলকে কুয়েতের আদালত চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করে।

এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা ঝুলছে পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের সাংসদ সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে। সেলিনা ইসলাম লক্ষ্মীপুর থেকে সংরক্ষিত আসনে স্বতন্ত্র সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নৈতিক স্খলনের দায়ে স্বামীর কারাদণ্ড ও নিজে মামলার আসামি হওয়ায় সেলিনা ইসলাম সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি না, এ নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আবার তার এমপির দায়িত্ব পালনের নিজ জেলার অন্য এমপিদের প্রভাব পড়বে কি না- এসব বিষয় নিয়ে সংবিধান ও বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের।

তারা বলছেন, সংবিধানমতে সেলিনা ইসলামের সাংসদ পদ হারানোর কারণ এখনো তৈরি হয়নি।

সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নিয়ে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে- ‘কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হইলে এবং তাঁহার বয়স পঁচিশ বৎসর পূর্ণ হইলে এই অনুচ্ছেদের ২ দফায় বর্ণিত বিধান-সাপেক্ষে তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন।’

৬৬ (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা আছে- ‘সংসদ সদস্য পদ বাতিল হইবে যদি তিনি (এমপি) নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাবস্ত হইয়া অন্যূন ২ বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সব সংসদ সদস্যেরই ক্ষমতা এক। তারা সবাই আইনপ্রণেতা। জাতীয় সংসদে গিয়ে ওনারা আইন পাস করেন। এই সাংসদদের পদ বাতিল হয় নৈতিক স্খলনের দায়ে। দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য কারও দণ্ড হলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।’

একই এলাকা থেকে নির্বাচিত স্বামী পাপুল নৈতিক স্খলনে পদ হারিয়েছেন, নিজের নামে দুর্নীতির মামলা আছে, এসব কারণে সেলিনা ইসলামের সাংসদ পদ হুমকির মুখে পড়বে কী না? মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সংসদ সদস্যের পদ যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজের দায়ে। কেউ কারও জন্য পদ হারাবেন- এমন কথা সংবিধানে নেই।’

এই মুহূর্তে সেলিনা ইসলামের সংসদ সদস্য পদ যাবে না বলে জানান দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ওনার (সেলিনা ইসলাম) তো এখনো কোনো মামলায় সাজা হয়নি। তার বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলা চার্জশিটের পর্যায়ে। সংবিধান অনুযায়ী যদি কোনো সাংসদ দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য নৈতিক স্খলনের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হন, তাহলে তার পদ চলে যাবে। তিনি সংসদ সদস্যপদ হারাবেন। কিন্তু পাপু্লের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত চলছে। এই পর্যাায়ে ওনার সংসদ সদস্যপদ হারানোর কোনো সুযোগ নেই।’

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ঢাকা টাইমসকে বলেন, জাতীয় সংসদের মোট সদস্যের আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি মনোনীত করা হয়। এটি মনোনীত করেন সংসদে নির্বাচিত রাজনৈতিক দল ও সতন্ত্র সদস্যরা। পাপুলের স্ত্রী সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের মনোনীত এমপি। সাংসদ হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে স্থানীয় জেলার সংসদ সদস্যদের প্রভাব নেই এখানে। আইনের দৃষ্টিতে ওনার পদ হারানোর কোনো কারণ নেই।’

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মমর্পণ করে জামিন নেন সেলিনা ইসলাম ও তার মেয়ে ওয়াফা ইসলাম। এ সময় লক্ষ্মীপুরের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য সেলিনা ইসলামসহ চারজনের ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ এবং ৯২টি তফসিলভুক্ত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সেলিনা ইসলাম, জেসমিন ও ওয়াফা ইসলামের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।

গত বছরের ১৭ জুন পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।

এ ছাড়া সেলিনা ইসলামের নামে ২৯৫টি এফডিআরে ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, জেসমিনের নামে ২০টি এফডিআরে ১ কোটি, পাপুলের ২৩টি এফডিআরে ২ কোটি ১৮ লাখ এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের নামে ৪১টি এফডিআরে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা রয়েছে।

কুয়েত প্রবাসী শিল্পপতি সেলিনা ইসলাম আওয়ামী লীগের কুমিল্লা উত্তর জেলার সহ-সভাপতি। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪৯ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে সেলিনা ইসলামের নাম ঘোষণা করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।

(ঢাকাটাইমস/০১জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

রং মাখানো তুলি কাগজ ছুঁলেই হয়ে উঠছে একেকটা তিমিরবিনাশি গল্প

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :