২১ বছরেও সম্পন্ন হয়নি বিচারকাজ

১৫ বছর ধরে আপিলে আটকা সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যা মামলা

আল-আমিন রাজু ও আবদার রহমান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ জুন ২০২১, ১৭:৪৭ | প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০২১, ০৯:৩৩

২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে জনকণ্ঠ যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় সাংবাদিক শামছুর রহমান আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এরপর দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনৈা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হয়নি। আসামির আপিলের গ্যাঁড়াকলে আটকে রয়েছে এ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া।

সাংবাদিক শামসুর রহমান হত্যা মামলাটি ২০০৫ সালে যশোর থেকে খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এই দীর্ঘ সময়ে সেখানে বিচারপ্রক্রিয়ায় যেতেই পারেনি মামলাটি। কারণ গত ১৫ বছরে নথিপত্র পৌঁছায়নি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কাছে। ফলে মামলাটি ফ্রিজ (থেমে) হয়ে আছে।

দুই দশকেও হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শামছুর রহমানের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। সরকারপক্ষ চাইলেই এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব বলে মন্তব্য আইনজীবীদের।

আদালত সূত্র জানায়, সাংবাদিক শামছুর রহমান খুনের মামলায় ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। সে সময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েক আসামির আগ্রহে মামলার বর্ধিত তদন্ত করে শামছুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়। একই সঙ্গে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে বাদ দিয়ে সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের।

এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়; অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট। বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এ মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।

আপিল আবেদনে সেলিনা আকতার লাকি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্য রয়েছে। ফলে তার (বাদী)র পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

বাদীর আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না, তার জন্য সরকারের বরাবর রুল জারি করেন। এরপর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

সেলিনা আক্তার লাকি বলেন, ‘১৫ বছর আগে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে আবেদন করার পর মামলা স্থগিত হয়ে আছে। পেছনের বিষয় নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। আমার শরীর এখন বেশি ভালো না। নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছি। পেছনের কথাগুলো মনে পড়লে খুব কষ্ট হয়।’

দীর্ঘদিনেও স্বামী হত্যার বিচার না হওয়ায় হতাশ স্কুলশিক্ষিকা সেলিনা আক্তার লাকি আইন-আদালত ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। তিনি বলেন, ‘এখন আর বিচারের আশা দেখছি না।

শামছুর রহমানের ছোট ভাই সাংবাদিক সাজেদ রহমান বকুল আক্ষেপ নিয়ে ঢাকা টাইমসকে বলেন, মামলাটি একই অবস্থায় ঝুলে আছে বছরের পর। স্থগিত হয়ে থাকা এই মামলা তিনি আর বেশি কিছু বলতে চান না।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে বলে জানান যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইদ্রিস আলী। তাদেরও প্রত্যাশা আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হবে।

খুলনার দ্রুত বিচার আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (স্পেশাল পিপি) অ্যাডভোকেট আহাদুজ্জামান জানান, মামলার নথিপত্র অফিসিয়ালি তার হাতে পৌঁছায়নি। তাই এই মামলার বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে, সাংবাদিক হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার মামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু স্ট্রোকে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। অন্য আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/৩জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :