যাত্রী সেজে প্রাইভেটকার ছিনতাই করতেন তারা

বিদেশ থেকে আত্মীয় আসবে, তাই তাকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করতে গাড়ি লাগবে- এমন কথা বলে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করতো একটি গাড়ি ছিনতাই চক্র। ভাড়া নেয়া প্রাইভেটকার সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছলে ড্রাইভারের হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যেতো চক্রটি। দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও অবশেষে গোয়েন্দা জালে গ্রেপ্তার হয়েছেন চক্রের ছয়জন।

শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান বলেন, একটি দস্যুতার মামলার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে এ চক্রটির সন্ধান মিলেছে। তারা ধীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে প্রাইভেটকার চুরি করলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে ছিল। অন্য মামলার তদন্তে তাদের চক্রের সদস্য হাবীব মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য বেরিয়ে আসে।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, উত্তরা পূর্ব থানায় দস্যুতা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে একটি চক্র আছে যারা কৌশলে প্রাইভেটকার ছিনতাই করে। পরে বিদেশ থেকে দেশে কয়েক মাসের জন্য ঘুরতে আসা ব্যক্তিদের কাছে ওইসব গাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে হাবীব মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল নরসিংদী ও কুমিল্লা জেলার একাধিক স্থানে অভিযান করে তাদের আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মীর মিজান মিয়া, মো. হাবিব মিয়া, মো. ফারুক, কামাল মিয়া, মো. আল আমিন ও মোবারক। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে ডিবি।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথামিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘গত ২১ এপ্রিল গ্রেপ্তার হাবিব মিয়া তার বিদেশ ফেরত এক আত্মীয়কে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আনার কথা বলে কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করে। পরদিন ২২ এপ্রিল আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মাইক্রোবাস চালক মো. আবুল বাশার গ্রেপ্তার হাবিবের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী করিমগঞ্জ থানা এলাকা থেকে চারজন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ওইদিন রাত আনুমানিক ১১টায় তাদের বহনকৃত মাইক্রোবাসটি ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে পৌঁছালে যাত্রীবেশী এই ছিনতাইচক্রের সদস্যরা লুঙ্গি, গামছা ও দড়ি দিয়ে মাইক্রোবাস চালকের হাত-পা বাঁধেন।

এরপর গ্রেপ্তার ফারুক মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার গাউছিয়া নরিকান্দী রোডে নিয়ে যায়। সেখানে মাইক্রোবাসের চালক আবুল বাশারকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে সোনারগাঁয়ের দিকে চলে যায়। পরে গ্রেপ্তার হাবিব গাড়িটি চালিয়ে কুমিল্লার চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত গ্রেপ্তার মিজানের কাছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। এরপর গ্রেপ্তার মিজান ভুয়া নম্বর প্লেট ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ার বিনিময়ে ওই গাড়িটি চালাতো ‘

তিনি আরও জানান, এই চক্রটি এখন পর্যন্ত কি পরিমাণ গাড়ি চুরি করেছে তার তদন্ত চলছে। তবে তারা জানিয়েছে- তাদের ছিনতাইকৃত প্রাইভেটকারগুলো তারা সিলেটে বেশি বিক্রি করেছে। কারণ সিলেটে বিদেশ ফেরত বহু দেশি নাগরিক আসেন কয়েক মাসের জন্য। ওই প্রবাসীরা কয়েক মাসের জন্য অল্পদামে গাড়ি কিনতে চান। আর এ চক্রটিও ওই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছিল। তবে প্রবাসীরা গাড়ি কেনার সময় বুঝতে পারেন না গাড়ি চুরির কি না। যদিও পরবর্তীতে ফেঁসে যাচ্ছেন তারাই। তাই গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই বিআরটিএর অনুমোদন আছে কি-না এবং গাড়িটির মূল মালিক কে- সেগুলো যাছাই-বাছাই করার অনুরোধ করেন তিনি।

ডিবি প্রধান বলেন, ‘এ চক্রটি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে গ্রামের বিভিন্ন সহজ-সরল মানুষদের কাছ থেকে অব্যবহৃত সিম কিনে ব্যবহার করতো। তারা মনে করতো সেসব সিম ব্যবহার করলে তাদেরকে ধরা যাবে না।’ তাই নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম অন্যকে না দেয়ার অনুরোধ জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।

ঢাকাটাইমস/০৫ জুন/এএ/ইএস