বেতন-বোনাস নেই, চাকরিরও স্থায়ীত্ব নেই: আউটসোর্সিং কর্মচারী পরিষদ

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২১, ২১:৩৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

তৃতীয় পক্ষ বা ঠিকাদারী কোম্পানির মাধ্যমে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলেও নিয়মিত বেতন বোনাস দেয়া হয় না। যখন তখন চাকরিচ্যুতিও করা হয়। সরকারিভাবে বেতন দেয়া হলেও তার প্রায় অর্ধেক বেতন নিতে হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। নারী কর্মচারীদের একদিনের জন্যও মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া হয় না। কেউ মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটালে তার চাকরিও চলে যায়।

শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতা আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ। তাই আউট সোর্সিং পদ্ধতি বন্ধ করে সরকারিভাবে তাদের চাকরিতে বহাল দাবি করেন আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা।

পরিষদের সভাপতি মাহবুবুর রহমান আনিছ বলেন, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করা রাজশাহীতে মিলন নামে এ কর্মচারী মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে ক্ষোভে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। 

তিনি বলেন, সারাদেশে প্রায় ৮ লাখ আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেই রয়েছে আড়াই হাজারের মতো কর্মচারী। সরকারি প্রত্যেকটি অফিসে এসব কর্মচারী ঘরমোছা থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজও করে দেন। তাদের একদিনের জন্য ছুটি দেয়া হয় না। অথচ করোনাকালীন সময়ে সবাই দিন ভাগ করে অফিস করেছেন। এতে কর্মচারীদের প্রায় দুই হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা বলতে পারছি না।’

করোনায় আক্রান্ত হোক আর মৃত্যুবরণ করুক না কেন তাদের কেউ সাহায্য সহযোগিতা করেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, গত ঈদে অনেকে স্ত্রী ছেলে মেয়ের কাপড় চোপড়ও কিনতে পারেনি। তাদের বোনাস তো পরের কথা, বেতনটাও দেয়া হয়নি।

তিনি আউটসোর্সিং পন্থার কয়েকটি নেতিবাচক দিক তুলে ধরে বলেন, ঝুঁকি ভাতা ও প্রনোদনা থেকে আউটসোর্সিং কর্মচারীরা বঞ্চিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন বিল পরিশোধ করার কথা বললেও ঠিকাদাররা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা না দিয়ে হাতে হাতে টাকা দিয়ে থাকে। আউটসোর্সিং কর্মরত গাডড়িচালকদের সর্বোচ্চ ১০০ ঘণ্টা ওভারটাইম দেয়ার কথা থাকলেও অতিরিক্ত কাজ করেও তারা আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। হাসপাতালগুলাতে কখনো কখনো প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকায় ও নানা রকম জটিলতার কয়েক মাস বিনা বেতনেও কাজ করতে হয় অসহায় আউটসোর্সি কর্মচারীদের। জেলার উপজেলায় ঠিকাদারের হাত থেকে বেতন নিতে হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত বেতন না দিয়ে মনগড়া বেতন দেয়া হয়। বেতন প্রদানের কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ও থাকে না। বছর শেষে জুন মাসে রি-নিউ করার জন্যও মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

একই সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতা সরকারি চাকরিজীবী ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুল মান্নান বিশ্বাস বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারের মাধ্যমে আউটসোর্সিংপন্থায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সঙ্গে কৃতদাসের চাইতেও নিম্ন মানের ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের বেতন ভাগ বাটোয়ারা করে ঠিকাদার ও অনান্য কর্মকর্তা যোগসাজেসে ভাগ করে নিচ্ছেন। তারা কোনো জায়গায় বেতন পাচ্ছেন তিন হাজার কোনো জায়গায় ছয় হাজার টাকা। আবার কোনো জায়গায় ১০ হাজার, কোনো জায়গায় ১২ হাজার টাকা এমন কি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ৩৩ মাস, ১৮ মাস, ১২ মাস, ৬ মাস একদমই বেতন দেওয়া হয় না। তারা কিছু বললেই তাদেরকে বলা হয় তোমাদের জন্য দরজা খোলা। অফিস থেকে বেড়িয়ে যাও। তোমাদেরকে থাকতে বলছে কে। এমন কি তাদের দিয়ে বাথরুম পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করা হয়।

তিনি সারাদেশের ১০-২০তম গ্রেডের সকল সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূর করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বর্তমান বাজার অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধি ও নবম পে স্কেলের মাধ্যমে সঠিক বেতন নির্ধারণের জোরালো আবেদন জানান তিনি।

সচিবালয় থেকে ও সচিবালয়ের বাহিরের ১০-২০ গ্রেডের সকল কর্মচারীদের পদ পদবি বৈষম্য মুক্ত বাহিরের কর্মচারীদের সম্মানহানি থেকে মুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। সারাদেশের গাড়ি চালকসহ ঝুঁকিপূর্ণ সকলকে ঝুঁকিভাতা দেয়া অনুরোধ জানান তিনি। সকল ১০-২০ গ্রেডের চাকরিজীবীদের সিলেকসন গ্রেড মর্গ ভাতা টিফিন ভাতা বৃদ্ধি যাতায়াত ভাতা বৃদ্ধি বিনা সুদে বাড়ি করার জন্য লোন দেওয়ার জন্য গৃহনির্মাণ লোন দেওয়ার জন্য আবেদন জানান তিনি।

ঢাকাটাইমস/০৫ জুন/আরএ