হেফাজতের নতুন কমিটিতে কী চমক থাকছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ জুন ২০২১, ২২:০০ | প্রকাশিত : ০৬ জুন ২০২১, ২১:৫১

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলোচিত-সমালোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম নতুন কমিটি ঘোষণা করতে যাচ্ছে আগামীকাল সোমবার। এদিন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মাখযানুল উলুম মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা করা হবে। এই কমিটিতে কারা স্থান পাচ্ছেন, কী চমক থাকছে সেটা নিয়ে দেশজুড়ে আলেম-উলামার মধ্যে এখন আলোচনা তুঙ্গে।

হেফাজতে ইসলাম সূত্রে জানা গেছে, নতুন কমিটিতে আমির পদে মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব পদে মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীই থাকছেন। প্রাথমিকভাবে ৩৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। পরবর্তী সময়ে কমিটিতে যুক্ত হতে পারে আরও সদস্য।

সূত্র জানায়, এবারের কমিটিতে অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের অরাজনৈতিক লোকদের রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। ইসলামি ধারার রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রভাব ও বলয়মুক্ত থাকবে নতুন কমিটি। এজন্য বিগত কমিটিতে আধিপত্য বিস্তার করা জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত মজলিসের নেতারা নতুন কমিটিতে স্থান না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া অর্ধশতাধিক নেতার কেউই নতুন কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন না বলে নিশ্চিত করেছে হেফাজতের একাধিক সূত্র।

রবিবার রাতে হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নতুন কমিটির সবচেয়ে বড় চমক হলো, আগের কমিটির খুব কম সদস্যরই স্থান পাবেন। সারাদেশ থেকে অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের লোকদের বাছাই করে কমিটিতে আনা হচ্ছে। যেহেতু হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক একটি সংগঠন এজন্য রাজনৈতিক লোকদের প্রাধান্য থাকবে না। এক-দুজনের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও তারা অন্য পরিচয়ে পরিচিত।’

সূত্র জানায়, নতুন কমিটির একটি বড় চমক হলো, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফকে সহকারী মহাসচিব করা হচ্ছে। এছাড়া আল্লামা শফীর ঘনিষ্ঠভাজন হিসেবে পরিচিত ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুসকে করা হতে পারে সহসভাপতি।

এছাড়া কমিটিতে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাওলানা মুহিব্বুল হক (সিলেট), মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব (বরিশাল), মুফতি জসিমুদ্দিন (হাটহাজারী)সহ ১১ জনকে সহসভাপতি রাখা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মাওলানা সাজিদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা আরশাদ রহমানী (বসুন্ধরা), মাওলানা আনোয়ারুল করীমের (যশোর) নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মাওরানা মীর ইদরিস (চট্টগ্রাম), অর্থ সম্পাদক পদে মুফতি মুহাম্মদ আলী মেখল, প্রচার সম্পাদক পদে মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানীর নাম শোনা যাচ্ছে।

কমিটি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, হাসান জামিল, মুফতি হারুন ইজহারসহ অর্ধশতাধিক আলোচিত অনেক নেতা।

আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর গত বছরের ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা ও তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৭ জন মারা যান।

এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হেফাজতের অর্ধশতাধিক নেতা গ্রেপ্তার হন। প্রচণ্ড চাপের মুখে ২৫ এপ্রিল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন আমির জুনাইদ বাবুনগরী। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকেই এই কমিটির প্রধান করা হয়। আগের কমিটির মহাসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদীকে আহ্বায়ক কমিটির মহাসচিব আর সিনিয়র নামেবে আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে করা হয় প্রধান উপদেষ্টা। সদস্য করা হয়েছে আল্লামা সালাহউদ্দীন নানুপুরী ও মিজানুর রহমানকে (পীরসাহেব দেওনা)।

২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম প্রথমবারের মতো ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে ওই বছরের ৬ এপ্রিল সংগঠনটি ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে। তাদের এই শোডাউন ব্যাপক নজর কাড়ে বিভিন্ন মহলের। তবে এর ঠিক এক মাস পর ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিতে শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে পালাতে বাধ্য হন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এরপর সংগঠনটি অনেকটা চুপসে যায়।

হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। পরবর্তী সময়ে দেশের শীর্ষ এই আলেমের সরকারের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। তার নেতৃত্বেই কওমি মাদ্রাসা দাওরায়ে হাদিসের সনদের সরকারি স্বীকৃতি পায়। এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধিও দেন আলেম-উলামারা।

আল্লামা শফী ইন্তেকাল করেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তার ইন্তেকালের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে হেফাজতের আমির নির্বাচিত হন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, যিনি আল্লামা শফীর কমিটির মহাসচিব ছিলেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আলেমরা প্রাধান্য পান। মূলত তাদের কারণে হেফাজত ধীরে ধীরে সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায় এবং মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে।

(ঢাকাটাইমস/০৬জুন/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :