‘শুধু ভাতা নয়, সবক্ষেত্রেই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে হবে’

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২১, ১৩:০১ | আপডেট: ০৭ জুন ২০২১, ১৩:১০

আমিনুল ইসলাম মল্লিক, ঢাকাটাইমস

শুধু ২০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা নয়, সবক্ষেত্রেই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে হবে। এ মন্তব্য করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব,) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার। ২০২১-২২ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা বাড়ানো প্রসঙ্গে রবিবার ঢাকাটাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। 

প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা ১২ থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এ বিষয়টি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন? 

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে দুটো বিষয়। প্রথমত, সঙ্গত কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর জন্য তারা (সরকার) খুশি হবেন। যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তাদের ৮০ ভাগই অসচ্ছল। কাজেই গ্রামে-গঞ্জে যারা অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুখবর।

দ্বিতীয় দিক হলো, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা শুধু টাকার বিনিময়ে ভাবলেই হবে না। এতে বোধহয় কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বলে আমার মনে হয়। ভাতা দিয়ে তারা মনে করছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখানো হলো। আমি কিন্তু তা মনে করছি না। যেহেতু মুক্তিযোদ্ধাদের ৮০ ভাগই অসুস্থ, কাজেই তাদেরকে ভাতা দিতে হবে।

তিনি বলেন, যে রাষ্ট্রের বাজেট হয় সাড়ে ছয় লক্ষাধিক কোটি টাকার ওপরে,  সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা দিয়ে বাহবা চাওয়ার কিছু নেই। আমি তো মনে করি ২০ হাজার টাকা কেন? আজকে ২০ হাজার টাকার কোনো বেতন স্কেল আছে? একজন গেজেটেড কর্মকর্তা কমপক্ষে ৩৫ হাজার টাকা বেতন পান। সুতরাং একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাহবা পাওয়ার কিছু নেই।

তিনি বলেন, এ রাষ্ট্রের জন্ম হতো না যদি মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন না করতেন। এখন ২০ হাজার টাকা দিয়ে আপনারা মনে করছেন করুনা করা হলো, অনেক দয়া করা হলো, এটি জাতির জন্য লজ্জাজনক। মুক্তিযোদ্ধারা কারও দয়া বা করুনার পাত্র নন।

তাহলে আপনার দৃষ্টিতে কত টাকা সম্মানি দেয়া উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মাদ আলী শিকদার বলেন, আমি মনে করি মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা যদি দেয়া হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে তা দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় জায়গা থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সেটা হলো মুক্তিযোদ্ধারা সেখানেই যাবেন, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বলেন আর ব্যক্তিগত কোনো অনুষ্ঠানই বলেন, তারা যেন সবখানেই যথাযথ সম্মানটা পান। বিমান বন্দরসহ সব জায়গায় সম্মান দিতে হবে। তারা যেন সর্বত্র মর্যাদা পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের উদ্যোগ নেয়া দরকার। সেটি যদি হয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সত্যিকার সম্মান দেখানো হবে।

এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, যারা অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা তাদের টাকার দরকার আছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান টাকা দিয়ে নিরুপণ করলে হবে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে সম্মান দিতে হবে, তারা যেখানেই যাক সেখানেই সম্মান দিতে হবে।

গত ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বাড়ানো হয়েছে। আগে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ছিল ১২ হাজার টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে মাসিক ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে। এতে বরাদ্দ বাড়বে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা।

এর আগে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।

এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট এটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট এটি। আবার অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালেরও এটি তৃতীয় বাজেট উপস্থাপন।

(ঢাকাটাইমস/৭জুন/এআইএম/কেআর)