‘বাজেট বুঝি না, দাম নাগালে থাকলেই খুশি’

কৌশিক রায়, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ জুন ২০২১, ০৮:১২

অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকেই চড়া। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, পেঁয়াজ ভোক্তাদের ভুগিয়েছে বেশি। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাশের আগেই বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে সেটা বাজেটের প্রভাব নয় ব্যবসায়ীদের ভাষ্য।

ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজেটের আগে পরে বিষয় নয়, মওকা পেলেই ব্যবসায়ীরা অন্যায্যভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেন। অথচ বাজেট অনুযায়ী যেসব পণ্যের দাম কমানোর কথা সেগুলো কার্যকর হয় না। মহামারীকালে টাকাপয়সার টানাপড়েনের মধ্যেও ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ছাড় দিচ্ছে না।

ঢাকার হাতিরপুল বাজারে সোমবার সংসারের নিত্য বাজার করতে আসা গৃহিণী রেহনুমা সোবহানের কণ্ঠে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঝরে হতাশা। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘করোনায় আমাদের মতো স্বল্প আয়ের লোকেরা পড়েছি বিপদে। আয় কমে গেছে, খাবার জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছি। আমরা তো অতো বাজেট বুঝি না, দাম নাগালে থাকলেই আমরা খুশি। নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা না গেলে আমাদের মতো পরিবারগুলো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়বে।’

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী গাজর ও মাশরুম আমদানিতে শুল্ক হার বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন। গাজর, মাশরুম, কাঁচামরিচ, টমেটো, কমলা ও ক্যাপসিকামের ন্যুনতম শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব আছে বাজেটে। ফলে বাজেট পাশের পর এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

তবে রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সোমবার পর্যন্ত এসব পণ্যের দামে বাজেটের প্রভাব খুব একটা পড়েনি। যদিও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশের এক সপ্তাহ আগেই কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন বাড়তি। এর মধ্যে গত মে মাসের শেষ দিকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের দাম। আর চলতি জুনের শুরুতেই চাল, ডাল, আটা, ময়দা, রসুনের দাম আরেক দফা বেড়েছে। গুঁড়োদুধের দামও চড়া।

পলাশী বাজারে আল আমিন নামে একজন ক্রেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘না খেয়ে উপায় নেই, তাই বাজারও করতেই হয়। করোনার মধ্যেও ক্রেতারা বেশি দামের কাছে জিম্মি। ব্যবসায়ীরা দাম কমাবে সেটাই এখন দূরাশা। তারা পারলে বরং দাম আরও বাড়ায়। সরকারের বাজার মনিটরিং করা উচিত। কিন্তু বাজারের এমন দশা দেখার যেন কেউ নেই।’

বাজারে বাজেটের প্রভাবের বিষয়ে জানতে চাইলে এই বাজারের একজন ব্যবসায়ী ঢাকা টাইমসকে জানান, বাজেটে দাম বাড়ুক বা কমুক সেটা আগে পাইকারি বাজারে কার্যকর হবে। সেখানে কমলে খুচরা পর্যায়েও সেই দাম কার্যকর হয়। পাইকাররা না কমালে খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার থাকে না।

বাজারের যা চিত্র:

পলাশী বাজার, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, চিকন, মাঝারি ও মোটা সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। চিকন চাল ৬২ থেকে ৬৬ টাকায়, মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে আটা ও ময়দার। এক প্যাকেট আটা এখন ৩৪ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক কেজি প্যাকেট ময়দা ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায়।

ভোজ্যতেল কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। খোলা সয়াবিন তেল কেজিতে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। অন্যদিকে বাজেট পেশের আগের দিন বুধবার পর্যন্ত ৬৬৫ টাকায় বিক্রি হওয়া পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭১০ টাকার মধ্যে।

গেল সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আমদানি করা রসুন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ টাকা। আর বিভিন্ন সবজির দামও বেড়েছে। খুচরা বাজারে বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসা ৬০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আর প্রতি কেজি সজনেডাটা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।

আগারগাঁও বিএনপিবাজারের নিউ সরোয়ার জেনারেল স্টোরের মালিক খোকন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাজেটের পর এখনও কোনও পণ্যের দাম খুব একটা বাড়েনি। দাম যা বাড়ার বাজেটের আগেই বেড়েছে। তবে এটা মানতে হবে বাজার এখন গরীবের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।’

(ঢাকাটাইমস/০৮জুন/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :