পুঁজিবাজারের প্রত্যাশার প্রতিফলন আছে বাজেটে

প্রকাশ | ০৮ জুন ২০২১, ১৭:৩৪ | আপডেট: ০৮ জুন ২০২১, ১৭:৪৬

রহমান আজিজ ও শাহ্ মো. সাইফুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের প্রত্যাশার প্রতিফলন আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

তিনি বলছেন, বিদেশি বড় বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে আনতে কাজ চলছে। মোটিভেশনাল যত প্রকারের পদক্ষেপ নেওয়া যায় তাই নেওয়া হচ্ছে। আগামী বছরের মধ্যে বেশ কিছু ভালো কোম্পানির পুঁজিবাজারে দেখা মিলবে।

ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে বিএসইসি চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। বাজেটে পুঁজিবাজার কি পেল, আগামীতে তিনি পুঁজিবাজারকে কোন উচ্চতায় নিতে চান, বিদেশী বিনিয়োগ এবং ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির অগ্রগতিসহ নানা বিষয় নিয়ে সাক্ষাতকারে কথা বলেছেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

ঢাকাটাইমস: পুঁজিবাজার বান্ধব যেমন বাজেট প্রত্যাশা করেছিলেন, তার কতটা পূরণ হয়েছে?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: পুঁজিবাজার থেকে বাজেটে বিশেষ কয়েকটি বিষয়ে সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম। আমরা মনে করি সরকার আমাদের সকল অনুরোধই রাখার চেষ্টা করেছেন। যতটুকু পারা গেছে। আমরা বিশেষ ভাবে যে বিষয়টি চেয়েছিলাম আমাদের অপ্রদর্শিত অর্থ এবারও বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে। দ্বিতীয়ত আমরা চেয়েছিলাম তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ৫ শতাংশ কমানেরা জন্য। কিন্তু আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। আমরা আশা করি একবারে না পারলেও আগামীবার বাকি টুকু পেয়ে যাবো।

আমরা ইক্যুইটি মার্কেটের পাশাপাশি বন্ড মার্কেটাকে গুরুত্ব দিয়েছি বেশি। বন্ড মার্কেটের যেসব এসেট গুলো ট্রান্সফার করতে হয় এসপেবির কাছে। এসপেবির কাছে ট্রান্সফার রিট্রান্সফার একটা বিরাট খরচ চলে আসে যার কারণে মানুষ বন্ড মার্কেটে আসতে চায় না। সেই বিষয়টিকে এবার সমাধান করা হয়েছে।

এই তিনটা বিষয় ক্যাপিটাল মার্কেটে বিরাট ভুমিকা রাখবে। আসলে আমরা তো অনেক কিছুই চাই কিন্তু সরকারের পক্ষে তো সব কিছুই দিয়ে দেয়া সম্ভব না। আমরা মনে করি প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী এবং এনবিআরও আমাদের প্রতি সহায়ক ছিলো।

ঢাকাটাইমস: বাজেটে এসএমই খাতে যে কর আরোপ করা হয়েছে তাতে এ খাতের উদ্যোক্তারা কতটা আশাবাদি?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: এসএমই খাতের কোম্পানির ট্যাক্সের বোঝা ঐ রকম ভাবে আসে না। এরা অনেকেই ট্যাক্স হলিডে ইনজয় করে। ফলে আমার মনে হয় না কোম্পানিগুলোর খুব কষ্ট হবে। আমার মনে হয় নতুন যারা ট্যাক্স হলিডে নিয়ে আসছে তাদের অসুবিধা হবে না । কিন্তু যদি কারো টেক্স হলিডে থাকে সামনের দিন গুলোতে আমরা দেখে নিবো। পরবর্তী বাজেটে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

ঢাকাটাইমস: বিদেশি বড় বিনিয়োগকারীদের দেশের পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার যে প্রক্রিয়া চলছিলো, তা কতটা এগিয়েছে?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: বিদেশি বড় বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, কাজ চলছে। মটিভেশনাল যত প্রকারের স্টেপ নেওয়া যায় তা নেওয়া হচ্ছে। আশা করি আপনারা এ বছরের শেষ থেকে আগামী বছরের মধ্যে বেশ কিছু ভালো কোম্পানি বাজারে দেখতে পাবেন।

বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর স্কোপ এখন কম। এখন দেখছি বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো সব সেক্টোরে ভালো করছে। বিদেশিরা এশে এখর আর বাংলাদেশি কোম্পানির সাথে পারছে না।

তবে প্রকৌশল খাতে, হাইটেক পার্ক সেগুলোতে এখনো বিদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ আছে। এর জন্য হাইটেক পার্ক, ইপিজেড এরা কাজ করছে। আর আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে যত বিনিয়োগের সুযোগ আসে সেটাকে আমরা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আর ইনফ্রাস্টাকচার ছাড়া বিদেশীদের বিনিয়োগের তেমন সুযোগ দেখছি না। কারণ আমাদের দেশীয়ে কোম্পানি গুলারই সক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে।

ঢাকাটাইমস: পুঁজিবাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া কী পর্যায়ে রয়েছে?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: করোনা না থাকলে হয়তো সরকারি কোম্পানি গুলোর ভ্যালুয়েশন, অডিটের যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো তা হয়তো এতো দিনে হয়ে যেতো। করোনার প্রভাব একটু নুন্থতার দিকে গেলেই আমরা একটা দুইটা করে কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসতে পারবো।

ঢাকাটাইমস: যেসব বিমা কোম্পানি এখনও পুঁজিবাজারে আসেনি তাদের কে তালিকাভূক্তির প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অবস্থা কি?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমাদের কাছে এই মূহুর্তে বিমা খাতের আরও তিনটা কোম্পানির আইপিও আবেদন এসেছে। সুতরাং আমরা আশা করবো যে বাকি বিমা কয়টা কোম্পানি রয়েছে সে গুলোও চলে আসবে। কোম্পানিগুলো আসছে তো আমরা একের পর এক অনুমোদন দিয়েই যাচ্ছি।

ঢাকাটাইমস: আইসিবিকে তহবিল দেওয়ার কথা বিএসইসির, কবে নাগাদ এটা দেওয়া হতে পারে?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: গেজেটের জন্য গেছে। গেজেট হয়ে গেলেই সাসটেইন করার জন্য ফান্ড চলে যাবে। আর বিদেশের একটা বন্ডের চেষ্টা করছি আমরা। মন্ত্রনালয়সহ অনান্য জায়গার অনুমোদিত পেলেই ওটাও নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

ঢাকাটাইমস: মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে আপনি সব সময় পজেটিভ বলে থাকেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডর ভবিষৎ কি?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: মিউচ্যুয়াল ফান্ডর ভবিষৎ বাংলাদেশে খুবই উজ্জ্বল। এখন ইফ্রাস্টাকচারে শত শত বিলিয়ান ডলার প্রয়োজন। এখানে ক্যাপিটাল মার্কেট ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। ক্যাপিটাল মার্কেট প্রস্তুত আছে। আমরা একটি প্রিন্সিপাল বন্ড দিয়ে কাজ শুরু করেছি। সামনে আরও মুনি বন্ড আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস এবং আমরা দেশের ইনফ্রাস্টাকচারে ভুমিকা রাখার জন্য ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত।

ঢাকাটাইমস: আপনার দায়িত্বের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। পুঁজিবাজারকে আরও স্থিতিশীল এবং বিনিয়োগ বান্ধব করার জন্য আপনি কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমাদের নতুন কোন পরিকল্পনা নেই। আমরা গভর্নন্সকে বেশি প্রধান্য দিচ্ছি। সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। তবে  আমরা বাজার দেশ অর্থনীতি করোনা পরিস্থিতি সবকিছু বুঝেই আগানোর চেষ্টা করছি। সামনের দিন গুলোতে আইট যখন আরও বড় হবে। তখন এই গর্ভারনেন্সটাকে আমরা ভালো স্কেলে আরও মনিটর এবং সুপারভিশন করতে পারবো।  সরকারের যে উন্নয়নের চেষ্ঠা করছে। সেখানে গভারনেন্সই  হবে সাসটেইনেবলে  প্রধান অংশ। এবং আমরা যাযা করছি শুধূ মাত্র গর্ভারনেন্সটা ঠিক হলেই সব ধরে রাখা সম্ভব।

ঢাকাটাইমস: নতুন আইপিও আবেদনে কোন ভোগান্তির অভিযোগ পেয়েছেন কি না?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আজ পর্যন্ত কোন ভোগান্তির অভিযোগ পাই নাই। আর এটা তো কোন ভোগান্তি না। এটা তো অটোমেটিক তার অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। এখানে বিনিয়োগকারীদের কিছুই করতে হচ্ছে না। আগে বিনিয়োগকারীকে লটারীসহ অনেক কিছুই করতে হতো। এখতো কিছুই করতে হচ্ছে না। অটোমেটিক তার অ্যাকাউন্টে পায়োরাটা বেসিসে চলে যাচ্ছে।

ঢাকাটাইমস: পুঁজিবাজারকে আপনি কোন উচ্চতায় দেখতে চান?

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমাদের উন্নত বিশ্বে যে রকম পুঁজিবাজার রয়েছে সে রকম উচ্চতায় দেখতে চাই। তারা যে ভাবে চালায় আমরাও সেভাবে চলতে চাই উন্নত বিশ্বের সাথ তাল মিলিয়ে।

ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: ঢাকা টাইমসকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/০৮জুন/ডিএম)