মহামারির ইতিহাস কেন জরুরি?

প্রকাশ | ০৯ জুন ২০২১, ১৪:১২

অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। কোটি কোটি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যুবরণ করেছে লাখ লাখ মানুষ। পৃথিবীজুড়ে এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। জীবনযাত্রা থমকে দিয়েছে। অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ থেকে মুক্তি পায়নি আমাদের দেশও।

এই করোনাভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব বাংলাদেশে থেকে প্রত্যক্ষ করছি। গতবছর শুরুর দিকে আমাদের দেশে প্রথম করোনার রোগী ধরা পড়ে। এপ্রিল থেকে দেয়া হয় লকডাউন। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কে মানুষ ঘরবন্দী হয়ে যায়। এরপর করোনা কমতে শুরু করে। আমরা কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে দেখি। দেশে করোনার ভ্যাকসিন আসে। দেয়া শুরু হয়।

শীতে করোনা বৃদ্ধি পাবে- এ নিয়ে আতঙ্ক ছিলো। তবে ইতিবাচক দিক হলো, সেসময় কভিডের প্রকোপ বাড়েনি। কিন্তু হঠাৎ করে আবার গরমের সময় করোনা বৃদ্ধি পায়। যা কেউই ভাবতে পারেনি। আবার লকডাউন। কিন্তু এবার আর মানুষ তেমন আতঙ্কিত নয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তারা চলাচলে বিধিনিষেধ মানতে চায়নি। সেটা ঈদের আগে আমরা বেশি দেখেছি। এসব বিষয় তুলে ধরে সম্প্রতি বারমসের একটি অনুষ্ঠানে আমি প্রবন্ধ পাঠ করেছি। যেখানে ঘটনার কিছু ছবিও দেখিয়েছি। আমরা সেই প্রবন্ধের শিরোনাম ছিলো- ‘দ্য আউটব্রেক অব কভিড-নাইনটিন প্যানেডেমিক ইন বাংলাদেশ, ইটস ইমপ্যাক্ট অন বাংলাদেশি পিপল অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যান্ড দ্য রোল অব বারমস অ্যান্ড আদার ইনস্টিউশনন ইন কালেক্টিং অ্যান্ড প্রিজার্ভিং দ্য রেকর্ডস রিলেটেড টু দ্য প্যানেডেমিক।’

করোনাভাইরাসের তথ্য কেন আরকাইভসে রাখতে হবে? সহজ করে যদি বলি- আগের কালে কলেরা, বসন্ত, প্লেগের শিকার ছিলো মানুষ। এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। সেই ইতিহাস এখন আবার জানতে হবে। কারণ করোনা মহামারি ঠেকাতে আগের কর্মকাণ্ড থেকে ধারণা নিতে হবে। জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দলিল-দস্তাবেজ দেখতে হবে। পড়তে হবে এ বিষয়ক গবেষণা। এ কারণেই সংরক্ষণ করতে হবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সব ডকুমেন্ট।

আমি মনে করি, বাংলাদেশেও এ বিষয়ে উদ্যোগ প্রয়োজন। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ দেখেত চাই। তবে মূল কাজটি করতে হবে বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভসকে। কারণ সরকারি এই প্রতিষ্ঠানই হবে তথ্য সংরক্ষণের কেন্দ্র। বাকি যারা কাজ করবে তারা থাকবে সহযোগী হিসেবে। বাংলাদেশ আরকাইভস অ্যান্ড রেকর্ডস ম্যানেজমেন্ট সোসাইটি (বারমস) থেকে আমরাও পাশে আছি।

এখানো আরো একটি বিষয় বলি, প্রতি বছর ৯ জুন ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন আরকাইভসের (আইসিএ) উদ্যোগে উদযাপন করা হয় আন্তর্জাতিক আরকাইভস দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘এম্পাওয়ারিং আরকাইভস’। করোনাভাইরাসের সময়ে আসলেই বুঝা যাচ্ছে- আমাদের আরকাইভের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে যেমন জাতীয় ইতিহাস সংরক্ষিত হবে। তার পাশাপাশি চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ সব ক্ষেত্রের গবেষণার চাহিদা পূরণ করা যাবে সহজে। আর মহামারির ইতিহাস জানা কেন জরুরি, তা কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আমরা সহজে বুঝতে পারছি।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ আরকাইভস অ্যান্ড রেকর্ডস ম্যানেজমেন্ট সোসাইটি (বারমস) এবং সাবেক পরিচালক, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার

 

ঢাকাটাইমস/৯জুন/এসকেএস