বঙ্গবন্ধু-কন্যার কারামুক্তিতেই লেখা ছিল আমাদের সৌভাগ্যলিপি

ড. মিল্টন বিশ্বাস
| আপডেট : ১১ জুন ২০২১, ১২:০৬ | প্রকাশিত : ১১ জুন ২০২১, ১১:৪৩

২০০৮ সালের ১১ জুন রাজবন্দি শেখ হাসিনার কারামুক্তি এদেশের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস কারাভোগের পর এদিন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার সাবজেলের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হন তিনি। এর আগে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে সেনাসমর্থিত মেয়াদোত্তীর্ণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেছিল।

২০০৭ সালে বিদেশ সফররত শেখ হাসিনাকে ১১ জানুয়ারির পর তাঁর দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। পরে মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি করা হলেও শেখ হাসিনার ২০০৭ সালের ৭ মে আমেরিকা থেকে প্রত্যাবর্তন ছিল আমাদের জন্য মঙ্গলকর।

তাঁকে রাজবন্দি করার পর সে সময় গণমানুষ তাঁর অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিল; দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার চক্রান্ত স্পষ্ট হয়েছিল। তাঁর সাবজেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেফতারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারজনের মৃত্যুবরণ, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের উৎকণ্ঠা আপামর জনগোষ্ঠীকে বিহ্বল ও বিক্ষুব্ধ করে তোলে। কারণ সে সময় আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা; দেশ ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত; বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সত্যকথা উচ্চারণে বড় বেশি সপ্রতিভ। আসলে ২০০৭ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক নাটকীয় ঘটনার জন্ম হয়েছে। সে সময় ‘দুদকে’র দৌড়ঝাপ, ‘মাইনাস টু’র কুশীলবদের উচ্চস্বর ও দাম্ভিকতা, বিচারকদের অসহায়ত্ব আর শেখ হাসিনার জন্য জনগণের বেদনাবোধ অন্যান্য দেশের মানুষকে আলোড়িত করেছিল।

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাঁকে বন্দি করে সংসদ ভবনের একটি বাড়িকে সাবজেলে পরিণত করা হয়। ওই সাবজেলের ভবনটি ছিল অত্যন্ত ময়লা ও নোংরা। পুরোনো গদি ছেঁড়া কাপড়-চোপড়, পুরোনো কাগজপত্র সব ছড়ানো। খাটখানা ব্যবহারের উপযুক্ত ছিল না। খাবার আসত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। মাঝে মাঝে খাবার আসতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতো। আর খাবারের মেনুও সস্তা জিনিসে ঠাসা ছিল। দুঃখের দিনে কষ্টের মাঝে পড়ে তিনি জাতির পিতার কথা স্মরণ করতেন। কারণ নিঃসঙ্গ কারাগারে তাঁর একমাত্র সঙ্গী ছিল স্মৃতি। অনেক কথাই তাঁর মনে পড়ত।

বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তাঁকে জেলখানায় সেলের ভেতরে রাখা হতো। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন আর দিবসরজনী কষ্ট সহ্য করে গেছেন। ১৯৭১ সালের বন্দি করে তাঁকে পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী জেলে নেয়া হয় যেখানে গ্রীষ্মকালে যেমন গরম, তেমন শীতের সময় শীত। রুটি ডাল ছাড়া কিছুই পেতেন না খেতে। অথচ ওই খাবার তিনি কখনোই পছন্দ করতেন না। তারপরও তাঁর মুখ থেকে কোনো দিন কোনো কষ্টের কথা কেউ শোনেননি। নিজের কষ্টের কথা তিনি সবসময় চেপেই রাখতেন। শেখ হাসিনাও সে রকম একজন রাজনীতিবিদ যিনি অপরের দুঃখে সবসময় কাতর হন।

সাবজেলের ওই বাড়ির উত্তর দিকের জানালা দিয়ে গণভবন দেখা যেত। কষ্টের মধ্যেই কারাগারে জানালায় সকাল-বিকাল দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে গণভবন দেখতেন যেখানে তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল অবধি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অবস্থান করেছিলেন। সবুজ মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় জনগণের চলাফেরা অবলোকন করতেন। ইচ্ছে হলেই বের হতে পারতেন না। কারণ তিনি তো বন্দি, দোতলায় একদম একা। বাইরে বের হওয়ার স্বাধীনতা নেই। কিন্তু তাঁর মনটা স্বাধীন ছিল, মনের কল্পনায়ই তিনি সবুজ মাঠ পেরিয়ে চলে যেতেন স্বপ্নরাজ্যে। ওই বাড়িটার চারিদিকে অনেক গাছ ছিল। সেই প্রকৃতির প্রাণময়তা তাঁকে তৃপ্তি দিত। মানসিক চাপ আর দেশ ও জনতার চিন্তার মাঝে স্বস্তি খুঁজে নিতেন।

২০০৭ সালে সংসদ ভবনের অন্যান্য বাড়িতে স্পেশাল কোর্ট বসানো হয়েছিল। তারপর একটার পর একটা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে শেখ হাসিনাকে। সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আবিষ্কার হলো সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ তিনি। তাই প্রথমে দেশের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সফল হয়নি। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে বিনা ওয়ারেন্টে টেনেহিচড়ে কোর্টে নিয়ে গিয়ে তারপর সাবজেলে ১১ মাস বন্দি করে রাখে। সম্পূর্ণ একাকী নিঃসঙ্গ বন্দিখানায় ছিলেন তিনি।

তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর বিচারের নামে প্রহসন চলে। তখন বিচারকরা তাদের বিবেক, চিন্তা, জ্ঞান ও বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে বিচার করতে পারেননি। উচ্চ আদালতে শপথ মোতাবেক বিচারকরা কাজও করেননি। বিচারকদের ওপর গোয়েন্দাদের চাপ অব্যাহতভাবে ছিল।এ জন্য তাঁকে জামিন দিতে নিষেধ করা হয়েছিল। উপরের নির্দেশে মামলার রায় হতো তখন।

সরকার প্রথমে চাঁদাবাজির মামলা দেয় তিন কোটি টাকার। যারা চাপে পড়ে মামলা করেছিল তারা ভালো করেই জানত তাদের কাছে শেখ হাসিনা কোনোদিন চাঁদা চাননি। ওদের তিনি চেনেনও না। তিনি তাঁর জীবনে কোনোদিন কারও কাছে কোনো টাকা চাননি। অথচ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে যাতে অংশ নিতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করার জন্যই যাকে খুশি তাকে দিয়েই যা খুশি তা বলানো হতো। একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল সে সময়ের প্রশাসন। কারণ তারা জানত নির্বাচন হলে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। তারা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। শেখ হাসিনার এসব ভাবনা বাস্তব হয়ে উঠেছিল ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয় লাভের মধ্য দিয়ে।

৩.

শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসকদের দ্বারা মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও কারা-যন্ত্রণার শিকার হয়েছিলেন দুর্ভাগ্যবশত। কারণ স্বাধীন দেশে পাকিস্তানের মতো নিপীড়ক শাসক থাকার কথা ছিল না, দেশও গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হচ্ছিল। অথচ দেশ-বিদেশে টিকে থাকা বঙ্গবন্ধুবিরোধীরা তখনও সক্রিয়। তাছাড়া শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের একাধিকবার চেষ্টা চলেছে ১৯৮১ সালের ১৭ মে’র পর থেকেই যা ২০২০ পর্যন্ত ২১ বার বলে তথ্যপ্রমাণ সাক্ষ্য দেয়। আগেই বলেছি, সাবজেলে থাকার সময় স্লো পয়জনিংয়ে তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল চাঁদাবাজির। অথচ ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতাকালে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হলেও কখনও চাঁদাবাজির মামলা করা হয়নি। এ জন্য শেখ হাসিনার মনে হয়েছে, মামলাবাজ জোট সরকার থেকেও বড় আবিষ্কারক ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার জন্য তিনি আন্দোলন করেছিলেন। আটষট্টি জন মানুষ জীবন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনীর হাতে। সেই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে।

জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করাও শেখ হাসিনার মূল টার্গেট ছিল। নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর ভাষায়- ‘আন্দোলন করে দাবি পূরণ করলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্গঠন করলাম। যেই দ্রুত নির্বাচনের কথা বললাম, সেই আমি চাঁদাবাজ হয়ে গেলাম, দুর্নীতিবাজ হয়ে গেলাম। আমার স্থান হলো কারাগারে। পাঁচটি বছর চারদলীয় জোট তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে আমার ও আমার পরিবারের দুর্নীতির কোনো কিছু পায় কিনা, পায় নাই। পেয়েছে ফখরুদ্দীন সরকার।’

দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ শেখ হাসিনা জেলে থাকার কারণে তাঁর সন্তান পুতুল-জয়ের পাশে সব সময় থাকতে পারেননি। এই বেদনা তিনি তুলে ধরেছেন নিজের লেখায়। রাজনীতির জন্য পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা বঙ্গবন্ধুর লেখনীতেও আছে। অনুরূপভাবে একজন বন্দি মা কতটা অসহায়, তার বর্ণনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা ২০০৭ সালের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। তার একমাত্র কন্যা পুতুল মা হবেন; থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মা হিসেবে মেয়ের কাছে থাকাটা খুব দরকার। যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেও যেতে দেয়া হয়নি। সেই সময়ের প্রশাসন আটকে দিয়েছিল তাঁর বিদেশ ভ্রমণ।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা্ লিখেছেন, ‘আমি তো মা- আমার মেয়ের জন্য মনটা ভীষণ খারাপ। এখনই মাঝে মাঝে একটা ব্যথা হয়। বারবার ফোনে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, কখন আসবা?’ আমি কী জবাব দেব? সরাসরি বলতে পারছি না আমি একরকম বন্দী জীবনযাপন করছি, কাউকে আসতেও দেয় না। আমাকে যেতে দেবে না বর্তমান সরকার। আর তো মাত্র কদিন। যেকেনো সময়েই ওকে হাসপাতালে যেতে হবে। ব্যথায় যখন কষ্ট পাবে মা হয়ে পাশে থাকতে পারবো না। ‘মা’ ‘মা’ বলে যখন ডাকবে, মাকে তো পাবে না। যে কষ্ট ১৯৭১ সালে আমি পেয়েছিলাম আমার মেয়ে কেন সেই কষ্ট পাবে? আমরা না স্বাধীন দেশে বাস করছি? ‘মা পুতুল, তোমার মা তোমার কাছে যেতে পারল না, মা। মার এই অক্ষমতা ক্ষমা করিস, মা।’ আমি জানতে চাই আমার কী অপরাধ যে মা হয়ে আমার মেয়ের পাশে থাকতে পারব না, আমরা কি তবে সেই ১৯৭১ সালেই আছি?’

‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ গ্রন্থে এভাবেই তিনি নিজেকে মেলে ধরেছেন কারান্তরালে যাপিত জীবনযাপন করার মুহূর্তে। তিনি ওই গ্রন্থে তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের চুলচেরা ব্যবচ্ছেদ করেছেন। সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপে চাঁদাবাজির মামলাগুলো কীভাবে করা হয়েছিল তাও তিনি জানতেন। গণতন্ত্রকে সুসংহত করা এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টাকে চিরতরে বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল যারা, তারা গোপনে ষড়যন্ত্র করে মানুষকে সামরিক শাসন উপহার দিতে চেয়েছিল। ২০০৭ সালে প্রথমে সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল ঠিকই কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেয়।

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে যে দুই বছর পর নির্বাচন হবে। সাধারণ মানুষ নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে। অথচ তখন নতুন নতুন দল গঠন করা হচ্ছে। ‘মাইনাস টু’ অনুসারে তৃতীয় শক্তির উত্থান প্রত্যাশা করছে শাসকগোষ্ঠী। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের সুদখোর, কালোটাকার মালিকরা টাকা সাদা করে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছে। অন্যদিকে ‘দুদক’কে দিয়ে রাজনীতিবিদদের জনগণের কাছে বিতর্কিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার, একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে সিনিয়র রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নয়টি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ছয়টি মোট ১৫টি মামলা করা হয়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এবং তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে ‘দুদক’কে ব্যবহার করে। আইনি প্রক্রিয়ায় সব মামলার পরিসমাপ্তি ঘটে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো উদঘাটিত হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মামলাগুলো করা হয়েছিল। এ জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিধিমালার অসংগতি দূর করতে তা সংশোধনেরও নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

৪. ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হওয়ার সময় শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক একটি চিঠি লেখেন। চিঠিটি এ রকম- ‘প্রিয় দেশবাসী! আমার ছালাম নিবেন। আমাকে সরকার গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনো অন্যায় করিনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও আপনারা দেশবাসী আপনাদের ওপর আমার ভরসা। আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন কখনও মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথানত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সাথে, আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যাহাই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা। ১৬.০৭.২০০৭।’

চিঠিতে অভিব্যক্ত শেখ হাসিনার সাহসী ও প্রাজ্ঞ কথাগুলো তখনকার নেতাকর্মীরা অনুসরণ করেছিলেন। গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সারাজীবন সংগ্রাম করা একজন কর্মঠ নেতার জন্যই অন্যেরা ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল। আর জনগণের এই ত্যাগের কারণেই ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্ত হন। তাঁর সৎ নেতৃত্বের কারণেই নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আজ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।আসলে, তার কারামুক্তির মধ্যেই নিহিত ছিল আমাদের সৌভাগ্যলিপি। অতীতের জেল-জুলুম, হত্যার প্রচেষ্টা এবং হুমকি আর বর্তমানের অপপ্রচারের মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বারগতিতেএগিয়ে যাচ্ছে।ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি মিলেছে জাতিসংঘের। করোনাকবলিত হয়েও শিগগিরই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে- এটা নিশ্চিত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মহামারিসৃষ্ট সব বিপর্যয় থেকে উঠে দাঁড়াতে হবে- তাঁর কারামুক্তি দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক: কবি, কলাম লেখক; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :