কক্সবাজারে সাংসদ জাফরকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি

কক্সবাজার প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ জুন ২০২১, ১২:৫৫ | প্রকাশিত : ১১ জুন ২০২১, ১২:৫৩

কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ জাফর আলমকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সরওয়ার আলমকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

গত ৮ জুন চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী ও চকরিয়া পৌরসভার নৌকার মনোনীত মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরীর উপর হামলা ও দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গের কারণে জাফর আলমকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য দেন।

এদিকে এমপি জাফরকে অব্যাহতির খবরে চকরিয়া-পেকুয়ায় সড়ক অবরোধ করেছে তার কর্মী সমর্থকরা। সেখানে প্রতিবাদ সভায় এমপি জাফর আলম বলেন, কোন আইনে আমাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে আমি জবাব চাই। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান নমিনেশন বাণিজ্য করে এসব অপকর্ম করতেছে।’

এসময় তিনি তার কর্মী সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

জানা গেছে, এর আগে গত মঙ্গলবার জেলা আ.লীগ চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলামকে বহিষ্কার করেছে। এ ঘটনার জের ধরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। যেখানে একপক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাংসদ জাফর আলম।

গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার চিংড়ি চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে সাংসদ ধাক্কাধাক্কিতে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাহেদুল ইসলামের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় আঘাত পেয়েছেন সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেফায়েত সিকদার।

জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরোধিতা করা ও নির্বাচনী সফরের সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সভায় উপস্থিত না হওয়ার অভিযোগ উঠে। এজন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় জাহেদুল ইসলামকে। একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোসলেহ উদ্দিন মানিককে।

অন্যদিকে, খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িলে পড়লে লিটুর সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার রাতে পৌরসভা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শেষে পৌর ভবনের পাশে চিংড়ি চত্বর এলাকায় বসেন চকরিয়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী, যুবলীগের নেতা রেফায়েত সিকদারসহ ৪০-৫০ জন নেতাকর্মী। এসময় বেতুয়া বাজার এলাকায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জানাজা শেষে চিংড়ি চত্বর এলাকা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সাংসদ জাফর আলম।

ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখে প্লাস্টিকের লাঠি হাতে করে গাড়ি থেকে নামেন সাংসদ। এসময় কয়েকজন কর্মীসমর্থককে পিটুনি দেন তিনি। ওই সময় চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি জাহেদুল ইসলামও সাংসদের গাড়ি থেকে নেমে কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করেন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মেয়র আলমগীর চৌধুরী সাংসদকে গাড়িতে তুলে দিলে সাংসদ বাড়ি ফিরে যান।

তবে খবর ছড়িয়ে পড়লে মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীর ওপর প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করেছে।

সাংসদের এমন আচরণ সম্পর্কে আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘সাংসদের ভাতিজা জিয়াবুল হক ২১ জুন অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে মেয়র পদে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। তা ছাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া জাহেদুল ইসলাম সাংসদের অনুসারী। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ও জাহেদুলকে অব্যাহতির খবরে সাংসদ এমন আচরণ করেছেন।’

তবে এ বিষয়ে সাংসদ জাফর আলম বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানের জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন ছেলে আমার গাড়ির গতিরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে। এমন সময় আমি প্লাস্টিকের একটি লাঠি হাতে গাড়ি থেকে বের হয়ে এক ছেলেকে আঘাত করতেই অন্যান্য ছেলেরা পালিয়ে যায়। এসময় মেয়র আলমগীর এসে আমার পায়ে ধরে বলে, ছেলেরা ভুল করেছে। মাফ করে দেন। তখন আমি গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে আসি। এখানে কাউকে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেনি। এসব অবাস্তব ও অবান্তর কথা।’

জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীর পক্ষে সড়ক বিভাগের ডাক বাংলোতে নির্বাচনী সভা করায় আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এখন আবার জেলা আওয়ামী লীগ বলছে, আমি নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করছি। এটা একটা হাস্যকর কথা।,

তিনি আরও বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ অব্যাহতি দেওয়া বিষয়ে আমাকে এখন পর্যন্ত জানায়নি বা অব্যাহতি দেওয়ার আগে শোকজ নোটিশও দেয়নি। আমি অব্যাহতির ব্যাপারটি নিয়ে স্পষ্ট নই।’

(ঢাকাটাইমস/১১জুন/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :