জুমার নামাজের সূচনা যেভাবে

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১১ জুন ২০২১, ১৩:১৫

জুমার নামাজ মুসলমানদরে জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহের শুক্রবার এই নামাজ পড়ার বিধান আল্লাহ্ তাআলা তার বান্দাদের জন্য দিয়েছেন। শুক্রবার সকাল থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা প্রস্তুতি নিতে থাকেন জুমার নামাজের। এটা মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক মিলনমেলাও বটে। অন্যান্য কাজ-কর্ম বন্ধ রেখে এই মিলনমেলায় উপস্থিত হয়ে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের নির্দেশ করেছেন।

জুমার নামাজের সূচনা

রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।

হিজরতের পরে জুমার নামাজ ফরজ হওয়ার আগে নবুওয়তের দ্বাদশ বর্ষে মদিনায় নাকীউল খাজিমাতে হজরত আসআদ বিন যুরারাহ (রা.)-এর ইমামতিতে সম্মিলিতভাবে শুক্রবারে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে সেটা ছিল নফল নামাজ।

এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইবনে সিরীন থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমনের পর এবং জুমআর নামাজ ফরজ হওয়ার আগে একবার মদিনার আনসারগণ একত্রিত হয়ে আলোচনা করলেন যে, ইয়াহুদিদের জন্য সপ্তাহে একটা দিন নির্দিষ্ট আছে, যে দিনে তারা সকলে একত্র হয়।

আর নাসারাদেরও সপ্তাহে সবার একত্রিত হওয়ার জন্য একদিন নির্ধারিত আছে। সুতরাং আমাদের জন্য সপ্তাহে একটা দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যে দিনে আমরা সবাই সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব, নামাজ আদায় করব।

অতপর তারা আলোচনাকালে বললেন, শনিবার ইহুদিদের আর রোববার নাসাদের জন্য নির্ধারিত। অবশেষে তাঁরা ‘ইয়াওমুল আরুবা’ (শুক্রবার)-কে গ্রহণ করলেন এবং তারাই এদিনকে ‘জুমআর দিন’ নামকরণ করলেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, সীরাতুল মুস্তাফা, তিরমিজি)

তবে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুবা নামক স্থান থেকে মদিনায় পৌঁছার পথে বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় সবাইকে নিয়ে যে জুমআ আদায় করেন। এটিকে ইসলামের প্রথম জুমআ ধরা হয়। আর সেদিন থেকেই মুমিন মুসলমানদের জুমআ আদায় শুরু হয়। জুমআ পড়ার নির্দেশ

হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ফরজ ইবাদত হিসেবে জুমআ পড়ার নির্দেশ আসে পবিত্র নগরী মক্কায়। কিন্তু সে সময় পরিস্থিতির কারণে জুমআ আদায় করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ সম্পর্কিত একাধিক তথ্য ও বর্ণনা হাদিসে পাকে এভাবে ওঠে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবু মাসউদ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বর্ণনা থেকে জানা যায়, হিজরতের কিছুদিন আগে মক্কা নগরীতে রাসুলুল্লাহ (সা:)এর ওপর জুমআর নামাজ পড়ার বিধান নাজিল হয়। কিন্তু সে সময় তিনি এ নির্দেশের ওপর আমল করতে পারতেন না। কারণ মক্কায় সামষ্টিক কোনো ইবাদাত করা সম্ভব ছিল না। তাই যেসব সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা)এর আগে মদিনায় হিজরত করেছিলেন, তিনি তাদের নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন যে, তারা যেন সেখানে জুমআ প্রতিষ্ঠা করেন। অতএব প্রথম দিকে হিজরতকারীদের নেতা হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের ১২ জন লোক নিয়ে মদিনায় প্রথম জুমআর নামাজ আদায় করেন। (তাবারানি, দারাকুতনি)

হজরত কাব ইবনে মালেক ও ইবনে সিরিনের বর্ণনা মতে, তারও আগে আনসারগণ নিজ থেকেই (বিশ্বনবির মদিনার পৌছার আগে) সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তারা সবাই মিলে সপ্তাহে একদিন সামষ্টিক ইবাদাত করবেন। এ উদ্দেশ্যে তারা ইয়াহুদিদের শনিবার ও খ্রিস্টানদের রোববার বাদ দিয়ে জুমআর দিনকে মনোনীত করেছিলেন এবং বনি বায়দা অঞ্চলে হজরত আসআদ ইবনে জুরারাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রথম জুমআ পড়েছিলেন। এতে ৪০ জন ব্যক্তি উপস্থিত হয়েছিলেন।(মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, বায়হাকি)

এ থেকে জানায় ইসলামি জনতার আবেগ অনুভূতি তখন এমন একটি সাপ্তাহিক ইবাদাত-বন্দেগির দিন থাকার প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করেছিল। উপরন্তু বিশ্বনবি (সা:) হিজরত করার পর সর্বপ্রথম যে কাজগুলো করেন, জুমআ প্রতিষ্ঠা ছিল তার অন্যতম।

জুমার নামাজের গুরুত্ব

শুক্রবারের দিন জোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেবেন তাঁর খুতবায়।

হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালক বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি-এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা ফরজ। (আবু দাউদ : ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম : ১০৬২ , আস্-সুনানুল কাবীর : ৫৫৮৭)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না। (তাফসিরে মাজহারি, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ২৮৩)।

(ঢাকাটাইমস/১১জুন/কেএমএস/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :