ন্যাশনাল হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

প্রকাশ | ১২ জুন ২০২১, ০৯:০৪ | আপডেট: ১২ জুন ২০২১, ০৯:০৬

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশের সকল জেলার খুদে প্রোগ্রামারদের অংশগ্রহণে আজ অনুষ্ঠিত হলো ন্যাশনাল হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা (এনএইচএসপিসি) ২০২১ এর জাতীয় পর্ব। 

‘জানুক সবাই দেখাও তুমি’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রোগ্রামিং সংস্কৃতি চালু করার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে অনলাইনেই আয়োজিত হয় এ বছরের আয়োজন।

সারা দেশের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনলাইন প্রস্তুতি প্রতিযোগিতা,অনলাইন মহড়া প্রতিযোগিতা ও অনলাইন ন্যাশনাল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ন্যাশনাল প্রতিযোগিতায় দেশের সকল জেলা এবং ৪৪৪ উপজেলা থেকে ১১৬৯৩ জন শিক্ষার্থীরা চার ঘণ্টাব্যাপী প্রোগ্রামিং এবং আধাঘন্টাব্যাপী কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। যাদের মধ্যে ৩০৯৫ জন শিক্ষার্থীই মেয়ে। 

ন্যাশনাল প্রতিযোগিতা শেষে আজ ১১ জুন ২০২১ শুক্রবার বিকালে অনলাইনের মাধ্যমে এ প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা এবং সমাপনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

এনএইচএসপিসি ২০২১ এ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার জুনিয়র ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছে যথাক্রমে চ্যাম্পিয়ন দেবজ্যোতি দাশ সৌম্য ( জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিলেট)। প্রথম রানার আপ -কাজী নাদিদ হোসেইন (খুলনা জিলা স্কুল, খুলনা) এবং দ্বিতীয় রানার আপ শ্রেয়াস লাবিব অরিয়ন (এস.এফ.এক্স গ্রিনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা)। 

সিনিয়র ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছেন যথাক্রমে চ্যাম্পিয়ন যারিফ রহমান (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ষ্কুল, রাজশাহী)। প্রথম রানার আপ মামনুন সিয়াম (চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম)এবং দ্বিতীয় রানার আপ মাো. নাফিস উল হক সিফাত (হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্রগ্রাম)। 

এবং কুইজ প্রতিযোগিতার  জুনিয়র ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছেন যথাক্রমে চ্যাম্পিয়ন  মাহির তাজওয়ার (সেন্ট যোসেফস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়,ঢাকা )। প্রথম রানার আপ নিতীশ সরকার সোম  (লৌহজং মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মুন্সিগঞ্জ) এবং দ্বিতীয় রানার আপ সামিরা তাসনিম (সরকারি ইকবাল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা)।

সিনিয়র ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছেন যথাক্রমে চ্যাম্পিয়ন নাহিয়ান ইয়াজদান রাহমান (সানবিমস, ঢাকা)। প্রথম রানার আপ ধ্রুব মণ্ডল (বরিশাল জেলা স্কুল, বরিশাল) এবং  দ্বিতীয় রানার আপ শ্রেয়া চক্রবর্তী (মুমিনুন্নিসা সরকার মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ)। 

বিজয়ীদের মধ্য থেকে প্রোগ্রামিং এর দুই ক্যাটাগরির সেরা তিনজনকে ল্যাপটপ এবং কুইজে দুই ক্যাটাগরির সেরা তিনজনকে স্মার্টফোন উপহার দেয়া হবে। 

সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন,আমরা শিশু-কিশোরদের মেধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আমদের দেশের মাটি থেকে স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণ করতে পারব। এমনকি ২০৪১ সালের লক্ষ্য পূরণ করতে পারব। ডিজিটাল বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আমাদের দেশের তরুণদের তৈরি করতে আবশ্যিকভাবে প্রোগ্রামিং শেখাতে হবে এবং তাদেরকে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শেখাতে হবে। বর্তমান সরকার ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আইসিটি বিষয়কে আবশ্যিক করেছে।এর ফলে আমাদের যে শিক্ষার্থীরা আইসিটি পড়ে এসেছে,তারা আইসিটি বিষয়ে উদ্যোক্তা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করছে। 

তিনি বলেন, বুয়েট থেকে ভাষাগুরু নামের ভাষা শেখার সফটওয়্যারে নয়টা ভাষা ব্যবহার করা যায়। কিন্তু শুধু প্রযুক্তির ভাষা শিখলে আমরা সকল ভাষায় যোগাযোগ করতে পারব। প্রাইমারি থেকে প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্য ২০২২ সালে যে বই শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে সেখানে প্রোগ্রামিংকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে।সারা দেশে স্থাপিত ৮ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের সাহায্যেও শহরের পাশাপাশি গ্রামের শিক্ষার্থীরাও এনএইচএসপিসির মতো আয়োজনে যুক্ত থাকতে পারবে।

এছাড়া ই-শিক্ষা ডট নেটে শিক্ষার্থীরা নিজে নিজে প্রোগ্রামিং শিখতে পারে। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। 

এর পাশাপাশি আগামীতে একইভাবে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে বাংলাদেশে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করার কথাও বলেন। 

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.মুহম্মদ জাফর ইকবাল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন,আমি যদি কোন স্বপ্ন দেখি,সেটা একসময় সত্যি হয়। তাই বেশি বেশি স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখার পরপর সেটা কেউ না কেউ করে ফেলে। আমার স্বপ্ন হল বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থী যেভাবে বাংলা,ইংরেজি,গণিত,বিজ্ঞান পড়তে ও লিখতে পারে,একইভাবে সবাই প্রোগ্রামিং করতে পারবে। ভালো প্রোগ্রামিং শিখতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু সবাই কিছু না কিছু প্রোগ্রামিং শিখতে পারার স্বপ্ন দেখি। তাই এটি প্রাইমারি থেকে শুরু করতে হবে।একই সঙ্গে আমার স্বপ্ন হলো,একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে বাংলাদেশে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। 

অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এনএইচএসপিসি শুরুর কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন,ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের নিজেদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং প্রযুক্তি বিষয়ক সমস্যা সমাধানে বাহিরের দেশের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের দেশের প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি দ্বারাই সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে,তাহলেই আমরা প্রকৃত ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।  আগামী বছর ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে যা এখন পর্যন্ত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অনুষ্ঠিত হয়নি। এবং এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশের তরুণ তরুণীরা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

তিনি করোনাকালীন সময়ে তরুণদের এগিয়ে যাওয়া, প্রোগ্রামিং ও প্রবলেম সলভিং  এ ভালো করার বিষয়টিকে আশীর্বাদ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক ( প্রশিক্ষণ ও উন্নায়ন) মোহাম্মদ এনামুল কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাইরে স্কুল কলেজের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে গতবছর কোভিড পরিস্থিতিতে আমরা কিছুটা বাধাগ্রস্থ হয়েছিলাম। তারপরেও এবছর প্রায় বারো হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষমতা দেখিয়েছি। 

সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) পার্থপ্রতিম দেব।

তিনি বলেন,পৃথিবী সব সময়ই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এসেছে। এখন আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ করোনা। আমরা যদিও পুরোপুরি করোনাকে হারাতে পারিনি তবে এর সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছি এবং সকল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছি। তবে এই মানিয়ে নিতে পেরেছি প্রযুক্তির কারনে এবং এর পেছনের কারিগর হিসেবে সব থেকে বড় অবদান রেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মাননীয় তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ । এরপর তিনি আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। 

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/এজেড)