আন্দোলনের আগে ‘গ্রুপিং’ দূর করতে বললেন ফখরুল

প্রকাশ | ১২ জুন ২০২১, ১৭:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
মির্জা ফখরুল (ফাইল ছবি)

সরকার পতনের আন্দোলন শুরুর আগে দ্রুত দলের মধ্যকার ‘বিভেদ-গ্রুপিং’ দূর করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সকল পর্যায়ের নেতাদের প্রতি এই আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কি করছে-করুক। জনগণের কাছে তাদের অন্যায় টিকে থাকতে পারবে না, তারা ভেসে যাবে। জনগণের উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) ভেসে যাবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।’

দলীয় বিভেদ দূর করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামীতে আমরা নিজেদের পুরোপুরি সংগঠিত করে ফেলি, নিজেদের ভুল বুঝাবুঝি, বিভেদগুলো দূর করি এবং একত্রিত হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণকে একত্রিত করে যে দানব আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছে তাকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে মধ্য দিয়ে যেন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারি সেজন্য কাজ করি।’

আলোচনা সভায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন শুরুর কথা বলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রীকে আগে মুক্ত করতে হবে। তাছাড়া এখানে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হবে না। দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন দিয়েই আমরা শুরু করতে হবে আমাদের গণতন্ত্রের মুক্তির আন্দোলন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবকে আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারি সেই লক্ষ্যে আমাদের অতিদ্রুত এগুতে হবে।’

বর্তমান অবস্থাকে সংকটময় অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবস্থার পরিবর্তন আমাদেরকেই করতে হবে। অন্য কেউ এসে আমাদের করে দিয়ে যাবে না। বিএনপিকে দায়িত্ব নিতে হবে। বিএনপি হচ্ছে সেই দল যারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, বিএনপি হচ্ছে সেই দল যার প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন শহীদ জিয়াউর রহমান যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিএনপি হচ্ছে সেই দল যারা চেয়ারপারসন হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়েছিলেন। আজকে আবার যখন ক্রাইসিস, রাজনৈতিক সংকট, আমাদের সব কিছু নিয়ে চলে যাচ্ছে তখন আমাদেরকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে, আমাদেরকেই শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে।'

গাজীপুরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, গাজীপুর ফাইটার একটা জায়গা জেলা ও মহানগরে। আপনাদের অনেক বেশি সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা জিয়াউর রহমানের দল করি, বেগম খালেদা জিয়ার দল করি। যখন সংগঠন নিজেরা তৈরি করতে যাই, তখন গ্রুপিং-গ্রপিং। আমার লোক কে, আমার লোক কে- এটা খুঁজি। এটা খোঁজা যাবে না। আপনাকে জিয়াউর রহমানের লোক খুঁজতে হবে, বেগম খালেদা জিয়ার লোক খুঁজতে হবে। এটা যদি না করতে পারেন আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, আমাদের কোনো ভবিষ্যত নেই। ভবিষ্যত থাকবে তখনই যখন আপনি সবাইকে নিয়ে এক সাথে রাজপথে নামতে পারবেন, একসাথে সোচ্চার হতে পারবেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হচ্ছে ন্যায়সঙ্গত। এটা আমাদের ধর্মের মধ্যেও বলা আছে। আমাদের এক হতে হবে-এর কোনো বিকল্প নাই।'

অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা দলের মধ্যে নেতার সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি করতে পেরেছি, কর্মীর সংখ্যা সেই হারে বৃদ্ধি করতে পারি নাই। সেজন্য আজকে সবাইকে কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।’

নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সামনে আছেন আর বাকিরা আমরা কর্মী-এই কথা যদি ভাবতে পারি তাহলে দেশনেত্রী মুক্তি পাবে, তারেক রহমান দেশে ফেরতও আসবেন, জাতির নেতৃত্বও তিনি দেবেন। তার নেতৃত্ব অত্যন্ত অনিবার্য এই রাষ্ট্রের জন্য বিশেষ করে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য।”

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনি শ্লোগান দিয়েছেন- যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ। সেই শ্লোগান বুকে ধারণ করে আমরা নব্বইয়ের চেতনায় আরেকটি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে নেমে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করব ইনশাল্লাহ।’

নব্বইয়ে  যেমন বলেছিলাম, স্বৈরাচার এরশাদের পতন ছাড়া ঘরে ফিরবো না, আজকেও বলতে চাই, যখন আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন সেদিন থেকে আমার নেতার ওই শ্লোগান বুকে ধারণ করে আবারো রাজপথে দাঁড়াব। যতক্ষণ হাসিনার পতন না হবে, যতক্ষণ এই সরকারের পদত্যাগ না হবে, যতক্ষণ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দেবে ততক্ষণ রাজপথ থেকে আমরা সরে দাঁড়াব না।’

জেলা সভাপতি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল এবং নির্বাহী কমিটির ওমর ফারুক শাফিনের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন আবদুস সালাম আজাদ, সালাহ উদ্দিন সরকার, কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, সোহরাব উদ্দিন, মজিবুর রহমান, হুমায়ুন কবির খান, মীর হালিমুজ্জামান ননি, খন্দকার আজিজুর রহমান পেয়ারা, হুমায়ুন কবীর মাস্টার প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/১২জুন/বিইউ/এমআর