সাকিবের যত বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

প্রকাশ | ১২ জুন ২০২১, ১৯:৫৫

কৌশিক রায়, ঢাকাটাইমস

ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার। তাকে নিয়ে আগেও কম বিতর্ক হয়নি। ভক্তের মোবাইলফোন ছুড়ে ফেলা থেকে জুয়াড়ির সঙ্গে যোগাযোগ। মাঠের নৈপুণ্যের পাশাপাশি মাঠের বাইরের নানা কর্মকাণ্ড তাকে করেছে সমালোচিত। বিতর্কে পড়ে বারংবার ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি।

 

বলছিলাম সাকিব আল হাসানের কথা। শুক্রবার আবাহনী মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ারের এক সিদ্ধান্তে রাগে ক্ষোভে লাথি মেরে ননস্ট্রাইকের উইকেট ভেঙে ফেলেন সাকিব।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এদিনকার ম্যাচে বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে খেলা বন্ধ হলে আবারে চটে যান সাকিব। এবার দুই হাতে তিনটি স্ট্যাম্পই উপড়ে ফেলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এর জেরে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছেন। দিতে হচ্ছে পাঁচ লাখ জরিমানাও।

আগের নিষেধাজ্ঞা শেষ করে সম্প্রতি মাঠে ফিরেই নতুন এই বিতর্কের জন্ম দিলেন সাকিব। এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে চলছে তর্ক-কিতর্কও। এর আগে সাকিবের একাধিক কাণ্ড তাকে ফেলেছিল তীব্র সমালোচনায়।

ব্যাট উঁচিয়ে দর্শককে হুমকি

 

২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিতর্কে জড়ান সাকিব। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ব্যাট করছিলেন তিনি। কিন্তু সাইড স্ক্রিনের পাশে এক দর্শকের নড়াচড়া তার মনোযোগ বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল। হঠাৎ ক্রিজ ছেড়ে বাউন্ডারি লাইনে ছুটে যান সাকিব, ব্যাট উঁচিয়ে ওই দর্শককে হুমকি দেন তিনি।

 

ভক্তের মোবাইলফোন ছুঁড়ে ফেলা

দেখা করতে আসা এক ভক্তের মোবাইল ফোন ছুড়ে ফেলে সমালোচিত হন সাকিব। কলকাতার কালীপূজায় উপস্থিত হওয়ার পর জড়ান আরেক বিতর্কে। সামাজিক মাধ্যমে সাকিবকে নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়ে অনেকেই। এক পর্যায়ে ক্ষমা চেয়ে পার পান অল রাউন্ডার।

দর্শকের কলার ধরে বিতর্কিত সাকিব

২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস টি টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে এক দর্শক অটোগ্রাফ চান সাকিবের কাছে। সাকিব তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মনোক্ষুণ্ন দর্শক কটূক্তি করেন। তখন গ্যালারিতে গিয়ে ওই দর্শদের কলার চেপে ধরেন তিনি।

মাঠে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি

২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অফে ধরা পড়েন সাকিব। আউট নিয়ে ধারাভাষ্যকারের আলোচনার সময় প্যাভিলিয়নে বসা সাকিব টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েন। ক্যামেরা দেখেই অশ্লিল অঙ্গভঙ্গি করেন। এ ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয় তাকে।

স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় দর্শককে মারধর

২০১৪ সালে স্ত্রী শিশিরকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ এক দর্শককে পেটান সাকিব। ভারতের বিপক্ষে ওয়ান্ডে সিরিজি চলাকালে ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতি ছাড়া বিসিবির করিডোরে স্ত্রীর কাছে এসে এই কাণ্ড ঘটানোয় শাস্তিও পেতে হয় তাকে।

জাতীয় দল ছাড়ার হুমকি দিয়ে বিতর্কিত

বিসিবির কাছ থেকে লিখিত অনুমতি না নিয়ে ২০১৪ সালে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলতে দেশ ছাড়েন সাকিব। এ নিয়ে কোচ তাকে প্রশ্ন করলে জাতীয় দল ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। পরে বোর্ডের নির্দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফিরে পুরো ঘটনার দায় দেন ওই সময়কার কোচ হাথুরুসিংহের এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।

আম্পায়ারের সঙ্গে খারাপ আচরণ

২০১৫ সালের বিপিএলে সিলেট সুপার স্টার্সের বিপক্ষে ম্যাট কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন সাকিব ও অন্যান্য ফিল্ডাররা। আম্পায়ার তানভীর আহমেদ তাতে সাড়া না দিলে তার সঙ্গে অসদাচারণ করেন সাকিব। এ জন্য এক ম্যাচ তাকে নিষিদ্ধ করা হয়।

দর্শকের সঙ্গে তর্ক

২০১৮ সালে আমেরিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন সাকিব আল হাসান এক ভক্তের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ভিডিও ভাইরাল হলে নিজের ফেসবুকে এ নিয়ে ব্যাখ্যাও দেন তিনি।

 

ফিক্সিংয়ের ঘটনায় সমালোচিত

এই ঘটনা বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারকে ফেলে চরম বিপাকে। নিজে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত না হলেও ভারতীয় এক জুয়াড়ির তরফে ফিক্সিংয়ের অফার পেয়ে সেটা বিসিবি কিংবা আইসিসির কাছে না জানানোর অপরাধে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করতে হয়েছে সাকিব আল হাসানকে।

এসব বিতর্ক ছাড়াও ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, ফটোসেশনে অংশ না নেয়া এবং টেস্ট খেলতে না চাওয়াসহ আরও অনেক বিতর্কই রয়েছে নিপুন এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে। এত বিতর্কের পরও সাকিব আল হাসান এড়াতে না পারার মতোই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, স্বীকার করতেই হবে।

 

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/আরকে/ডিএম)