চাঁদপুরের ৩০ চরে ঝুঁকিপূর্ণ ট্রলার চলাচল

প্রকাশ | ১২ জুন ২০২১, ২০:১০

শওকত আলী, চাঁদপুর

চাঁদপুর শহর থেকে প্রতিদিন মেঘনা নদীর পশ্চিমের ৩০টি চরের হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা-মেঘনা নদী পাড়ি দিচ্ছেন। এসব এলাকার মাঝি ও চালকরা কোনো নিয়ম মেনে না চলায় মানুষ আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় নদী পারাপারে। সরকারিভাবে দেয়া লাইফ জ্যাকেট এবং বয়া ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও তারা উদাসীন।

চাঁদপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০টি চরাঞ্চলে শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রলার উত্তাল ঢেউ ও ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা নদীর পশ্চিমে পাড়ি দিচ্ছে। ট্রলারগুলোতে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও বয়া না থাকায় প্রতিনিয়তই থাকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। প্রায় সময়ই যাত্রীসহ মালবাহী ট্রলার মেঘনায় নিমজ্জিত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে নদীতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী আরো বাড়ানোর দাবি করেছেন জনপ্রতিনিধিসহ যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা সদর, মতলব উত্তর, সদরের হরিণা ফেরিঘাট ও হাইমচর উপজেলার বেশ কয়েকটি ঘাট থেকে প্রতিদিন নিয়মিত পদ্মা-মেঘনার পশ্চিম পাড়ে ট্রলারগুলো ছেড়ে যায়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এসব ট্রলারগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালসহ যাত্রী পারাপার হয়। এর মধ্যে শহরের পুরান বাজার থেকে ছেড়ে যায় শরীয়তপুর ফেরিঘাট, দক্ষিণ তারাবুনিয়া মোল্লার বাজার, উত্তর তারাবুনিয়া চেয়ারম্যান স্টেশন, রাজরাজেশ্বর ঘাট, বাঁশগাড়ী, মতলব উত্তরের জহিরাবাদ, চরবাঘা ইউনিয়ন, গৌরাঙ্গের বাজার, শরীয়তপুরের কাঁচিকাটা।
চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা ও রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিউল্লাহ প্রধান বলেন, বছরের সব সময়ই নদীর আচরণ বুঝে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। তবে নিরাপদ বাহন থাকলে ঝুঁকিটা কমে। তবে এসব ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট, বয়া ও ট্রলার চালকদের প্রশিক্ষণ খুবই প্রয়োজন। চরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী এ প্রতিবেদককে বলেন, চরাঞ্চলে চিকিৎসা, বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক সুবিধা না থাকার কারণে তাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে দিয়ে মেঘনা পাড়ি দিয়ে শহরে আসতে হয়। এখন নদীতে পানি বাড়ছে। বর্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে নদী ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। ট্রলারগুলোতে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও বয়া থাকা প্রয়োজন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর দেয়া হয়েছে। এগুলো অনেক মাঝি ট্রলারে রাখে আবার কেউ রাখে না।
তিনি বলেন, ‘আজকে (শুক্রবার) সন্ধ্যায় আমি নিজে পরিষদ থেকে আসার সময় ঝড়ের মুখে পড়েছি। আল্লাহর ইচ্ছায় বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। তবে এই সময়টাতে মেঘনায় ভ্রমণের জন্য ঘুরতে আসা ট্রলারগুলো বন্ধ রাখাসহ প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার।’
নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) কামরুজ্জামান  বলেন, ‘আমি ঈদের পর থেকে ভ্রমণের ট্রলারগুলো কিভাবে চলাচল করে তা পর্যবেক্ষণ করছি। নদী স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। আমাদের নৌ-পুলিশের সবগুলো ইউনিটকে এ সময়ের সতর্কতা বৃদ্ধি ও ট্রলার চালকদের সচেতন করার জন্য নির্দেশ দেয়া রয়েছে এবং আবার নতুন করে বলা হবে।’
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নদীর উত্তাল অবস্থা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিগত দুই বছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রলারগুলোতে লাইফ জ্যাকেট ও বয়া দেয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো আরো বৃদ্ধি করার জন্য। তবে এসব ট্রলার চলাচল ও সতর্কতা অবলম্বনে নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়াতে হবে। যেসব জেলেদের লাইফ জ্যাকেট ও বয়া দেয়া হয়েছে, সেগুলো তারা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে কোনো সমস্যায় পড়লে তখন রক্ষা পেতে সহায়তা পাওয়া যাবে।’
(ঢাকাটাইমস/১২জুন/কেএম)