কী হচ্ছে মাদারীপুরে! শাজাহান খান এমপি বনাম...

প্রকাশ | ১২ জুন ২০২১, ২১:৩০ | আপডেট: ১২ জুন ২০২১, ২২:৫২

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

মাদারীপুরের ঘটকচর এলাকা শনিবার দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের বিরাজমান দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। এর এক পক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান এবং তার অনুসারীরা। অপর পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা ও তার অনুসারীরা। দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে কেন্দুয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সোহরাব হোসেন সর্দারের মার্কেটে ভাঙচুর চালানো হয়।

অভিযোগ উঠেছে শাজাহান খানের অনুসারীরা এ ভাঙচুর চালিয়েছেন। হামলায় মার্কেটে অবস্থিত দুইটি ব্যাংকের শাখা, ৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্রায় ১৫টি মোটরসাইকেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশ, নারী ও শিশুসহ অন্তত আটজন আহত হন। ঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, গত ২৫ মে রাজৈর উপজেলার শান্তি নিকেতন কেন্দ্রে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে শাজাহান খানের বাবা তিনবারের সংসদ সদস্য মৌলভী আছমত আলী খানের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা নিয়ে কটূক্তি করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা। এ নিয়ে দুই পক্ষে বিরোধ চলে আসছিল। শাহাবুদ্দিন মোল্লার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের কলাবাড়ী এলাকায় পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করার চেষ্টা করেন। দুই পক্ষ হাতাহাতি ও সংঘর্ষে জড়ান। এসময় দুই গ্রুপের লোকজন উত্তেজিত হয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করলে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরই মাঝে শাজাহান খান গ্রুপের লোকজন কলাবাড়ী থেকে মাদারীপুর শহরে আসার পথে ঘটকচর এলাকায় ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও কেন্দুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সোহরাব হোসেন সর্দারের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ‘সর্দার মার্কেটে হামলা চালান। পরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের ছত্র ভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশ, নারী ও শিশুসহ অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত সোহরাব হোসেন সর্দার বলেন, ‘জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রুবেল খান, এমপি পুত্র আসিবুর রহমান খান ও কেন্দুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জয়নাল মাতুব্বরের লোকজন প্রায় শ’খানিক মোটরসাইকেল বহর নিয়ে আমার নিজস্ব মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এমন কোনো দোকানপাট নেই যে তারা ভাঙচুর করেনি। দুটি ব্যাংক, মসজিদ-মাদ্রাসা পর্যন্ত তারা রক্ষা করেনি। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করব। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আ.লীগের সাথে ভর দিয়ে আমাদের ক্ষতি করছে। আমি কঠোর বিচার দাবি করছি।’

অভিযোগের বিষয় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রুবেল খান বলেন, ‘স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত, তিনবারের সংসদ সদস্য মৌলভী আছমত আলী খানকে নিয়ে শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা যে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তারই প্রতিবাদে শনিবার আমাদের নির্ধারিত প্রতিবাদ সভা ছিল কলাবাড়ী। সেখানে শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লার লোকজন আমাদের সঙ্গে ইচ্ছে করে বিরোধে জড়িয়েছে। এতে আমাদের কিছুই করার নেই। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাও ঘটেছে।’

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ শাজাহান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার বাবাকে নিয়ে যে কথা বলেছেন, তা আমার ও মাদারীপুরবাসীর জন্য অপমানজনক। আমি রাজনৈতিকভাবে এলাকার জনগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এর প্রতিবাদ করে যাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে, ভাতিজাসহ আমার পরিবারের স্বজনেরা আজ তারই অংশ হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিতে কলাবাড়ি যান। সেখানে তাঁদের লক্ষ্য করে প্রথমে ঢিল ছোড়া হয়, এরপরই ঘটকচর এলাকায় আসার পর আবারও তাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। পরে সোহরাব সরদারের নেতৃত্বে হামলা চালানো হলে আমার ছেলে ও ভাতিজারা তা প্রতিরোধ করে। সেখানে তারা কোনো ভাঙচুর ও মারামারি করতে যায়নি।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহসানুর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘বিরাজমান দুই পক্ষের বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও যাওয়ার সময় কিছু বিক্ষুব্ধরা দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে। যা কয়েকটি সিসি টিভি দেখে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি।’

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/এলএ)