কেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন না সেই রিতা-মিতা?

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ জুন ২০২১, ১১:৫১
একজন চিকিৎসক আইনুন নাহার রিতা আর অন্যজন প্রকৌশলী নুরুননাহার মিতা। দীঘদিন ধরে রহস্যময় জীবনযাপনের কারণে তাদের বাড়িটি এলাকায় পরিচিতি পায় ভ‚তের বাড়ি হিসেবে। বছর ১৬ আগে মিরপুরের ওই‘ভৌতিক বাড়ি’ থেকে উদ্ধার করা হয় উচ্চশিক্ষিত দুই বোনকে। এরপর কত ঘটনার বিস্তার! এখন কেমন আছেন তারা? আদৌ কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল তারা এখন আছেন বড় বোনের তত্ত্বাবধানে। মানসিক অসুস্থতা নিয়েই বোনের বাসায় একটি রুমে তাদের বসবাস। তাদের দেখাশোনার জন্য আছেনএকজন নারী। সরকারি-বেসরকারিভাবে চিকিৎসা ও নানা সুযোগ করে দেওয়ার পরও কেন তারা ফিরলেন না স্বাভাবিক জীবনে? তাদের বাড়িটিরই বা কী অবস্থা?
রিতা-মিতাকে যখন ওই বাড়ি থকে উদ্ধার করা হয়, তখন তারা পুরোপুরি বিপর্যস্ত ছিলেন। সেটি ২০০৫ সালের ৭ জুলাইয়ের ঘটনা। প্রায় ১৬ ঘণ্টার চেষ্টায় মিরপুরের ওই ‘ভূতের বাড়ি’ থেকে দুই বোনকে উদ্ধার করেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান।এর আগে আট-নয় বছর তারা সমাজ-পরিবার থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন থেকে ওই বাড়িতে অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন।
উদ্ধারের পর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রিক বিভাগে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন তারা। ইউনিস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. মুহিত কামালের অধীনে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন প্রকৌশলী ও চিকিৎসক দুই বোন।সরকার রিতাকে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে এবং মিতাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।
কদিন ভালোভাবেই কাজ করেন রিতা-মিতা। এ সময় তাদের বাড়িটি সংস্কার করতে দেয়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন দুই বোন।
কিন্তু ২০১৩ সালে হঠাৎ লাপাত্তা। দিন, সপ্তাহ, মাস তাদের খোঁজ নেই। দুই মাস পর তাদের সন্ধান মেলে বগুড়ার আকবরিয়া হোটেলে। সেখান থেকে উদ্ধারের পর তাদের বড়বোন কামরুন্নাহার হেনার জিম্মায় দেয়া হয়। সেই থেকে তারা সেখানেই আছেন। মাঝে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাদের মানসিক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয় বলে পরিবারের তরফে জানা গেছে।
রিতা-মিতাদের মিরপুরের বাড়িটি দেখাশোনা করছেন বড় বোন কামরুন্নাহার হেনা। বাড়িটির কেয়ারটেকার হিসেবে আশিক রানা নামের এক ব্যক্তি নিয়োজিত আছেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি মাস দুয়েক আগে এখানে নতুন এসেছি। আমি তেমন কিছু বলতে পারবনা। স্যার (রিতা-মিতার বড় দুলাভাই) ও ম্যাডাম (বোন) এসে ভাড়া নিয়ে যান।’
বড়বোন কামরুন্নাহার হেনা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রিতা-মিতা বর্তমানে আমার ধানমন্ডির বাসায় আছে। সেখানে তাদের সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করেন একজন নারী। তারা সাধারণত ঘর থেকে বের হয় না।’
রিতা-মিতা সারাদিন নিজেদের ঘরেই থাকেন জানিয়ে কামরুন্নাহার হেনা বলেন, ‘সেখানে তারা নামাজ-কালাম, দোয়া-দরুদ পড়ে। এখনতো ওদের বয়স হয়েছে। আমার পিঠাপিঠি ছোট ওরা। আমার বয়স এখন ৬০ বছর।’
রিতা-মিতা কেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারলেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুন্নাহার হেনা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ওরা যখন চাকরিতে যোগ দিয়েছিল বা সুস্থ হয়ে বাইরে যেতে শুরু করেছিল, তখন কিছু লোক ওদের দেখলেই বলত ওইযে দেখো রিতা-মিতা যাচ্ছে। এসব কথা শুনে ওরা ঘাবড়ে যেত। মানসিকভাবে পীড়িত হতো। পরে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় তারা।’
রীতি-মিতার মানসিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে ঢাকাটাইমস ডা. মুহিত কামালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।
রিতা-মিতাকে চিকিৎসা করানো হতো জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কমিউনিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বিধান রঞ্জন পোদ্দারের সঙ্গে যোগাযোগকরলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ওদের দেখাশোনা করার লোক ছিল না বলেই এমনটা হয়েছে।’
রিতা-মিতা যে রোগে আক্রান্ত ছিল সেটি একেবারে ভালো হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই চিকিৎসক বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর অল্প কথায় দেওয়া সম্ভব নয়।
রিতা-মিতাকে প্রথম উদ্ধার করেছিলেন জাতীয় মানবাধিকারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এলিনা খান।রিতা-মিতা কেন সুস্থ হওয়ার পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় সাত বছর আমি তাদের দেখাশোনা করেছি। এরপর নানা ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত তাদের খোঁজ নেওয়া হয়নি। তারা সিজোফ্রেনিয়া রোগী। ওদের নিয়মতি ওষুধ খেতে হয়। নিয়মিত ওষুধ খেলে তারা ভালো থাকেন। আর ওষুধ খাওয়ায় অনিয়ম হলে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। আমার ধারণা পারিবারিকভাবে ওদের ঠিকমতো দেখাশোনা না করার কারণেই তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।’
(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :