আস্থাশীল নেতৃত্বে এখন পুঁজিবাজার

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২১, ১৮:৩৬ | আপডেট: ১৩ জুন ২০২১, ১৯:৩৭

মো. শাহ্‌ নেওয়াজ মজুমদার

আমাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রিজার্ভবৃদ্ধিতে  বিনিয়োগকারীদের একটি আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭.৫শতাংশ বলছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ। মাথাপিছুআয়বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে আমরা এশিয়ার অন্য দেশগুলো থেকে অনেকাংশে এগিয়ে। বর্তমান সরকারও শিল্পবান্ধব বাজেট ঘোষণা করে শেয়ারবাজারকে আস্থাশীলতার জায়গায় নিয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আস্থাশীল নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজার স্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিচ্ছে।

মূলত, দেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় বাজারে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও সরকার শিল্পবান্ধব নীতি অনুসরণ করায় ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের সঠিক নির্দেশনায় পুঁজিবাজারে গতিশীল ধারা বিরাজমান।

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল

শেয়ারবাজার উন্নয়নে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রনসংস্থা এ ধরনের একটি তহবিল গঠন করেছে। প্রাথমিকভাবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিতরণ না হওয়া লভ্যাংশ নিয়ে এ তহবিল গঠন করা হচ্ছে।বর্তমান বাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে প্রায় ২০হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের বিতরণ না হওয়া লভ্যাংশ রয়েছে, যার মধ্যে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকা, আর বোনাস লভ্যাংশের বাজারমূল্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।

বিনিয়োগকারীরা যাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সব তথ্য নির্ভুলভাবে উপস্থাপিতহয় সেজন্যবর্তমান সরকার ও কমিশন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নীতিমালার আওতায় নিয়ে এসেছে। ভুল তথ্য প্রদানকারী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানও শাস্তির আওতায়চলে এসেছে। এখানেই বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।

দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীল থাকায়বাজারেনিষ্ক্রিয় ছিলেন বড় বিনিয়োগকারীরা। বর্তমান বাজার স্থিতিশীলকরতে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব ও বাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাস্তবায়নের জন্য পলিসি পরিবর্তনের ফলে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে, তাতেও বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠার একটি বড় কারণ। এ ছাড়া বিএসইসি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন কোম্পানিসংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গুজবের জবাব দিচ্ছে, তাই বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন না।

বর্তমান কমিশনের কিছু ইতিবাছক পদক্ষেপ মার্কেটকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ এবং ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দ্রত স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ, আইনের কঠোর প্রয়োগ, জেড গ্রুপেরশেয়ারের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া, মার্জিন ঋণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।

সার্কুলার ট্রেড, ইনসাইডার ট্রেডিং ও মার্কেট ম্যানিপুলেশনকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে পুঁজিবাজারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জোর পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান কমিশন। তালিকাভুক্ত কোম্পানি কর্তৃক মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নিজের শেয়ার বিক্রির দিন শেষ। নতুন আইপিও আসার ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে যুগান্তকারী পদক্ষেপ- শুধু প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই বরাদ্দ পাবেন শেয়ার। দুর্বল কোম্পানি যাতে আইনের ফাঁক গলিয়ে মার্কেটে আসতে না পারে সেজন্য বিএসইসি রয়েছে কঠোর অবস্থানে।

আমাদের শেয়ারবাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলকরতে হলে বর্তমান বিনিয়োগকারীদের কার্যকর শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমাদের পুঁজিবাজারে অর্থনৈতিক জ্ঞানহীন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এজন্যই বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন বড়ভাই, গুজব ও ট্রেডারদের কথামতো বিনিয়োগে আগ্রহী হয় এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই বিনিয়োগকারীদের দক্ষতা ও কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধিও উপর জোর দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি উদ্যোগের প্রশিক্ষকদের নীতিমালার আওতায় আনতে হবে। বিনিয়োগের আগে প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতেকার্যকর ভূমিকারাখতে হবে।

ওয়ারেন বাফেট বলেছেন অন্যরা যখন অতি উৎসাহী হন শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে, তখন তিনি ভীত হন, আর অন্যরা যখন ভীতহন কেনার ক্ষেত্রে, তিনি সাহসী হন। এটাই হলোস্থায়ী বিনিয়োগের জন্য একটি মূলমন্ত্র।কিন্তুআমাদের বিনিয়োগকারীরা অতি উল্লম্ফনের সময় বিনিয়োগে আগ্রহী হন। শেয়ারবাজার কোনো যুক্তি মানেনা, আর কারো কথামতোও চলেনা, সেটা তার আপন গতিতে অর্থাৎ অর্থনীতির চাহিদা ও সরবরাহের তত্ত্বের ভিত্তিতে চলে। অন্যদিকে বাজারের বাইরের কিছু উপাদান বাজারকে প্রভাবিত করে; সেগুলো হলো সুদের হার, মুদ্রার বিনিময় হার, অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি, রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও মূল্যস্ফীতি।এসব সূচক মার্কেটকে প্রভাবিত করে।

বর্তমানে আমাদের অর্থনীতি সব সূচকেই ভালো অবস্থানে আছে। তাই মার্কেটের গতিশীলতা বেশি। সবকিছু ঠিক থাকলে মার্কেট অনেক দূর পর্যন্ত যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী,স্বচ্ছ ও গতিশীল করতে যাদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন, তাদের ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। বাজার যে বড় হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে, দেশি-বিদেশি সবাই বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার রোডশো করছে, কনসুলেটগুলোতে বিনিয়োগ সেল গঠিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, সব বিনিয়োগকারী যদি ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, ভালোভাবে কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করেন, তাদের লোকসান নিয়ে ভাবনার কারণ নেই। বাজারে শেয়ারদর উঠানামা করবে, এটাই স্বাভাবিক। ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারে যদি আপনার বিনিয়োগ থাকে ও ধরে রাখতে পারেন, তাহলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই।

সর্বোপরি বলতে চাই, পুঁজিবাজার হবে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি ও বিনিয়োগের মূল পুঁজিরজোগানদাতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অর্থায়নের মূল উৎস হবে পুঁজিবাজার। এতে করে নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এগিয়ে যাবে দেশ ও আমাদের পুঁজিবাজার।

লেখক: লেখক ও কলামিস্ট।