চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা: ৭ পুলিশকে বরখাস্তের নির্দেশ

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২১, ২০:৩২ | আপডেট: ১৩ জুন ২০২১, ২০:৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা নেয়া এবং শিশু উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্য এবং একজন সমাজসেবা অফিসারকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপশি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রবিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

যেসব পুলিশ সদস্যদের বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ওসি ছাড়াও দুইজন উপপরিদর্শক (এসআই) ছিলেন। দুই এসআই হলেন চার শিশুর ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এবং এসআই আবুল কালাম। ওসিসহ বাকি পাঁচজনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করতে বলা হয়েছে।

আদালতে শিশুদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম। আদালত থেকে বেরিয়ে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও জেলে পাঠানোর ঘটনায় হাইকোর্ট ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।

এগুলো হলো-

১. চার শিশুকে যে প্রক্রিয়ার গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং থানা হাজতে রাখা হয়েছে সেটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

২. চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা এবং বিচারাধীন জিআর মামলাটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

৩. বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং উপ-পরিদর্শক (এসআই) সহ যারা মামলা করেছেন তাদেরকে খুব শিগগিরই বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

৪. বাকেরগঞ্জ জেলার সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্বের অবহেলা ও শিশু আইন লঙ্ঘন করায় তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে বরখাস্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৫. বাকেরগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েতুল্লাহর জুডিশিয়াল ক্ষমতা প্রত্যাহার করে সিভিল জুরিসডিকশনে দায়িত্ব করার নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

৭. শিশু আইন অনুযায়ী পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য গাইডলাইন আকারে প্রকাশ করে প্রত্যেক থানায় সার্কুলেট করতে বলা হয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ৪ শিশুর বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট একটি স্যুয়োমুটো রুল জারি করে আদালত। সেই রুলের সঙ্গে সিসিবি ফাউন্ডেশন এবং ব্লস্ট ইন্টারভেনার হিসেবে পক্ষভুক্ত হয়। দীর্ঘ সাবমিশন উপস্থাপন করে আজকে শিশু আইনের ওপর শিশুদের অধিকার আদায়ে একটি যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করা হয়। উক্ত রায়ে হাইকোর্ট ডিভিশন ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে।

২০২০ সালের ১১ অক্টোবর বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণের মামলা স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এ বিষয়ে রুল জারি করেন আদালত।

এর তিন দিন আগে ৮ অক্টোবর রাতে ওই ৪ শিশুর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বরিশাল আদালতকে নির্দেশ দিয়ে রাতেই শিশুদের এসি মাইক্রোবাসে করে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই আদেশ অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরিশালের বিচারক চার শিশুকে জামিন দেন।

ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে আসামি করে গত বছরের ৬ অক্টোবর মামলাটি করা হয়। ওইদিনই চার শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৭ অক্টোবর তাদের যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ।

এ নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়। পরে বিষয়টি বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের নজরে এলে তাঁরা ৮ অক্টোবর রাতে ভার্চুয়ালি আদালত বসান।

ঢাকাটাইমস/১৩জুন/এআইএম/এমআর