পরীমনির অভিযোগ সত্য হলে কেমন সাজা খাটতে হবে আসামিদের?

আমিনুল ইসলাম মল্লিক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ জুন ২০২১, ১৪:০৯

ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার দায়ে নাসির আহমেদসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সোমবার দুপুরে সাভার মডেল থানায় মামলাটি করেন পরীমনি।

অভিযোগ অনুযায়ী আসামিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের সাজা হতে পারে এ মামলায়? এসব অপরাধ অহরহ ঘটেই যাচ্ছে, কিন্তু কেন? সামাজিক অবক্ষয় নাকি আইনের শাসনের দুর্বলতা এসব বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা হয় টাকাটাইমসের।

হত্যাচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে বলা হয়েছে দণ্ডবিধি ৩০৭ ধারায়।

এখানে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এইরূপ অভিপ্রায় বা অবগতি সহকারে এবং এইরূপ অবস্থায় কোনো কার্য-সম্পাদন করে যে যদি উক্ত কার্যের দ্বারা সে মৃত্যু ঘটাতো তাহলে সে খুনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হতো। সেই ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে, দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।

আর যদি উক্ত কার্যের সাহায্যে কোনো ব্যাক্তিকে আঘাত করা হয়, তাহলে অপরাধকারী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা ইতিপূর্বে উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিগণ কর্তৃক উদ্যোগ এই ধারার অধীনে অপরাধকারী ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাধীন থাকার ক্ষেত্রে আঘাত করা হলে তার মৃত্যুদণ্ড বিধান রাখা যাবে।

আর ধর্ষণ চেষ্টা নিয়ে বলা আছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ৯ (খ) ধারায়।

এখানে বলা হয়েছে কেউ যদি ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

এদিকে রবিবার রাতে পরীমনির অভিযোগ গ্রহণ করেনি থানা। যেটি পরীমনি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর আইনি প্রতিকার কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির ঢাকাটাইমসকে বলেন, যেকোনো অপরাধ সংঘটনের পর নিকটস্থ থানা মামলা নিতে বাধ্য। যদি না নেয় তাহলে একটি হলফনামা দিয়ে বাদিকে বলতে হবে যে, থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু মামলা নেয়নি। এই হলফনামাসহ তিনি কোর্টে মামলা করতে পারবেন। অন্যথায় তিনি হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করতে পারেন। এই মামলায় হাইকোর্ট মামলা নেয়ার আদেশ দিতে পারেন।

জানতে চাইলে হিউম্যান রাইডস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মনজিল মোরসেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা নেই। সামজিক অবক্ষয় ও প্রশাসিনক দায়িত্বের অবহেলার কারণে এসব অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এসব অপরাধ কমাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। সামাজিক অবক্ষয়ও এসব ঘটনার জন্য অনেকটা দায়ী। এসব ঘটনায় দ্রুত বিচার হওয়া উচিত। তা না হলে এরকম অপরাধ ঘটতেই থাকবে।

এর আগে ১৩ জুন রাতে ফেসবুকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের জীবন সংশয়ের কথা জানান ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়িকা পরীমনি। তিনি জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেছেন। নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি বলেন, ‘আমাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। চারদিন ধরে থানায় ঘুরেও কোনো মামলা করতে পারিনি। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’

অভিযুক্তের নাম সম্পর্কে পরীমনি বলেন, ‘তার নাম নাসির উদ্দিন আহমেদ। ঘটনার সময়ে তিনি নিজেকে বোট ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কাছের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে হুমকি দেন’।

রবিবার রাতে করা সংবাদ সম্মেলনে বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিলেন পরীমনি। তার চেহারায় ছিল অসুস্থতা ও আতঙ্কের ছাপ। চলে যাওয়ার আগে কাঁদতে কাঁদতে নায়িকা বলেন, ‘আমি আত্মহত্যা করার মেয়ে নই। আমি যদি মরে যাই, তাহলে আপনারা মনে করবেন আমাকে হত্যা করা হয়েছে।’

এ সময় পরীমনির সঙ্গে ছিলেন তার ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবির নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পরী আমাকে মা ডাকে, সেই জায়গা থেকে আমি আমার সন্তানের কষ্ট বুঝি। আমি এই ঘটনার বিচার চাই। আমি চাই পরীমনি আবার ঘুরে দাঁড়াক।’

এদিকে, পরীমনির দেয়া স্ট্যাটাস ও অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মীর সোহেল রানা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পরীমনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা তার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করব। তবে কেন তিনি আইজিপি স্যারের নাম উল্লেখ করেছেন তা আমি বুঝতে পারছি না।’

সোহেল রানা দাবি করেন, ‘আমরা নিশ্চিত, পরীমনি মোটেই আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আইজিপি স্যার সর্বদা নারী ও শিশুদের অধিকারের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল’।

এর আগে রবিবার রাত ৮টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লম্বা একটি স্ট্যাটাস দিয়ে পরীমনি জানান, তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এবং ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেন এবং বাঁচার আকুতি জানান।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/এআইএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :