নিষেধাজ্ঞায়ও সাগরে চলছে ‘মা মাছ’ শিকার

আব্দুল কাউয়ুম আরজু, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
 | প্রকাশিত : ১৪ জুন ২০২১, ১৪:৪২

মাছের প্রজনন মৌসুমে সাগরে মাছ ধরার সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরকন্যা কুয়াকাটা থেকে প্রতিদিনই কিছু জেলে মাছ ধরতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ইউসুফ মাঝি নামে স্থানীয় এক জেলের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে মাছ শিকারের অনুমতি মিলছে।

তিনি জানান, গঙ্গামতি জেলেরা দশ হাজার ও ঝাউবাগান জেলেরা পাঁচ হাজার হারে দিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময়েও মাছ শিকারে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, বিষয়টি নৌ-পুলিশের জানা থাকলেও সাগরের প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে তারা।

প্রজনন মৌসুমে মা মাছ রক্ষায় গত ২১ মে থেকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা (অবরোধ) দিয়েছে সরকার। সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সাগরে মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেদের জন্য ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবুও এক শ্রেণির জেলে বাড়তি আয়ের লোভে ডিমওয়ালা মাছ শিকারে সমুদ্র নেমেছেন।

সামুদ্রিক মৎস্য আইন অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করলে অনধিক দুই বছর কারদণ্ড বা অনধিক দশ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

পটুয়াখালীর বঙ্গোপসাগরে উপকূলের রামনাবাদ চ্যানেল থেকে আন্ধারমানিক নদীর মোহনা ঘুরে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্রলার ও ফাইভার-বোট ব্যবহার করে সমুদ্রে মাছ শিকারে ব্যস্ত স্থানীয় শতাধিক জেলে।

এদিকে কুয়াকাটা, আলিপুর ও মহিপুরে দেখা গেছে, সমুদ্র থেকে আসা মাছ বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় মৎস্য আড়তে। কর্মব্যস্ত সংশ্লিষ্ট পরিবহন শ্রমিক এবং বরফকলগুলোও।

ইয়াসিন নামের অপর এক জেলে আক্ষেপ প্রকাশ করে বেলেন, ‘আমরা টাহা দিতে পারিনাই, তাই মাছ ধরতে পারছি না। সরকার কি তাইলে টাকাওয়ালা গো লইগা মাছ ধরার ব্যবস্থা রাখছে!’

তার মতো স্থানীয় অনেকে জেলেই এই অভিযোগ জানিয়েছেন।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক ট্রলার মালিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মোর অধীনে ৮-৯টি বোট সাগরে মাছ ধরছে। গঙ্গামতি থেকে মাছ ধরা ১৮টা ট্রলার, ৩০টি নৌকা এবং ৮-৯টি ফাইভার বোট সাগরে মাছ ধরতে গেছে।’

কুয়াকাটা আশার আলো মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে দেখা যায় শতাধিক নৌকা মাছ শিকার করছে অবাধে, প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’

তবে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় সাগরে অভিযান করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটা নৌ-পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদ হাসান।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে আবহাওয়া খারাপ, একটি সরকারি স্পিডবোট, সেটিও অকেজো রয়েছে। যার ফলে ঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না।’

আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কিছু জেলেকে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে, জেলেদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই নৌ-পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ে সামাজিক রীতিতে প্রশাসনিক দায়ভার একটি প্রবহমান সমালোচনা হয়ে দাড়িয়েছে, এরকম একটি মহল বলে থাকে। তবে এর সত্যতা নেই।’

এদিকে কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানিয়েছেন অবৈধভাবে মাছ শিকারকারী জেলেদের ধরতে কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ এবং মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযান চলছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ভারী নৌযান না থাকার কারণে ঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। তবে মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ চলাকালে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলে কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ এবং মৎস্য অধিদপ্তরের একটি দলের অভিযানে অব্যাহত রয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/প্রতিনিধি/কারই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :