সাফল্যের ব্যর্থ সংলাপ

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২১, ১৭:০১

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

অবশেষে একবার পরিত্রাণের ফুলকি জ্বলে উঠলো;

 

সময়ের এক বরপুত্রের আশীর্বাদের সংকেত জুটলো।

 

আমার পরম হিতৈষিরা আমার সাফল্যের ভার

 

তাদের করিতকর্মা চওড়া কাঁধে তুলে নিলেন।

 

শর্ত হিসেবে আমাকে অবশ্যপালনীয় একজোড়া হিতোপদেশ দিলেন;

 

“নিজে চুপ থাকুন; ঈর্ষাকাতরদের বচনসুধা আকন্ঠ গিলে ফেলুন;

 

আর ওড়ানো থেকে বিরত থাকুন নানা কথার রঙ-বেরঙের ফাঁপা বেলুন।

 

ওদের কথার খড়বিচুলির জাবর পর্যন্ত কাটাতে মানা,

 

নইলে ওরা আবার বাড়া ভাতে ছাই ছিঁটাতে

 

করতে পারে সদলবলে হানা।

 

দ্বিতিয়ত: শান্ত থাকুন; শান্ত থাকলে ভ্রান্তিবিলাশী হবার ঝুঁকি এঁড়ানো যায়,

 

আর সেটাই হলো নিজেকে নিরাপদ রাখবার

 

মোক্ষম উপায়।”

 

আমি বললাম, বড়ো ভাইয়া! চুপ থাকা কিছুটা সহজ,

 

তবে শান্ত থাকা বড়োই কঠিন;

 

শান্ত থাকতে হলে মনে শান্তি থাকা নিতান্ত সমীচীন।

 

বড়ো ভাইজানেরা আমার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন,

 

“ তাহলে আপনি তো দেখি ‘যাহা লাউ তাহাই কদু’—

 

ঐ প্রবচনের পিছুই ছুটলেন!

 

সমীচীনের সঙ্গে যুক্তির যোগসূত্র থাকে,যার মূল্য একটা মরা ইঁদুরের চেয়ে বেশি নয়,

 

কথা ও কাজের হেতু খুঁজে সুবিধার সেতু পার হতে চাওয়া শক্তির নিতান্ত অপচয়।

 

যুক্তির জোর না খাটিয়ে ওরা খাটায় জোরের যুক্তি,

 

আর আপনার সর্বনাশের একমাত্র কারণই হলো

 

যুক্তির প্রতি আপনার অতি মাত্রার আসক্তি।”

 

আমি মুখ কাঁচুমাচু করে বললাম,কী আর করবো

 

বড়ো ভাইজান! এ যে আমার আজন্ম মুদ্রাদোষ,

 

গুরুভাইজান বিরক্তির বন্যার জলে তর্জনের

 

ঢেউ তুলবার মতো গরগর করে বললেন,

 

“এ কারণেই অঙ্কুরে বিনষ্ট হলো আপনার সম্ভাবনার সবগুলো বীজকোষ।”

 

আমি খানিকটা বেপরোয়া ভঙ্গিতেই বললাম,

 

আমিতো মনের মনিব নই; আমি মনের অসহায় গোলাম;

 

মন বশে থাকেনা বলেই তো এতো গোলমাল,

 

অশান্ত মনের ইন্ধন উস্কানিতে কথা বলেইতো

 

গোলার ধান,গোয়ালের গরু,পুকুরের মাছ সব হারালাম।

 

মনে শান্তি থাকলেই কেবল শান্ত থাকা যায়,

 

নইলে মনের কথা অগ্নিগিরি মতো কেবল তার নর্বনাশা বিস্ফারণই ঘটায়।

 

বড়ো ভাই এবার ধারণ করলেন আরো অগ্নিমূর্তি,

 

মেজাজ তিরিক্ষি;

 

আঁচ করলাম, পায়ে ঠেলেছি আমার হাতের লক্ষ্মী।

 

তিনি বিড়বিড় করে বললেন,”বোঁচা পণ্ডিতদের

 

এই এক পিত্ত জ্বালানো অসহ্য মহারোগ,

 

কথা কওয়া ছাড়বে না; ভুগুক যতোই যন্ত্রণা দুর্যোগ

 

কিংবা সীমাহীন দুর্ভোগ।

 

তারপরের ইতিহাস বড়োই করুণ,

 

চোখের সামনেই দেখলাম আমার স্বপ্নের মর্মান্তিক খুন।

 

বড়ো ভাই বিদ্যুৎ বেগে ঢুকে গেলেন তার স্বর্ণকুটিরে,

 

আমিও মূহুর্তে ডুবে গেলাম হতাশার গহন গভীরে;

 

হারিয়ে গেলাম ভাগ্যাহত আমজনতার ইতিহাসের ভিড়ে;

 

কালের গহ্বরের নিকশ তিমিরে