পরিকল্পিতভাবেই খুন করেন পুলিশ কর্মকর্তা সৌমেন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ জুন ২০২১, ২১:২১
এএসআই সৌমেন রায়

কুষ্টিয়ায় গুলি করে তিনজনকে হত্যার ঘটনা হঠাৎ করে নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় এই ঘটনা ঘটান পুলিশ কর্মকর্তা সৌমেন রায়। সোমবার আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে একথা বলেছেন তিনি।

স্ত্রী আসমা খাতুনের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়। বারবার নিষেধ করার পরেও সংশোধন না হওয়ায় স্ত্রী ও স্ত্রীর প্রেমিককে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। রবিবার সকালে প্রেমিকের সঙ্গে হাতেনাতে ধরে ফেলার পর নিজের সার্ভিস রিভলবার দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন স্ত্রী আসমা খাতুন, আসমা খাতুনের দ্বিতীয় পক্ষের শিশুসন্তান রবিন এবং শাকিল খানকে।

রবিবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে কড়া পুলিশ পাহারায় কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের ডিবি কার্যালয় থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে এএসআই সৌমেনকে কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়া হয়। এসময় সৌমেনের মাথায় হেলমেট ও হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। পরবর্তীতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনামুল হক ১৬৪ ধারায় তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি রেকর্ডের পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বিকাল সাড়ে ৪টার সময় আবারো কড়া পুলিশ পাহারায় মাইক্রোবাসে করে সৌমেনকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতে জবানবন্দি দেয়া শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নিশি কান্তা সাহা জবানবন্দির বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তারা দ্রুত আসামিকে নিয়ে আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।

পরবর্তীতে গণমাধ্যমকর্মীরা কোর্ট ইন্সপেক্টর আল ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও বলেন, সংশ্লিষ্ট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

সাংবাদিকরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর সংশ্লিষ্ট কোর্টের পেশকার এম এ আলিম সাংবাদিকদের জানান, জবানবন্দির বিষয়ে তারা কেউ কোনো কথা বলবেন না। জবানবন্দির বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য প্রদান না করায় শেষ পর্যন্ত বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীরা আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।

তবে আদালতের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জবানবন্দির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। সূত্রমতে, আদালতকে সৌমেন জানান, চার-পাঁচ বছর আগে আসমার মা হাসিনা বেগমের সঙ্গে কুমারখালী থানায় থাকাকালীন একটি মামলা সংক্রান্ত ঘটনায় সৌমেনের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে হাসিনা বেগমের মাধ্যমে তার মেয়ে আসমার সঙ্গে পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে পরিবারের কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে গোপনে আসমাকে বিয়ে করেন।

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু শাকিলই তাদের সংসারে অশান্তি ডেকে আনেন। স্ত্রী আসমার সঙ্গে শাকিলের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের ঘটনায় তিনি তার স্ত্রীর ওপর চরম ক্ষিপ্ত ছিলেন। বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও স্ত্রী আসমা খাতুন সংশোধন হননি। শাকিলের সঙ্গে পরকীয়া চালিয়ে যেতে থাকেন।

পরবর্তীতে কুষ্টিয়ার হালসা ক্যাম্প থেকে সৌমেনকে খুলনার ফুলতলা থানায় বদলি করা হলে শাকিলের সঙ্গে আসমার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে। এ নিয়ে আসমার সঙ্গে তার একাধিকবার ঝগড়া-বিবাদও হয়।

এএসআই সৌমেন আদালতকে জানান, তিনি আসমার মোবাইলের কল রেকর্ডও সংগ্রহ করেন। তিনি স্ত্রী আসমাকে পরকীয়া প্রেমের জাল থেকে বের করতে না পেরে তার প্রেমিক শাকিল খানকে একাধিকবার হুমকি দেন। এমনকি শাকিলের বাড়িতে গিয়েও এ ব্যাপারে শাসিয়ে আসেন। কোনো কিছুতেই আসমাকে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক থেকে পথে আনতে না পেরে তিনি শেষ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের সিদ্ধান্ত নেন।

সূত্র জানায়, সৌমেন আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আলাদাভাবে রিমান্ডের আবেদন করেননি।

এদিকে সোমবার বাদ জোহর নিহত আসমা খাতুন, তার নিহত শিশুপুত্র রবিন এবং আসমার প্রেমিক শাকিল খানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় রবিবার রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় এএসআই সৌমেন রায়কে আসামি করে নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম একটি হত্যা মামলা করেছেন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও তাপস কুমার সরকার জানান, রবিবার নিহত তিনজনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার রাত ১২টার পর নিজ নিজ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতে নিহত শাকিলের লাশ তার বাবা মেজবার রহমানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অন্যদিকে নিহত আসমা খাতুন এবং তার ছয় বছর বয়সী শিশুপুত্র রবিনের লাশ আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগমের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :