রোয়াজারহাট নদী তীরের ২৭ স্থাপনা উচ্ছেদে নোটিশ

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ জুন ২০২১, ১৬:৩০ | প্রকাশিত : ১৬ জুন ২০২১, ১৬:১৯

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট বাজার সংলগ্ন ইছামতী ব্রিজ কাম রেগুলেটর ও ফ্লাড বাইপাস এলাকায় অবৈধ দখলদার কর্তৃক নির্মিত ২৭ স্থাপনা উচ্ছেদে নোটিশ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। মঙ্গলবার রাতে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে এ নোটিশ দেয়া হয়।

নোটিশ দেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে নিজ দায়িত্বে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে নিতে বলা হয়েছে। দখলদাররা নিজ দায়িত্বে অপসারণ না করলে উচ্ছেদসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙ্গামাটি পাউবো বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম।

রোয়াজারহাটের দখলদারের মধ্যে নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন- ইব্রাহীম সওদাগরের গুদাম ঘর, পারভেজের শুটকি দোকান, নুরুল ইসলাম বাঘার মুরগী দোকান, ডা. বি কে বড়ুয়ার ওষুধের দোকান, এনামের কাঁচামাল দোকান, মনছুরের কাঁচামালের দোকান, নাজিমের কাচাঁমাল দোকান, সাহেদের কাঁচামাল দোকাম, ওয়াসিমের কাঁচামাল দোকান, আজিজের কাঁচামাল দোকান, মিল্লাতের কাঁচামাল দোকান, শুক্কুরের কাঁচামাল দোকান, সঞ্জয়ের কাচাঁমাল দোকান, আনু ফকিরের চা দোকান, সেকান্দরের বাঁশ বিক্রির দোকান, মনছুরের মোবাইল ও ষ্টেশনারী দোকান, মো. জামালের মিষ্টি দোকান, মো. সাদ্দামের চা দোকান, মুন্নী ঝালের বিতান, জামালের পান দোকান, সেলিমের মুরগী দোকান, আহমদ সৈয়দের মুরগী দোকান, সেলুকের মুদি দোকান, শুক্কুর সওদাগরের মুদি দোকান, জমিরের মুরগী দোকান, নূর মোহাম্মদের তরকারি দোকান ও বদির মুদি দোকান।

এর বাইরেও রোয়াজারহাট এলাকায় ইছামতী নদীয় জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে আরও বিভিন্ন বিপনী বিতান, ভাড়া বাসা, বসতঘরসহ আরও নানা অবৈধ স্থাপনা।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ স্থাপনা এবং দখলদারদের কারণে রাঙ্গামাটির কাউখালি থেকে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী ইছামতী নদী মরে যাচ্ছে। ইছামতি নদীর ভাটিতে রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট ও রাণীরহাট বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তীরের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ স্থাপনা।

বিভিন্ন বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলার পাশাপাশি দখল দূষণের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে ইছামতি নদী। এতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলীর শাখা নদী ইছামতী। কমে গেছে পানি প্রবাহের গতি। ফলে জোয়ারভাটা বাধাগ্রস্ত হয়ে আশপাশের কৃষি ক্ষেতেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় দেড় যুগ ধরে দখল প্রক্রিয়া চলে এখন পর্যন্ত ইছামতীর রাঙ্গুনিয়া অংশে প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশজুড়ে রয়েছে কয়েক শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এভাবে দিনের পর দিন দখল প্রক্রিয়া চললেও একেবারে নিরব ভূমিকায় ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এবার নড়েচড়ে বসেছে সরকারি এ সংস্থাটি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙ্গামাটি পাউবো বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, রোয়াজারহাটে ইছামতী ব্রিজ কাম রেগুলেটর ও ফ্লাড বাইপাস এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে সেচ ও বন্যার পানি নিষ্কাশনের কাজ ব্যহত হওয়াসহ উক্ত স্থানে নির্মিত পাউবোর অবকাঠামোগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এই অবকাঠামোর স্বাভাবিক পরিচালনা ব্যহত হওয়ায় পাউবোর কর্ণফুলী সেচ প্রকল্পে (ইছামতী ইউনিট) নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে পাউবো তথা রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে সম্প্রতি নদী দখলদার এবং পাউবোর জায়গা দখলকারীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যে মঙ্গলবার ২৭ দখলদারকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেয়া হয়েছে। যারা এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেবে না তাদের উচ্ছেদ করা হবে। অবৈধ দখলদারদের তালিকা সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত রবিবার রাঙ্গুনিয়ায় ইছামতী নদীর মূল পাড় থেকে শতফুট অদূরে জেগে উঠা চরে ব্লক স্থাপন কার্যক্রম চালাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে নদীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এতে ভোগান্তিতে পড়বে এলাকার হাজার হাজার মানুষ। পাশাপাশি কৃষি জমি, স্থাপিত ব্লকও পানির স্রোতে তলিয়ে যাবে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অকেজো হয়ে পড়বে ইছামতীর রোয়াজারহাট অংশে নির্মিত দ্বিতীয় ব্রিজ।

এভাবে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করে অপরিকল্পিত ব্লক স্থাপন, ইছামতী নদী সুরক্ষা, অবৈধ দখল রোধ ও বর্জ্য ফেলা বন্ধের দাবিতে রাঙ্গুনিয়ায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রবিবার সকালে ইছামতী নদীর রোয়াজারহাটে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা ও সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে চতুর্থ দিনের মতো এই বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন পৌরসভার কাউন্সিলর তারেকুল ইসলাম চৌধুরী। বক্তব্য দেন রোয়াজারহাট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি বদিউল খায়ের লিটন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক হালিম আব্দুল্লাহ, রাঙ্গুনিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি শহীদুল ইসলাম চৌধুরী সোহেল, যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন, জাকের হোসাইন, হাজী জফুর আলম, কাদের খান, ওসমান খান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, অর্ধ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা রক্ষা করে নদীর শতফুট মাঝখানে গিয়ে এসব ব্লক স্থাপনের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। এতে নদীর অবাধ পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। রোয়াজারহাটের দ্বিতীয় ব্রিজের নিচে ইতিপূর্বে স্থাপিত ব্লকের সঙ্গে মিলিয়ে যদি ব্লক বসানো হয় তবে নদীর পানি প্রবাহ অক্ষুণ্ন থাকবে এবং প্লাবন ও নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে এলাকাবাসী।

এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাপ্তাই পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, নদীর মূল প্রবাহ অক্ষুণ্ন রেখেই ব্লক স্থাপন করা হচ্ছে। যদি চর ড্রেজিং করে ব্লক স্থাপন করা হয় তবে রোয়াজারহাটের দুই ব্রিজের মাঝপথে যে আইল্যান্ড রয়েছে, তা পানির স্রোতে তলিয়ে যাবে এবং এই দুই ব্রিজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চলমান ডিজাইনে ব্লক স্থাপন করা হলে নদীর পানি প্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। অন্যদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তালিকা তৈরি করে তাদের নোটিশ দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুন/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :