একজন সাংবাদিকের প্রতিদিন...

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২১, ১৮:০২

অমৃত মলঙ্গী

প্রতিদিন কত ঝামেলা আপনাকে মোকাবিলা করতে হয়? আমারটা শুনে তারপর উত্তর দিন। এক আত্মীয়র সংসারে অশান্তি। সকাল থেকে সেখানে ফোন দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা। দুপুরে বড়বোন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। আত্মীয় স্বজনের চিকিৎসা আমি করাই বলে তাদের শারীরিক বিষয়গুলো সব সময় মাথায় রাখতে হয়। গ্রামের চিকিৎসককে ফোন দিয়ে সেসব অবহিত করেছি কয়েক ঘণ্টা পর পর।

বিকেলের আগে বরিশালের নাজিরপুর থেকে একটা ফোন। তার স্বামী যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে গর্ভের বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে। মেয়েটি থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন। অভিযুক্ত ছেলেটি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, তাই মামলা নিতে সাহস করেননি ওসি। মেয়েটি কোর্টে মামলা করেন। সেখান থেকে মহিলা অধিদপ্তরে তদন্তের জন্য নির্দেশ আসে। স্থানীয় কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিচ্ছেনই না। জমা দিতে ১ লাখ টাকা দাবি করছেন! মেয়েটি সন্তান হত্যার বিচার চান। তাই আমার সাহায্য প্রত্যাশী। তাকে সাহস দিলাম। ওই থানায় কথা বললাম।

ঘণ্টা দুয়েক পর মুন্সিগঞ্জ থেকে আরেকটা ফোন। একটা পেজ থেকে এরা আমার নম্বর পেয়েছেন। মুন্সিগঞ্জ থেকে ফোন করেছেন মধ্যবয়সী এক পুরুষ। গুলিস্তানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনি। সাহায্য চান। তাকে আশ্বস্ত করলাম।

এসব করতে করতে অফিস সামলাতে হয়। বসের কাছে আমাকেও জবাবদিহির আওতায় পড়তে হয়। সব চুকিয়ে বিকেল চারটায় বাসার দিকে রওনা। মাথায় তখন এসব ঝামেলা ঘুরপাক খাচ্ছে। আত্মীয়র সংসার, বড়বোনের অসুস্থতা, নাজিরপুরের মেয়েটি, মুন্সিগঞ্জের অসুস্থ লোকটি...

নতুন বাইক। তাই গাড়িতে ওঠার আগে প্রাণপণ চেষ্টা করেছি এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে। এই কদিনের পথ চলায় বুঝেছি, বাইকারদের এই শহরে প্রতি সেকেন্ডে কতটা ফোকাস রাখতে হয়। নিজেকে বুঝিয়েছি, এর নামই জীবন।

মোহাম্মদপুর টাউন হলের কাছে আসতেই মনে পড়লো বিহারি ক্যাম্পের মাহাবুব নামের ছেলেটির কথা। ওর মাকে বাবা ডিভোর্স দিয়েছে। বাবর রোডে ভাঙা একটি ঘরে থাকে ওরা। গত সপ্তাহে ওর মাকে বলেছি, ঘর ঠিক করতে ২০ হাজার টাকা জোগাড় করে দেব। এখনো সেটি দেয়া হয়নি।

করোনার সময়ে এমন অসংখ্য মানুষ, মধ্যবিত্ত আত্মীয়দের পাশে দাঁড়াতে হয়েছে আমাকে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমার হয়ে যারা নীরবে কাজ করেছেন তাদের একজন বিভাস দাশ। কখনো আমি চাইনি মানুষকে ফলাও করে এসব বলতে। শুধু চেয়েছি মানুষগুলো ভালো থাকুক। এতদিন পর মনে হলো একটু খুলি মনের আগল।

আশপাশের সবাইকে ভালো রাখতে গিয়ে আজকাল ভুলেই যাই আমারও ব্যক্তিগত একটা জীবন আছে। আছে নিজস্ব কিছু গল্প। বলি না। বলা হয় না।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

ঢাকাটাইমস/১৬জুন/এসকেএস