ক্লাব-মদ-জুয়া নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ জুন ২০২১, ১৫:০২ | প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০২১, ১৪:৪০
ফাইল ছবি

ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে মদ, জুয়াসহ বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে জাতীয় সংসদে হঠাৎ করে কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। অনির্ধারিত এই আলোচনায় বিরোধীদল ও সরকার দলীয় পাঁচজন সংসদ সদস্য অংশ নেন। সবাই এমন কর্মকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকে এসব বন্ধের দাবিও জানিয়েছেন।

ঢাকা বোট ক্লাবে অভিনেত্রী পরীমনির ঘটনার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টি প্রথমে সামনে আনেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। পরে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্য দলের পাঁচজন সংসদ সদস্য বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় মদের অনুমোদন নিয়ে পরস্পরের ওপর দোষারোপ করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। এতে কিছু সময়ের জন্য সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

মুজিবুল হক চুন্নু ছাড়াও অনির্ধারিত এই আলোচনায় আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএনপির হারুনুর রশীদ, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা কথা বলেন। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনার শুরুতেই জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কয়েক দিন ধরে একজন চিত্রনায়িকার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরা বোট ক্লাব। কে করল এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা হন? শুনেছি ৫০-৬০ লাখ টাকা দিয়ে এর সদস্য হতে হয়। এত টাকা দিয়ে কারা এর সদস্য হন? আমরা তো ভাবতেই পারি না। সারাজীবন এত ইনকামও করি না।

ঢাকার কয়েকটি ক্লাবের নাম উল্লেখ করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, এসব ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। সেখানে গ্যালন গ্যালন মদ বিক্রি হয়। লাইসেন্স নিয়ে খেতে হলে এত মদ তো বিক্রি হওয়ার কথা নয়। সরকারি কর্মকর্তারা এখানে কীভাবে সদস্য হন? এত টাকা কোথা থেকে আসে?

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য বলেন, গুলশান-বারিধারা এলাকায় ডিজে পার্টি হয়। সেখানে ড্যান্স হয়। মদ খাওয়া হয়। এসব আমাদের আইনে নেই, সংস্কৃতিতে নেই, ধর্মে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন- কেন এসব হচ্ছে? কেন বন্ধ করা হবে না? ওইসব ক্লাবের সদস্য কারা হন? পরীমনির যে ঘটনা সেটা বোট ক্লাবে। ওই জায়গার একজন মালিক আছেন। তিনি যেতেও পারেন না। এসব দেখতে হবে।

চুন্নুর বক্তব্যের পর শেখ সেলিম ফ্লোর নিয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এত বোট ক্লাব। জিয়াউর রহমান স্টিমার ক্লাব করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান আবার চালু করেছিলেন। যারা অপরাধের শুরু করেছেন তাদের আগে বিচার করা উচিত। ওখান থেকে ধরতে হবে।

শেখ সেলিমের বক্তব্যের পর বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, আমাদের বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য একটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সিনিয়র এক সদস্য (শেখ সেলিম) কোথায় চলে গেলেন? বাংলাদেশে অনেক বিদেশি থাকেন। এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য, ডোমদের জন্য মদের বৈধতা আছে। কোন মুসলমানের জন্য আইনে অনুমতি নেই। জিয়াউর রহমান যদি মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন, যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি সদস্য পদ ছেড়ে দেব।

বিএনপির এই সাংসদ বলেন, এসব ক্লাবে মদের ব্যবসার সঙ্গে সরকারি লোক জড়িত। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। পুলিশ এসব জায়গা থেকে টাকা নেয়। প্রধানমন্ত্রী কোনো দলের নয়, উনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। এসব খুঁজে দেখা হোক।

হারুনুর রশিদের বক্তব্যের পর শেখ ফজলুল করিম সেলিম আবারও ফ্লোর নিয়ে বলেন, উনি (জিয়াউর রহমান) ৪০ বছর আগে থেকে এইটা শুরু করছেন। সেই রাখি খানের ড্যান্সের কথা কি মানুষ ভুলে গেছে? সেই ‘হিজবুল বাহার’ জাহাজে গিয়ে জিয়াউর রহমান এই ডান্স উপভোগ করেছেন। আর এই দেশের ইয়াং জেনারেশন নষ্ট করার পথ দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু এই পথ বন্ধ করেছিলেন। সুতরাং সত্যকে সত্য স্বীকার করুন। এর জন্য বিএনপি দায়ী, জিয়াউর রহমান দায়ী। অন্য কেউ দায়ী নয়। আমাদের সরকার এ ধরনের অপকর্মের পারমিশন দেয় না, দেবেও না। বন্ধ করতে গেলে আপনারাই আবার চিৎকার করেন- না, না বার বন্ধ করা যাবে না। বিদেশিদের কথা বলে এখানে গিয়ে অপকর্ম করবেন, এইটা বাংলাদেশে হওয়া উচিত নয়।

পরে তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, হারুন সাহেবের সদস্য পদ আজই ছেড়ে দেওয়া উচিত। উনি বললেন, জিয়াউর রহমান মুসলমানদের মদ খাওয়ার পারমিশন দেননি। উনি দেখাক, আইনে কোথায় বলা আছে, মুসলমানরা মদ খেতে পারবেন না। আইন এখানে এনে দেখাক। পদ ছেড়ে দিক।

পরে জাতীয় পার্টির সদস্য বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান বলেন, এখানে রাষ্ট্রীয় কিছু বিষয় আছে। বঙ্গবন্ধু লাইসেন্স দেননি। ২১ বছরে আইনকে মিসইউজ করে এটা করা হয়েছে। বিদেশিদের অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য এটা করেছে। ক্লাবগুলোতে একজন ডাক্তার দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে নেয়, দৈনিক মদ খেতে হবে। তারপর লাইসেন্স নেয়া হয়। বিএনপি এই লাইসেন্স দিয়েছিল। এখন কোনো মুসলমান যদি মদ খায় সেখানে সরকারের কিছু করার নেই। বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে খুঁজে বের করার দাবি জানান।

ঢাকাটাইমস/১৭জুন/আরকে/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

দুই অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের আশঙ্কা, নদীবন্দরে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি

উপজেলা নির্বাচনে ইসির প্রস্তুতি সম্পন্ন

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব

ঢাকায় চার দিনব্যাপী ন্যাপ এক্সপো উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

বেড়েছে রেললাইনের তাপমাত্রা, দিনের প্রথম ৬ ঘণ্টা গতি কমানোর নির্দেশ

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত: প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

তীব্র এই গরম থেকে বাঁচতে যে পরামর্শ দিলেন ঢাকার সিভিল সার্জন

আরব আমিরাতে ভারী বৃষ্টিপাত-বন্যা, ঢাকাগামী ৯ ফ্লাইট বাতিল

আট বিভাগে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যেই শিলাবৃষ্টির আভাস

নিউমার্কেট এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন প্রকল্প

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :