পরীমনি-কাণ্ডের অমি একজন বিতর্কিত ব্যবসায়ী, তাদের জানাশোনা আগে থেকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ জুন ২০২১, ২২:৪৫ | প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০২১, ১৯:৩৬

ক্লাবপাড়ার পরিচিত মুখ তুহিন সিদ্দিকী অমির সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ও জানাশোনা ছিল চিত্রনায়িকা পরীমনির। অমির দুবাই ও মালয়েশিয়ায় বাড়িতে (সেকেন্ড হোম) গিয়েছেন পরীমনি এবং তারা দুজন একসঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাদের এসব তথ্য জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এখন প্রশ্ন আসছে- কে এই অমি? চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গেই বা তার সম্পর্ক কী?

ঢাকার অদূরে বিরুলিয়ায় বোট ক্লাবে গত ৮ জুন মধ্যরাতে পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গত সোমবার গ্রেপ্তার হন অমি। সাভার থানায় করা পরীমনির মামলার দুই নম্বর আসামি অমি নাকি তাকে ফাঁদে ফেলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। ঘটনার পর থেকেই অমিকে নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

ঢাকা জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, পরীমনির সঙ্গে আগে থেকেই অমির পরিচয়, এমনকি ঘনিষ্ঠতা। রাজধানীতে তারা একসঙ্গে বিভিন্ন সময় ঘুরে বেড়িয়েছেন।

পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমির মাধ্যমে অমির সঙ্গে তার (পরীমনি) পরিচয় হয়। অমির দুবাইয়ের বাড়িতে পরীমনি গিয়েছেন বলেও শোনা গেছে। তবে সাভার থানার পুলিশ অমিকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ পায়নি। কারণ ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমি গ্রেপ্তারের পর মাদক আইনে হওয়া অন্য একটি মামলায় তারা সাত দিনের রিমান্ডে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছেন।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বোট ক্লাবের ঘটনার দিন কী নিয়ে অমি ও পরীর বিরোধ হয়েছিল, সেটা জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বোঝা যাবে। প্রয়োজনে পরীমনিকে থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’

অমির সঙ্গে পরীমনির সম্পর্ক কী- জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনো কিছু পাইনি। এসব বিষয়ে অমিকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। পরে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।’

অমির বিভিন্ন দেশে বাড়ি রয়েছে বলে গুঞ্জন আছে। কোন কোন দেশে বাড়ি রয়েছে পুলিশ জানতে পেরেছে কি না জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব বিষয়ে অমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম, তবে সে কিছু জানায়নি।’

নায়িকা পরীমনির একজন আস্থাভাজন নাম প্রকাশ না শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পরীর কস্টিউম ডিজাইনার জিমির মাধ্যমে তাদের মধ্যে সম্পর্ক। প্রায়ই অমি তার (পরীমনি) বাসায় আসত। ঘটনার দিন অমিই পরীকে ওই ক্লাবে যেতে বলে। সে (অমি) নিজেই বনানীর একটি হোটেল থেকে খাবার কিনে ক্লাবে যায়।’

কে এই অমি?

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অমির গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। সেখানে অনেক সম্পদ গড়েছেন তিনি। অবৈধভাবে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হওয়ায় বনে গেছেন প্রভাবশালী। এসএসসির গণ্ডি পেরোতে না পারা অমির রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে আনাগোনা ছিল নৈমিত্তিক। বাবা তোফাজ্জল হোসেন একসময় বিদেশে ছোটখাটো চাকরি করতেন। এরপর দেশে ফিরে রাজধানীর আশকোনায় ‘সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন।

ওই ট্রেনিং সেন্টারের আড়ালে অমি নারী পাচার চক্রে জড়িয়ে পড়েন বলে অনেকে জানিয়েছে। শত শত কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে ও প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার মালিকও হন তিনি। রাজধানীতে তাদের (অমি ও তার পরিবারের) একাধিক সুরম্য বাড়ি ছাড়াও উত্তরা ও আশকোনায় একাধিক বাড়ি ও প্লট রয়েছে। এসব এলাকায় তাকে একনামে চেনে সবাই।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক একজন মহাসচিবের সঙ্গে অমির দারুণ সখ্যের কথাও জানা যায়। এই সখ্যের সুবাদে অমি তার জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান আইএসএমটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় একচেটিয়া কর্মী পাঠানোর সুযোগ পান। একই সঙ্গে তিনি মালয়েশিয়াভিত্তিক মানব পাচারকারী চক্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ আছে। মালয়েশিয়ার একজন অতি বিতর্কিত জনশক্তি ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে অমি হয়ে ওঠেন এই চক্রের ঘনিষ্ঠজন।

অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে সেকেন্ড হোমও গড়েছেন অমি। দক্ষিণখানে একটি রিসোর্টের আড়ালে প্রায় প্রতিদিন মদ-জুয়ার আসর বসাতেন। বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসার অভিযোগও আছে। অমি একসময় ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেনও বিএনপির রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা ভোল পাল্টে ফেলেন।

গত সোমবার নায়িকা পরীমনির মামলায় নাসির উদ্দিন ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। উত্তরার একটি ফ্ল্যাট থেকে মাদকসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মাদক মামলায় তাদের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/এসএস/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :