১২ কিলোমিটার মহাসড়কে পদে পদে ‘মরণ ফাঁদ’

ইফতেখার রায়হান, গাজীপুর
 | প্রকাশিত : ১৮ জুন ২০২১, ২২:২৪

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশজুড়ে দেশে প্রথমবারের মতো বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ চলছে। ২০১২ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা। বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করে মহাসড়কটিতে অপরিকল্পিতভাবে খোঁড়াখুড়ির কারণে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে মহাসড়কের এই ১২ কিলোমিটার অংশজুড়ে বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে সৃষ্টি হয়েছে ‘মরণ ফাঁদ’। এ অবস্থায় মহাসড়কটিতে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এতে বেশ কয়েকটি হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

চলতি বছরের ৩০ মার্চ মোটরসাইকেল যোগে টঙ্গীর দত্তপাড়া থেকে টঙ্গী বাজার যাওয়ার পথে মিলগেট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন নৌবাহিনীতে কর্মরত শফিকুর রহমান ও তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার। তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলটি মিলগেইট নিটল টাটা কারখানার সামনে পৌঁছালে মহাসড়কের একটি গর্তে পড়ে যায়। এসময় মোটরাসাইকেল থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে যান স্বামী-স্ত্রী উভয়ে। দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক শফিকুর রহমান প্রাণে বেঁচে গেলেও পেছন থেকে আসা ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় স্ত্রী জেসমিন আক্তারের।

গত ৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে টঙ্গী আসার পথে টঙ্গী বাজার সেনা কল্যাণ ভবনের সামনে বিআরটির নির্মাণকাজের জন্য তৈরি করা গভীর গর্তে মোটরসাইকেলসহ পড়ে যান তিন বন্ধু মুন্না, তমাল ও সেলিম। সেদিন অল্পের জন্য তারা বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজনই। স্থানীয়দের সহযোগিতায় টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশের টহল টিম আহতদের উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। বিআরটির নির্মাণকাজের জন্য তৈরি গর্তের চারপাশে প্রতিবন্ধক বা ব্যারিকেড না থাকায় মোটরসাইকেল আরোহীরা দুর্ঘটনায় পতিত হন বলে জানান স্থানীয়রা।

১০ এপ্রিল বিকালে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় গর্তে পড়ে উল্টে যায় একটি পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান। কাভার্ডভ্যানটি উল্টে গিয়ে একটি প্রাইভেট কারের পেছনের অংশ ও ভিআইপি পরিবহনের একটি বাসের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনায় কাভার্ডভ্যান চালক ও বাস চালকসহ তিনজন আহত হন।

খানাখন্দ ও গর্তের কারণে প্রতিনিয়ত এমন দুর্ঘটনা ঘটছে মহাসড়কটিতে। বিকল হচ্ছে গাড়ি। এর ফলে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রতিদিনই অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

সরেজমিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের পাশাপাশি বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত ব্যস্ততম এই মহাসড়ক দিয়ে আসা-যাওয়া করছে কয়েক লাখ যানবাহন। সড়কটিতে চলাচলের সময় দুর্ঘটনার চিন্তা মাথায় নিয়ে চলতে হয়। দিনের বেলায় ঝুঁকি কিছুটা কম হলেও রাতে সড়কটি মরণকূপে পরিণত হয়। আর নতুন চালকদের জন্য সড়কটি সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ।

টঙ্গী চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ড থেকে টঙ্গী বাজার পর্যন্ত সড়কের পূর্ব পাশে একাধিক ছোটবড় গর্ত রয়েছে। এছাড়াও মিলগেইট নিটল টাটা কারখানার সামনে, কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস, কলেজ গেইট, হোসেন মার্কেট, গাজীপুরা, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি, ভোগড়া বাইপাস ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দ। এসব গর্ত সংস্কারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বিআরটি কর্মকর্তাদের কোনো পদক্ষেপই দেখা মিলেনি। মাঝে মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দুর্ভোগ এড়াতে নিজ উদ্যোগে ইট ও বালি দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করলেও সেটি একদিনের বেশি টিকছে না। শুকনো মৌসুমে গর্তগুলো দেখেশুনে গাড়ি চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলো ভরাট হয়ে যায়। ফলে সড়কে ধীরগতিতে চলাচল করে যানবহন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে। বৃষ্টি হলে এই সড়কে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকা সড়কের গর্তগুলোতে পড়ে প্রতিনিয়ত বিকল হচ্ছে যানবাহন। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও রিকশা যাত্রীরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিআরটির উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতি, যানজট ও দুর্ভোগের চিত্র প্রকাশ পায়। বুধবার (১৬ জুন) প্রকল্প কাজের অগ্রগতি দেখতে পরিদর্শনে আসেন বিআরটির অতিরিক্ত সচিব নিলিমা আক্তার। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সড়কটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন তিনি। পরে চেরাগআলী বাসস্ট্রান্ডে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিলিমা আক্তার বলেন, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত মহাসড়কের এই অংশে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, সাধারণ যান চলাচলের পৃথক লেন ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণকাজ একযোগে চলছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৫৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

নিলিমা আক্তার বলেন, সড়কের যেসব অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে সে অংশগুলো দ্রুত চলাচলের উপযোগী করা হবে। পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের জন্য দ্রুত ড্রেন নির্মাণকাজ করা শেষ করা হচ্ছে। এসব কাজ শেষ হলে সড়কে যানজট থাকবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক দক্ষিণ) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বরকতুল্লাহ খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি মহাসড়কের অনেক জায়গায় ঠিকমতো নিষ্কাষিত হচ্ছে না। এতে যানজট ও যাত্রীদের দুর্ভোগ হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। মহাসড়কের খানাখন্দগুলো সংস্কার করা হলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১৮জুন/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :