কোন পথে মুনিয়ার মৃত্যুর রহস্য?

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২১, ১৪:২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

মোসরাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুতে করা মামলার তদন্ত প্রায় গুছিয়ে এনেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপেক্ষা এখন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের। প্রতিবেদন এলেই পরিষ্কার হবে, মুনিয়া কি আত্মহত্যা করেছিলেন? নাকি হত্যা করা হয়েছিল তাকে।

মুনিয়ার বড়বোন নুসরাত জাহানের করা মামলা তদন্ত করতে গিয়ে নতুন বেশকিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সেই সূত্র ধরে আরও তথ্যানুসন্ধান এখনও চলছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মুনিয়ার জীবনাচারণ, পরিবারের সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্ক এবং তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতজনদের ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। যেখানে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও মিলেছে।

 

তদন্ত সূত্র জানায়, মুনিয়া গুলশানের যে ফ্ল্যাটে থাকতেন সেটির ভাড়া মেটানো বা অভিজাত এলাকায় তার জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের জোগান দেওয়ার মতো স্বচ্ছল নয় তার পরিবার। বাবা-মা দুজনই মারা গেছেন। বোন নুসরাতের তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন মুনিয়া। ভাই আশিকুর রহমান সবুজের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাহলে প্রতিমাসে এই টাকা সংগ্রহ করতে কলেজ পড়ুয়া মুনিয়াকে যে বিভিন্ন পথ অবলম্বন করতে হতো, তা সহজে অনুমান করা যায়। সেই উৎসগুলোই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু নিজের বাসা ভাড়া বা খরচই নয়, নুসরাতকেও নিয়মিত টাকা দিতেন মুনিয়া। এমনকি ভাই সবুজের বিরুদ্ধে উত্তরাধিকারের দাবিতে করা মামলাটি পরিচালনার ব্যয়ও মিটাতো হতো তাকে। ধারণা করা হচ্ছে, মুনিয়ার আত্মহত্যার পেছনে এটিও কারণ হতে পারে।

 

অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কলেজ পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী যখন গুলশানের মতো এলাকায় একা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকেন, তখন বুঝতে হবে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে মানসিকভাবেও অনেক আলাদা। তার ভেতরে উচ্চাভিলাষী জীবনযাত্রার আকাঙ্ক্ষা যে তা সহজেই অনুমেয়। এটি তার বয়সের যে অকালপক্কতা সেটিও বোঝা যায়। আর এই ধরনের তরুণ-তরুণীরা সুযোগ পেয়ে জীবনকে নানাভাবে উদযাপনের চেষ্টা করে। সেই সূত্রে, মুনিয়া মাদকের সংস্পর্শে ছিলেন কিনা, সেটিও তদন্তের দাবি রাখে। যদি সে মাদকাসক্ত হয়ে থাকেন তাহলে সেটিও তার আত্মহত্যার পেছনে দায়ী হতে পারে। কারণ মাদকাসক্ত তরুণরা অল্পতেই হাতাশাগ্রস্ত হয়।

 

মুনিয়ার মৃত্যুর পর পরই হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর সঙ্গে তার বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, শারুনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল মুনিয়ার। মুনিয়া যে মানসিক বিষণ্ণতা ও হতাশায় ভুগছিলেন, সেটিও তার কথোপকথনে স্পষ্ট ছিল। যদিও শারুন চৌধুরী বরাবরই বলছেন এসব স্ক্রিনশট তৈরি করা।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে. শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে নুসরাতেরও বিভিন্ন সময় কথা হয়েছে। কী নিয়ে তারা কথা বলেছেন সে বিষয়গুলোও মামলার তদন্তের স্বার্থে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া মুনিয়া যে বাসায় থাকতেন তার সিসিটিভি ফুটেজগুলোও তদন্তের স্বার্থে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। 

 

গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের এক ফ্ল্যাটে মুনিয়ার লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পায় পুলিশ। মুনিয়া ঢাকার একটি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

 

পুলিশ জানায়, মুনিয়ার বাড়ি কুমিল্লা শহরে, তার পরিবার সেখানেই থাকে। তিনি এখানে থেকে পড়াশোনা করতেন। ওই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখনো বলার মতো কোনো অবস্থা তৈরি হয়নি। কারণ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো আমাদের হাতে আসেনি।  তদন্তের স্বার্থে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না।’

 

 (ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এইচএফ)