গোয়েন্দারা বিস্মিত, অমির মোবাইলে হাজারো মেয়ের নম্বর!

প্রকাশ | ২০ জুন ২০২১, ১৪:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

তুহিন সিদ্দিকী অমির মুঠোফোনে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের নম্বরই সংরক্ষিত বেশি। নিত্য দিনের কললিস্টেও এগিয়ে আছে মেয়েরা। যা রীতিমতো বিস্মিত করেছে গোয়েন্দাদের। প্রশ্ন, কীসের ব্যবসা করতেন তুহিন সিদ্দিকী অমি? কেন এত মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার?

গোয়েন্দাদের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দৃশ্যমান ব্যবসার বাইরেও নানা ধরনের ব্যবসা ছিল অমির। এসব ব্যবসায় হাজারো রকমের মেয়েদের সংশ্লিষ্টতা ছিল। পরীমনির মতো ঢালিউডের বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় মুখের নম্বরও পাওয়া গেছে তার মুঠোফোনে। সেই তালিকায় আছে বেশ কয়েকজন উঠতি মডেলের নামও। ঢাকার অভিজাত এলাকার বিভিন্ন ক্লাবেও অমির নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ক্লাবপাড়ায় বেশ পরিচিতি রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সময় মেয়েদের নিয়ে যেতেন তিনি। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে আসছে।

দক্ষিণখাণ ও আশকোনা এলাকায় অমির ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অফিস। অফিসের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অমি যখনই সেখানে যেতেন নানা ধরনের মেয়েরা তার সঙ্গে থাকত। এসব নিয়ে প্রশ্ন করার মতো সাহস ছিল না কারো।

চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে করা মামলায় দ্বিতীয় আসামি অমি। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। অবৈধ মাদক রাখার দায়ে করা মামলারও আসামি তিনি। পরে পাসপোর্ট আইন এবং মানবপাচারের অভিযোগেও মামলা হয়ে তার বিরুদ্ধে।

জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান তুহিন সিদ্দিকী অমি। এছাড়া আয়াত ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল সার্ভিসেসের সত্ত্বাধিকারী তিনি। ইনস্টিটিউট অব সিঙ্গাপুর মেরিন টেকনোলজি লিমিটেড এবং বিএসএম ওয়েল্ডিং ট্রেনিং সেন্টার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। অমির মালিকানায় রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে- জান্নাহ অ্যাগ্রো পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিসারিজ, জান্নাহ ট্রেডিং, জান্নাহ প্রোপাটিজ, জান্নাহ মেডিকেল সার্ভিসেসে।

গোয়েন্দারা বলছেন, এসব ব্যবসার আড়ালে নারী পাচারসহ নানা অপরাধে অমির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তারা পাচ্ছেন। তা ধরেই চলছে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্ত।

বাবা ছিলেন নির্মাণ শ্রমিক

অমির বাবা তোফাজ্জল হোসেন। পেশায় তিনি একজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। অনেক বছর ধরে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরে তিনি কাজ করেছেন। পরে ঢাকার আশপাশে জমি কিনেছেন। কিন্তু নানা অবৈধ ব্যবসায় অমিরা এখন বিপুল সম্পদের মালিক। অমি ৭/৮ বছর আগে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক হন। এরপর দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি করেন। এ সুযোগে আদম পাচার করে প্রচুর অর্থ আয় করেন। এই অর্থের দাপটে অমি নানা অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকার উত্তরা ও আশকোনায় তাদের একাধিক বাড়ি ও প্লট রয়েছে। দক্ষিণখানে রয়েছে তার রঙ্গমহল। স্থানীয়রা বিষয়টিকে শুরু থেকেই ভালো নজরে দেখছিলেন না।

অমির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

মানবপাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগও রয়েছে অমির বিরুদ্ধে। গত ১৭ জুন দক্ষিণখান থানায় আব্দুল কাদের নামের এক ব্যক্তি মানবপাচারের অভিযোগে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বাদী বলেন, আশকোনা হজ ক্যাম্প এলাকার আয়াত আরাফাত ট্রাভেল ট্যুর সার্ভিস নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার পরিচিত দুইজনকে দুবাই পাঠানো হয়। কিন্তু যে চাকরি এবং বেতনের কথা বলা হয়েছিল, তার বদলে ভ্রমণ ভিসায় পাঠানোর ফলে তারা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে, ঘর হতে বের হতে পারছে না। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি আরও দুইজনকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা করেছে বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। দায়ের করা এই মামলার তদন্তভার নিয়ে সিআইডি শুক্রবার অমির একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনটি গাড়ি এবং ১৯টি হার্ড ডিস্ক জব্দ করেছে।

সম্প্রতি চিত্রনায়িকা পরীমনি ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে যে মামলা করেন, যেখানে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির নাম উল্লেখ করে মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়। পরীমনির অভিযোগ, গত ৮ জুন রাতে তাকে বোট ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিলেন অমি, সেখানে নাসির তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান।

পরীমনির মামলার পর ঢাকার উত্তরার এক নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে নাসির ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে তিনজন নারী। তারা হলেন লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯), নাজমা আমিন স্নিগ্ধা (২৪)। সেখান থেকে মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের কথাও জানায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা হয়। সেখানেও অমিওকে আসামি করা হয়েছে। পরে ১৫ জুন রাতে দক্ষিণখান থানা এলাকায় অমির একটি অফিস থেকে ১০২টি পাসপোর্ট ও ১৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এতগুলো পাসপোর্ট রাখায় অমির বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনেও দক্ষিণখান থানায় হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২০জুন/এইচএফ)