তবু যদি হয় বোধোদয়
যেই হাত তুলে করো মোনাজাত সেই হাত দিয়ে করো চুরি,
যেই চোখ দিয়ে পড়ছো কোরআন সেই চোখে দেখো পর নারী।
যে কলম দিয়ে লিখিত হয়েছে আল্লাহর বাণী পাক কালাম,
সেই কলমকে করলে যে তুমি দুরাচারদের কেনা গোলাম।
কলম দিয়ে চুরি করে করো কলমের ঘোর অসম্মান,
কলমের খোঁচায় দেবতাকে বানাও পাপাচারী শয়তান।
বিচারের নামে অবিচার করে মিছে কলমের শূলে চড়াও,
কলমের খোঁচায় ইবলিশকেও দেবতা-পদক পরাও।
‘কলম দিয়ে চুরি’ করা যদি বাদ দিয়ে হতে ‘কলম চোর’,
পাপের মাত্রা, দায়ের দণ্ড কিছুটা হলেও কমতো তোর।
যে গলায় দাও নামাজের আজান সেই স্বরে গাও নোংরা গান,
বিকৃত স্বরে বাজনার ঘোরে দুনিয়াকে ভাবো গুলিস্তান।
যেই কান দিয়ে শুনছো তুমি কোরআনের আয়াত নিত্য পাঠ,
হতভাগা সেই কানের ঘুচেনি আজো শ্রবণের কুবিভ্রাট।
কান খাড়া করে এখনো শুনছো কোথায় রয়েছে পরের দোষ,
পরনিন্দার আক্রোশে বাড়াও নিজের মনের হিংসা-রোষ।
গীবত করা ও গীবত শোনায় যদি আনন্দ হয় ভারি,
ভাইয়ের মাংস খাবার চেয়েও তুমি আরো বেশি পাপাচারী।
তোমার নবীজি ক্ষুধার জ্বালায় যে পেটে বেঁধেছে পাথর,
প্রতিবেশিদের অভূক্ত রেখে ভরছো নিজে সে জঠর।
যেই জিহ্বার সাহায্য রবের কালাম পড়ছো ভক্তিতে,
সেই জিহ্বায় পরনিন্দা করো তুমি কোন যুক্তিতে?
যেই পায়ে হেঁটে বায়তুল্লাহকে তাওয়াফ করেছো, ওহে মুমিন,
সাফা-মারওয়ায় দু’পায়ে মেখেছো পূণ্য নিদর্শনের চিন।
যেই পায়ে হেঁটে মসজিদে যাও সেই পায়ে ছোটো শুঁড়িখানায়,
গুটিগুটি পায়ে চুপিসারে যাও বাইজি বাড়ির আস্তানায়।
‘হাজরে আসওয়াদ’ চুমো খেলে যেই ঠোঁটের মমতা দিয়ে,
সেই ঠোঁটে দিলে পাপাঙ্ক এঁটে মদিরার স্বাদ নিয়ে?
কোরআনের আয়াতে যে-আঙ্গুল রেখে লক্ষ্য রাখলে স্থির,
সে আঙ্গুলে তুমি তুড়ি মেরে করো সুখ্যাতি নটিনীর।
যেই বুকে তুমি মহাভক্তিতে কোরআন জড়িয়ে ধরেছো,
পতিতাকে সেই বুকে টেনে নিয়ে পাপের বাঁধন গড়েছো।
খোদাকে সেজদা করতে যে-কপাল পুণ্য জমিনে ঠেকালে,
ভণ্ড-মাজারে সে মাথা ঠেকিয়ে মহা-কুফুরিতে জড়ালে।
পরকালে তোমার জবাবদিহিতার দায় হবে কণা কণা,
পূণ্য তোমাকে দেবে নিষ্কৃতি, পাপে নারকীয় জরিমানা।
একে একে তোমার সকল অঙ্গ পাপের সাক্ষ্য দেবে,
ভেবে দেখো তখন কার ভরসার আশ্রয় তুমি নেবে?
আল্লাহ-নবীর পথে চলো মুমিন; ছাড়ো খোঁড়া অজুহাত,
আখেরাতে তবেই পেতে পারো নাজাত, পেতে পারো জান্নাত।